বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
Sex Cams
সর্বশেষ সংবাদ
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের দোয়া ও ইফতার মাহফিল  » «   কানাডা যাত্রায়  ইমিগ্রেশন বিড়ম্বনা এড়াতে সচেতন হোন  » «   ব্রিটিশ রাজবধূ কেট মিডলটন ক্যানসারে আক্রান্ত  » «   যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজাবাসীদের সাহায্যার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের অনুদান  » «   বড়লেখায় পাহাড়ি রাস্তা সম্প্রসারণে বেরিয়ে এলো শিলাখণ্ড  » «   মাইল এন্ড পার্কে ট্রিস ফর সিটিস এর কমিউনিটি বৃক্ষরোপণ  » «   রয়েল টাইগার্স স্পোর্টস ক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন  » «   গোলাপগঞ্জ স্যোশাল এন্ড কালচারাল ট্রাস্ট ইউকে’র সাধারণ সভা ও নির্বাচন সম্পন্ন  » «   যুক্তরাজ্যবাসি  সাংবা‌দিক সাইদুল ইসলামের পিতা আব্দুল ওয়াহিদের ইন্তেকাল  » «   ইউকে বাংলা রিপোটার্স ইউনিটি‘র নতুন কার্যকরী কমিটির অভিষেক  » «   রোটারিয়ান মোহাম্মদ খতিবুর রহমান বার্লিন যাচ্ছেন  » «   টাওয়ার হ্যামলেটসের নতুন বাজেটে হাউজিং, শিক্ষা, অপরাধ দমন, তরুণ, বয়স্ক ও মহিলাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচিতে বিপুল বিনিয়োগ প্রস্তাব  » «   আজীবন সম্মাননা পেলেন সৈয়দ আফসার উদ্দিন এমবিই  » «   লন্ডন বাংলা স্কুলের আয়োজনে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত  » «   লন্ডনবাসী প্রবীণ মুরব্বী জমির উদ্দিন( টেনাই মিয়া)র ইন্তেকাল  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের স্বীকৃতি — বিতর্ক এবং প্রশ্নচিহ্ন



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এরকম ‘বেহায়া’সহ যাদের নাম এসেছে, তারা যে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রিটেনে ছিলেন না, তা কেউ অস্বীকার করছে না । কিন্তু তাঁরা আদৌ কোথায় কি করেছেন, তাদের খুব একটা হাদিস মিলছে না, হয়ত নিরবে কাজ করেছেন ? হাজার হাজার মানুষের সাথে কয়েকজন মহিলা জোরে-সোরে রাজপথ প্রকম্পিত করে সেসময় বিদেশীদের চোখ কেড়েছিলেন, কিন্তু পরিচিত এবং বহু উচ্চারিত শত শত মানুষের একজনের নামও এই বারো জনের মাঝে আসে নি ।

পঁচিশে মার্চের কালো রাতের বিভিষিকাময় চিত্র ফোটে উঠে ব্রিটেনের বিভিন্ন কাগজগুলোতে। হেরাল্ড ট্রিবিউন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় পাকিস্থানী শাষকদের হত্যার চিত্র। প্রবাসীরা জানতে পারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষনার কথা। ব্রিটেন প্রবাসীদের মাঝে সাড়া পড়ে। লন্ডনে গঠিত হয় “কাউন্সিল ফর দ্যা পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ” নামের একটি সংগ্রাম পরিষদ। ২৭ মার্চ এ কমিটি গঠনের পরদিন ঐতিহাসিক ট্রাফলগার স্কোয়ারে আয়োজিত হয় প্রতিবাদ সভা । একের পর এক গঠিত হতে থাকে এ্যকশন কমিটি। লন্ডন থেকে শুরু করে বার্মিংহাম, কভেন্ট্রি, ম্যানচেষ্টার, ওল্ডহ্যাম ব্রাডয়োর্ড, সেফিল্ড, লুটন, সেন্টআলবন্স, বেডফোর্ড, অক্সফোর্ড, ব্রাইটন, হেজলিংটন, রচডেল, হাইড, কার্ডিফ কিংবা স্কটল্যান্ড অর্থাৎ যেখানে বাঙালী, সেখানেই গঠিত হয়েছে এ্যকশন কমিটি। আর ঐসব আঞ্চলিক কমিটির সমন্বইে গঠিত হয় “এ্যকশন কমিটি ফর পিপলস্ রিপাবলিক অব বাংলাদেশইন ইউকে” নামের একটি শক্তিশালী কমিটি।  এ ছাড়াও গঠিত হয়েছিলো ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ছিলো বামপন্থিদের নিজস্ব সংগঠন,ছিলো যুবকদের ভিন্ন সংগঠন। প্রবাসের বাঙালী নারীরা লন্ডন নগরীতে মিছিল করেছে,ডাউনিং স্ট্রীটে স্মারকলিপি দিয়েছে। প্রতিবাদে প্রজ্জ্বলিত ছিলো আমাদের নারী সমাজও। ব্রিটেনে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ হয়েছে হাইড পার্কে। ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে কোচভর্তি হয়ে বীর বাঙ্গলীরা জমায়েত হয়েছে ঐসব সমাবেশগুলোতে। পাশাপাশি শুরু হয় কুটনৈতিক যোগাযোগ। লন্ডনের বাঙ্গালীদের পাশাপাশি বাইরের শহরগুলোর বাঙ্গলীরা যার যার অবস্থান থেকে এ যোগাযোগ রাখার চেষ্টা চালান। ১৩ মে কার্ডিফ এ্যকশন কমিটির পাচজন সদস্য বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আলোচনা উত্থাপন ও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের জন্য অনশন শুরু করেন। কারন পরদিন ছিলো  পার্লামেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ক আলোচনা। এ আলোচনা ছিলো টানা ছাব্বিশ ঘন্টার। এভাবে যুক্তরাজ্যের সকল প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া বাঙালীরা স্ব স্ব ক্ষেত্র থেকে চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশের দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সহানুভ‚তি আদায়ের। ব্রিটেনের তৎকালিন লেবার দলীয় এমপি ডগলাসম্যানের বাংলাদেশ নিয়ে উত্থাপিত প্রস্থাবে তিনশতজন এমপি সাক্ষর প্রদান করেন। বাংলাদেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার নীরব না থাকার জন্য তাদের প্রস্থাবে সরকারের প্রতি আহবান জানান। ঐদিন অর্থাৎ ১৪ ই মে ফরেন সেক্রেটারী রিচার্ড উড বাঙালিদের জনপ্রিয় এমপি পিটার শোর স্যার ফেডারিক বেনেটসহ ২০ জন পার্লামেন্ট সদস্য বাংলাদেশ বিষয়ক আলোচনায় অংশ নেন। এই বিতর্ক কিংবা আলোচনা পরদিন অর্থাৎ ১৫ই মে ব্রিটেনের মূলধারার গনমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়,যা ব্রিটেনসহ বিশ্ববাসীর দৃষ্টি বাংলাদেশমুখী করতে সহায়তা করে দাতা দেশসমুহের লন্ডন এ্য্যকশন কমিটি ধরনা দিয়েছে পাকিস্থানকে সহযোগীতা না করার জন্যে।

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের পাশাপাশি যে দায়ীত্বটা সেই কঠিন সময়ে পালন করেছিলো, তাহলো উদার হাতে চাঁদা প্রদান। কতিপয় পাকিস্থান প্রেমিক ছাড়া ব্রিটেনের এমন কোন বাঙ্গালী নেই, যিনি মুক্তিযদ্ধের প্রয়োজনে পাউন্ড দিতে কার্পন্য করেছেন। ব্যবসায়ী,শ্রমিক,পেশাজীবি নিজ নিজ অবস্থান থেকে চাঁদা দিয়েছেন। দেখা গেছে প্রত্যেক বাঙ্গলী বিশেষত শ্রমিক যারা সপ্তাহান্তে বেতন পেতেন, তারা এই বেতনের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ দিয়ে দিতেন মুক্তিযুদ্ধের ফান্ডে। তাইতো দেখা যায়, বর্তমান সময়ের তুলনায় অল্প উপার্জনকারী দেশপ্রেমিক বাঙ্গালীরা প্রায় সাড়ে তিনলক্ষ পাউন্ডের চাদা তোলেছে সেসময়। এবং স্বাধীনতার পর এই অর্থই না-কি বাংলাদেশের প্রথম বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে পরিগনিত হয়।

পাকিস্থানের ক্রিকেট টিম এপ্রিলের কোন এক সময়ে খেলতে আসে ব্রিটেনে। সেখানে ছিলো না কোন বাঙালী খেলোয়াড় ব্রিটেনের বাঙালীরা এতে ক্ষুব্দ হয়, বিক্ষোভ করে শত শত বাঙ্গালী। ২৬ জন বাঙালী ঐদিন গ্রেফতার হন।

এছাড়া একাত্তরের কোন এক সময় পাকিস্থান হাইকমিশনে বিক্ষোভ করতে গিয়ে আহত হয়েছে মানুষ। গ্রেফতারও বরন করতে হয়েছে এগারো জনকে। গ্রেফতারকৃতদের মাঝে একজন ইব্রাহিম আলীকে ছয় সপ্তাহের জন্য কারাগারেও যেতে হয়। এই প্রবাসে ক্রমেই জন্ম নিতে থাকে পাকিস্থানীদের প্রতি ঘৃনা। অবিশ্বাস আর ঘৃনার মধ্যি দিয়ে পাকিস্থানী আর বাঙ্গালীদের মাঝে বাড়তে থাকে বিদ্বেষ। দাঙ্গা-কলহ হয়ে উঠে এক নৈমিত্তিক ব্যাপার। আর এরই নির্মম শিকার হন আব্দুন নুর নামের একজন। বৃহত্তর সিলেটের ঐ আব্দুন নুরই সম্ভবত প্রথম কোন মানুষ, যিনি স্বাধীনতার নাম নিয়ে নিহত হন কোন এক পাকিস্থানীর হাতে প্রবাসে। এই হত্যাকে সাধারন হত্যা বলে চালিয়ে দিতে চাইলেও এটা কি আসলেও তাই। কারণ এটা ছিলো পাকিস্থানী আর বাঙ্গালী দ্বন্ধ এবং জাতিগত এই দ্বন্ধেরই নির্মম পরিনতিতে স্বাধীনতার বলি হলেন আব্দুন নুর। আর এ অর্থে তিনি একাত্তরের শহীদ।

ব্রিটেন প্রবাসী অগণিত বাঙ্গালিদের মুক্তিযুদ্ধে অসাধারন ত্যাগের ছোট্ট একটা অংশ মাত্র উপরের এই বর্ণনা । কিন্তু তবুও উঠে এসেছে একটা চিত্র। রাজাকারদের দোসর আবুল হায়াত, হাজী রুপা মিয়া কিংবা সাজিদ আলীদের মত কিছু নগন্য সংখ্যক  দেশ দ্রোহী ছাড়া সকল বাঙ্গালিরাই একটা নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুধয়ের জন্য কাজ করেছেন । ব্রিটেন প্রবাসী সেই সময়ের অনেকেই এখন আর বেঁচে নেই । সেসময়ের তরুণ কেউ কেউ এখন বয়সের ভারে নুজ্য কিংবা অবসর জীবন কাটাচ্ছেন।

সেরকমরেই একজন বাস করেন নর্থ ইংল্যান্ডের রসেনডেলে । তিনি রসেনডেল বাংলাদেশ এসাসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ব্রিটেনে বাংলাদেশীদের অবস্থান আর ইতিহাস নিয়ে ইতিমধ্যে যার বইও বেরিয়েছে দু’তিনটা । যিনি ১৯৬৩ সনে এসেছিলেন ব্রিটেনে । তারপর বহু ইতিহাসের সাক্ষি । তিনি তাঁর তারুণ্যে প্রত্যক্ষ্ করেছেন ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের সাংগঠনিক প্রক্রিয়া । যোগ দিয়েছেন মিছিল-সমাবেশে । তিনি হলেন এম এ মিয়া, যাকে লাল মিয়া নামে সবাই চিনে, ঐ মানুষটি বলেছেন, কিভাবে তারা বরফ ভেঙ্গেছেন, হাইড পার্কে গেছেন কোচ ভর্তি মানুষ নিয়ে । কিভাবে মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে মানুষের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করেছেন । তিনিই জানালেন নর্থ ইংল্যান্ডের হাইড শহরের সেসময়ের এক তরুণ বাঙ্গালির কথা, যিনি এখন অসুস্থ, তাঁকে আমিও  জানি, যিনি ম্যানচেষ্টারে পাকিস্থানী হাইকমিশনারকে চেয়ার ছুড়ে মেরেছিলেন, বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে ।

এম এ মিয়া দু:খ করে বললেন, আজ যাদের নাম দেখলাম, তাদের একজনের নাম আমি জানি, তা-ও শুনেছি মাত্র ক’বছর থেকে, তিনি রাজনৈতিক নেতা হবার পর। অন্য এগারোজন হয়ত অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করতে কাজ করেছেন, তবে নেতৃত্বে তাদের দেখি নি– তিনি আফসোস করে বললেন। তিনি নর্থ ইংল্যান্ডের কয়েকজন মানুষের নাম উচ্চারণ করে বললেন, এদের রাতদিন খেটে যাওয়ার কথা। নর্থ ওয়েষ্ট ইংল্যান্ডের ক’জন ব্যবসায়ির অর্থনৈতিক সহযোগীতার কথা তিনি তোলে ধরে বললেন, এদের রেষ্টুরেন্ট ছিল যেন মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের বাংলাদেশী একেকটা কার্যালয়। তিনি ক্ষোভের সাথে উচ্চারণ করলেন, এদের নামতো আসতে পারতো । লন্ডনে যারা কাজ করেছেন, এক বাক্যে তাদের অনেকের নাম নিলেন তিনি, যাদের নাম সর্বাগ্রে আসা উচিৎ ছিল বলে মন্তব্য করেন এম এ মিয়া ।

ব্রিটেনের মাত্র ১২ জনকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয় স্বীকৃতি দিয়েছে ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য । ব্রিটেনে এ নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক । সমাজকর্মী, লেখক-সাংবাদিক এমনকি ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা এ নিয়ে সোচ্চার । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। এমনকি বাংলাদেশ হাইকমিশন এ নিয়ে বিবৃতি দিতেও বাধ্য হয়েছে । আওয়ামী লীগের একজন পরিচিত নেতা তাঁর ফেসবুক স্ট্যটাসে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের সাম্প্রতিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত একজনের নাম না উল্লেখ করে লিখেছেন ”নেতাকে ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর হিথরো এয়ার পোর্টে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু বিহীন বাংলাদেশ কেমন চলছে , নেতা প্রতিউত্তরে বলেছিলেন  ‘মস্তাক ভাই  ভালই চালাচ্ছেন’ । আর এখন মুক্তিযোদ্ধা , বেহায়া !!!”

যাকে তিনি বেহায়া বলেছেন, তার এ ঘঠনা অনেকেই জানেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের এ নেতা বিষয়টি আবারও তোলে ধরলেন। এ সময়ে এরকম সাহসী কথাগুলো উচ্চারিত হওয়া প্রয়োজন ।

এরকম ‘বেহায়া’সহ যাদের নাম এসেছে, তাঁরা যে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রিটেনে ছিলেন না, তা কেউ অস্বীকার করছে না । কিন্তু তাঁরা আদৌ কোথায় কি করেছেন, তাদের খুব একটা হাদিস মিলছে না, হয়ত নিরবে কাজ করেছেন ? হাজার হাজার মানুষের সাথে কয়েকজন মহিলা জোরে-সোরে রাজপথ প্রকম্পিত করে সেসময় বিদেশীদের চোখ কেড়েছিলেন, কিন্তু পরিচিত এবং বহু উচ্চারিত শত শত মানুষের একজনের নামও এই বারো জনের মাঝে আসে নি ।

সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হল, মন্ত্রনালয়ের সচিব বলেছেন, এরপর থেকে আর কোন আবেদন গ্রহণ করা হবে না। তাঁর এ কথাটা নি:সন্দেহে আপত্তিকর । আপত্তিকর এজন্য যে, তাঁর কথায় মনে হচ্ছে এই বারো জন কিংবা তাদের পক্ষের উকিলেরা কাকুতি মিনতি করে হাত কচলিয়ে তাদের রিকগনিশনটা আদায় করেছেন এবং মন্ত্রনালয়ও বিরক্ত হয়েই এই স্বীকৃতিটা দিয়েছেন । তা না হলে কোন্ স্পর্ধায় তিনি বলতে পারেন আর কোন আবেদন গ্রহণ করা হবে না। যারা সেসময় অল্প উপার্জনের দিন-সপ্তাহ-মাসের অর্থ তোলে দিয়েছে, তাদের সামনে ছিল শুধুই দেশ এবং তাদের দেশের স্বাধীনতা। আজ সেই মানুষগুলো অর্থে-বিত্তে টুইটুম্বুর । এদের পরবর্তী অর্থাৎ বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশই চোখ ধাধানো ক্যারিয়ার নিয়ে ব্রিটেনে অবস্থান করছে । এই মানুষগুলো বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সকল সুবিধায় ভাগ বসাতে আবেদন করে নি আগে । হয়ত এই সনদের জন্য তারা আবেদনও করতো না। কিন্তু হঠাৎ করে ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করতে অচেনাদের এই সম্মাননার সনদ দিয়ে বরং ব্রিটেনের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সংগঠকদের অপমান করা হয়েছে। আর সেজন্যই এই মানুষগুলোর অবদানের মূল্যায়নের জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের  সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক উঠেছে।

আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হল, বাংলাদেশ হাইকমিশন বলেছে, এই স্বীকৃতিতে তাদের কোন মনোনায়ন কিংবা সুপারিশ   ছিল না। তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে, কে কিভাবেই এই ১২ জনের স্বীকৃতি দিলেন ? মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে এসবের একটা স্বচ্ছ বিবৃতি ব্রিটেনের বাঙ্গালিরা আশা করতেই পারে।  হয় এই ১২ জনের স্বীকৃতি বাতিল করা প্রয়োজন, না হয় নতুনভাবে উদ্যোগ নিয়ে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, শ্রম দিয়েছেন, দ্বারে দ্বারে ঘোরেছেন, তাদের নাম  সংযোজন করা উচিৎ । তা না হলে আবারও একটা প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে স্পর্ধিত গর্বের জায়গাটি নিয়ে ।

ফারুক যোশী : কলাম লেখক, প্রধান সম্পাদক; ৫২বাংলাটিভি ডটকম ।

 

আরও পড়ুন-

আওয়ামীলীগের একটি সম্মেলন, ক্ষমতার দাপট এবং একটা আশাবাদ


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক