নেত্রকোনায় কিরিচ দিয়ে আঘাত ও কোমরের বেল্ট দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর করে রনি মিয়া (১৬) নামের কিশোরকে নির্যাতন এবং ভিডিও ভাইরাল হওয়া ঘটনায় গ্যাং প্রধানসহ এক সহযোগীকে আটক করেছে পুলিশ। দীর্ঘ ১৭ দিন ধরে পুলিশের কয়েকটি অভিযানে অবশেষে আটক করা হয় এ গ্যাংয়ের প্রধান হৃদয় মিয়া ওরফে ব্ল্যাক হৃদয়কে (২৫)।
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) ভোর ৪টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে প্রেপ্তার হন তিনি। পরে পুলিশ তার এক সহযোগী মো. মিজান মিয়াকে সকালে নেত্রকোনা পৌরশহরের রাজুরবাজার এলাকা থেকে আটক করে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রসাশন) মো. ফখরুজ্জামান জুয়েল।
আটককৃত হৃদয় মিয়া জেলার বারহাট্টা উপজেলার বড়গাঁওয়া গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে এবং গত ১১ এপ্রিল ভূক্তভোগীর বাবা দায়ের করা মামলার প্রধান আসামী তিনি। তার অন্যতম সহযোগী মো. মিজান মিয়া (১৮) একই উপজেলার বাইশধার গ্রামের মো. আনোয়ার মিয়ার ছেলে।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নেত্রকোনা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুস সালাম সাংবাদিকদের জানান , তথ্য প্রযু্িক্তর সহায়তায় গত ১৭ দিন যাবত দিন ও রাতে ডিবি ও থানা পুলিশের কয়েকটি টিম বিভিন্ন স্থানে হৃদয় মিয়ার আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে অভিযান পরিচালনা করে। আজ ভোরে নিজ বাড়ীতে অবস্থানের তথ্য পেয়ে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা হয় । পরে সকালে রাজুর বাজার এলাকা থেকে এ মামলার অন্যতম এক আসামি মিজানকে আটক করতে সক্ষম হই। বিকেলে রিমান্ড আবেদনসহ আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হবে।
নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রসাশন) মো. ফখরুজ্জামান জুয়েল সাংবাদিকদের জানান, নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিওটি নজরে আসলে পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসী মহোদয়কে অবগত করি। সেসাথে থানা ও ডিবি পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয় এই গংদের ধরতে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের আন্তরিকতার সাথে অক্লান্ত শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে অবশেষে এ মামলার প্রধান আসমিকে ধরতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল আনুমানিক রাত ৯টার দিকে বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য দশধার বাজারে যায় রনি মিয়া (১৬) নামের কিশোর। মোবাইলে মেয়ের সাথে কথা বলাকে কেন্দ্র করে পাপন শীলের দোকানের সামনে থেকে ডেকে দশধার ব্রিজের দক্ষিণ পাশে রনিকে নিয়ে আসে হৃদয় গংরা। চোখমুখ বাঁধার সময় চিৎকার দিলে হৃদয়ের হাতে থাকা কিরিচ দিয়ে ঘাই দেয়। হাত দিয়ে ফেরাতে গিয়ে বাম হাতের তর্জনী নখ ও হাড় কেটে রক্তাক্ত জখম করে ভূক্তভোগীর।
পরে অটোরিকশায় তুলে বাড়ইডহর ব্রিজে এনে একজন ভিডিও ধারণ করে আর হৃদয় কোমর থেকে বেল্ট খুলে মাথা, মুখ, বুক, পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। বলতে থাকে এই বেল্ট দিয়ে চারজনকে পেটাইছি এবং তার সঙ্গে থাকা অন্যরাও অনেক লাথি ও কিল-ঘুষি মারে। ভিডিওটি গত ১১ এপ্রিল রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ভাইরাল হয়।