ব্রিটেনে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আইন ঢেলে সাজানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। তিনি বলেছেন, এর ফলে ব্রিটেনে যারা অবৈধ উপায়ে প্রবেশ করবেন এবং আশ্রয় চাইবেন তাদের অবস্থান এবং বৈধভাবে অবস্থানকারীদের মর্যাদা এক হবে না। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বৈধভাবে অবস্থানকারীদের জন্য দিয়েছেন আরো সুসংবাদ।তিনি বলেছেন, যারা বৈধভাবে বৃটেনে যাবেন, সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে সেখানে অনির্দিষ্টকাল থাকার অধিকার দেয়া হবে। অবৈধ উপায়ে ব্রিটেনে গেলে তাদের জন্য সেখানে থাকাটা খুবই কঠিন হয়ে যাবে। অভিবাসন বিষয়ক নতুন পরিকল্পনা সম্পর্কে পরে বিস্তারিত জানানোর কথা রয়েছে মিস প্রীতি প্যাটেলের।
সরকারের এমন পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে বিরোধী লেবার দল। তারা বলেছে, আশ্রয় প্রার্থীদের বিষয়ে সরকারের সহিষ্ণুতা এবং সহানুভূতিতে ঘাটতি আছে। অন্যদিকে শরণার্থী গ্রুপগুলো এমন প্রস্তাবকে অন্যায্য এবং বাস্তবসম্মত নয় বলে অভিহিত করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বলেছেন, প্রথমবারের মতো এটা আমলে নেয়া হবে যে, আশ্রয়প্রার্থী ব্রিটেনে অবৈধভাবে প্রবেশ করার সময় অন্য একটি নিরাপদ দেশ, যেমন ফ্রান্স- এমন কোনো দেশ হয়ে প্রবেশ করেছেন কিনা। ফলে আশ্রয়প্রার্থীর আবেদনের ওপর এর একটা প্রভাব পড়বে। এক্ষেত্রে যাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান হবে, তাদেরকে দ্রুত ব্রিটেন থেকে বের করে দেয়ার উপায় খোঁজা হচ্ছে। এ জন্য আপিল প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে সংস্কার করা হচ্ছে।
প্রীতি প্যাটেল বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি অবৈধ উপায়ে ব্রিটেনে যান তাহলে তিনি সেখানে বৈধভাবে যাওয়া ব্যক্তিদের মতো একই অবস্থান আর আশা করতে পারবেন না। তাদের জন্য ব্রিটেনে অবস্থান করা খুব কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু যেসব মানুষ নিষ্পেষণ অথবা সহিংসতার শিকারে পরিণত হয়ে, যেমন সিরিয়া ও ইরানের মতো দেশ থেকে- বৈধ উপায়ে যদি ব্রিটেনে যেয়ে থাকেন, তাহলে তারা অনির্দিষ্টকাল ব্রিটেনে অবস্থান করতে পারবেন।
বর্তমানে নিয়মে শরণার্থী হিসেবে মর্যাদা পেয়েছেন এমন ব্যক্তিদের এ জন্য আবেদন করতে ৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু নতুন পরিকল্পনায় কেউ যদি অপরাধী চক্রকে অর্থ দিয়ে ব্রিটেন গিয়ে থাকেন তাহলে হয়তো তারা অস্থায়ী সময় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করার অনুমতি পাবেন। নিয়মিত মূল্যায়ন করে তাদেরকে ব্রিটেন থেকে বের করে দেয়া হবে।
প্রীতি প্যাটেল আরো বলেন, আশ্রয় প্রার্থী কারো যদি কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড থাকে এবং এ জন্য তাকে ব্রিটেন থেকে বের করে দেয়া হয়ে থাকে, সে বা তিনি আবার ব্রিটেনে ফিরে গেলে তাকে ৫ বছরের জেল দেয়া হবে। বর্তমানে এই সাজার মেয়াদ সর্বোচ্চ ৬ মাস। তিনি সতর্ক করে বলেন, এক্ষেত্রে যারা মানব পাচার করবে তাদেরকে দেয়া হবে যাবজ্জীবন জেল।
বিবিসির হোম অ্যান্ড লিগ্যাল বিষয়ক প্রতিনিধি ডমিনিক ক্যাসসিয়ানি বলেছেন, সরকারের এই উদ্যোগ কতটা কাজে আসবে তা পরিষ্কার নয়। কারণ, ব্রিটেন এখন আর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোনো স্কিমের মধ্যে নেই যে আশ্রয়প্রার্থনা করে কেউ ব্যর্থ হলে তাকে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেবে।
প্রসঙ্গত ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত এক বছরে বৃটেনে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন ৩৫ হাজার ৯৯ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে ইরান, আলবেনিয়া এবং ইরাকিদের পক্ষ থেকে। এই উদ্যোগকে কনজারভেটিভ দলীয় সরকার বহু দশকের মধ্যে ব্রিটেনে আশ্রয় প্রার্থী ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় সংস্কার বা ঢেলে সাজানো বলে অভিহিত করেছে।
এর আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গত ১৮ মার্চ বৃহস্পতিবার টেন ডাউনিং স্ট্রিটে, করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সরকারের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ইমিগ্র্যান্টদের বৈধতা দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। নিজের আগের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বরিস জনসন প্রেসব্রিফিং এ বলেছেন, যুক্তরাজ্যে অবৈধ উপায়ে আসা অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা করতে তিনি প্রস্তুত রয়েছেন।
তিনি বলেন, যেহেতু এই অবৈধ অভিবাসীরা যুক্তরাজ্যে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছেন এবং অপরাধমূলক কাজে সম্পৃক্ত হননি, তাই তাদের বৈধ করাটাই যুক্তিসঙ্গত।
এর আগে লন্ডনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ও দেশটিতে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।