‘প্রায় ৬ মাস পূর্বে এক দিন বিকেলে খালা ঘরে বসে আমার বিয়ে নিয়ে ছেলের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে আলাপ করছিলেন। পরের দিন বিয়ের তারিখও নির্ধারণ করা হয়। বর একই ইউনিয়নের উদাপাড়া গ্রামের প্রতিবেশী পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তি। আড়াল থেকে তাদের মুখে বাল্যবিয়ের গল্প শুনে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। হঠাৎ বুকে সাহস নিয়ে কাউকে বুঝতে না দিয়ে কৌশলে ঘর থেকে বের হয়ে দ্রুত চলে যাই স্থানীয় কিশোর-কিশোরী ক্লাবে। সেখানে জেন্ডার প্রমোটার মিতালী রানী সাহাকে সবকিছু খুলে বলি। তিনি আমাকে নিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধের অভিযানে নামেন।
একে একে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পপি রানী তালুকদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল রানাসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে। এভাবে নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছি।’
সোমবার (৮ মার্চ) আর্ন্তজাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এভাবেই নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধের গল্প শুনিয়েছে অনিমা সুলতানা (১৪)।
অনিমা সুলতানার বাড়ি নেত্রকোণার কলমাকান্দার উপজেলার লেংঙ্গুড়া ইউনিয়নের উদাপাড়া গ্রামে। সে ওই গ্রামের ইউনুছ মোল্লার মেয়ে এবং লেংঙ্গুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
অনিমা ৫২ বাংলাকে জানায়, তাদের পরিবারটি হত দরিদ্র। তার মা-বাবা দীর্ঘদিন ধরে পাবনা শহরে শ্রমিকের কাজ করেন। এক ভাই ও এক বোন বাবা মার কাছে থাকে। আর সে খালার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া চালাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে তার খালা তাকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করেন। অনিমা কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য হওয়ার সুবাদে বাল্যবিবাহের কুফল তার জানা ছিল।
এ বিষয়ে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের জেন্ডার প্রমোটার মিতালী রানী সাহা ৫২ বাংলাকে বলেন , আমরা প্রতি ক্লাসেই বাল্যবিয়ের কুফল নিয়ে আলোচনা করে থাকি। অনিমা সুলতানা যখন তার নিজের বাল্যবিয়ের কথা আমাকে জানায় তখন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করি। পরে তাদের কথামতো অনিমার খালাকে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিক বুঝিয়ে বিয়েটি বন্ধ করেছি।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পপি রানী তালুকদার ৫২ বাংলাকে বলেন, অনিমা নিজের বাল্যবিয়ে বন্ধ করে অন্যান্য মেয়েদের কাছে অনুকরণীয়। তাকে সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে করোনাকালে কিশোরী কন্যার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সাহসিকতার পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
কলমাকান্দার ইউএনও সোহেল রানা ৫২ বাংলাকে বলেন, অনিমা সুলতানা নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধ করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। শুনেছি মেয়েটির পরিবার হতদরিদ্র। তার লেখাপড়া যেন ব্যাহত না হয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে।
উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় আয়োজিত উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নেত্রকোণা-১ আসনের সংসদ সদস্য মানু মজুমদার।
এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল রানা। বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক তালুকদার, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পপি রানী তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা চন্দন বিশ্বাস, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজ্জাক আহমেদ রাজু প্রমুখ।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলার বিভিন্ন নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, রাজনীতিবিদ ব্যক্তিবর্গ, উপজেলা বিভাগীয় দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ।