বাংলাদেশিদের জন্য ৯ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার। দীর্ঘ এই সময়ে বাংলাদেশ থেকে শ্রম ভিসায় কোনো নাগরিক আমিরাতে যেতে পারেননি। তবে ভ্রমণে (ভিজিট ভিসায়) গিয়ে দেশটিতে কাজের সন্ধান করছেন হাজার হাজার তরুণ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র নিয়ে গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে মাত্র একজন নারী আরব আমিরাতে প্রবেশ করলেও ভ্রমণ ভিসাধারীদের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান সম্পূর্ণ ভিন্ন। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের এসপি জাকির হোসেনের তথ্যমতে, শুধু চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে গত জানুয়ারি মাসে আমিরাত ভ্রমণে গেছেন ৫ হাজার ৩০০ যাত্রী। এভাবে প্রতিদিন ভ্রমণ ভিসাধারীদের তালিকা লম্বা হলেও ভবিষ্যতে বাংলাদেশি শ্রমবাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কমিউনিটির নেতারা দাবি করছেন, ভ্রমণে আসা ব্যক্তিদের ৭০ শতাংশ ভিসার ধরন পরিবর্তন করে কাজের ভিসা নিচ্ছেন। তবুও অতিমাত্রায় ভ্রমণ ভিসা গ্রহণ, সুযোগের অপব্যবহার ও মেয়াদ শেষে অবৈধ হয়ে যাওয়া ভ্রমণকারীদের নিয়ে ভবিষ্যতে ঝুঁকি বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন তারা।
এদিকে, আমিরাতের ভ্রমণ ভিসার সহজলভ্যতা ও ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির দালাল চক্র বিছিয়েছে প্রতারণার জাল। কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করছে ভ্রমণ ভিসা।
আরব আমিরাতের বিভিন্ন ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস এজেন্সির তথ্যমতে, ৩০ দিনের জন্য প্রত্যেক ভ্রমণকারীর ভিসা বাবদ লাগে মাত্র ১০-১৩ হাজার টাকা। ৯০ দিনের ভিসার জন্য খরচ পড়ে ডিপোজিটসহ মাত্র ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু দালাল চক্র ও কিছু অসাধু এজেন্সি মিলে ‘সরাসরি কন্ট্রাক্ট’-এর নামে ভিসাপ্রত্যাশীদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
গত রোববার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের বদরুল আলম ভ্রমণ ভিসায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে পা রাখেন। তিনি জানান, দেশে দৈনিক আয় হতো ২০০ থেকে ৭০০ টাকা। আপন ভাই আবুধাবি থাকার সুবাদে ভ্রমণ ভিসার সুযোগ নেন। ত্রিশ দিনের ভ্রমণ ভিসা ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি মিলে তার খরচ হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা।
এত খরচ তবুও ভ্রমণ ভিসায় কেন জানতে চাইলে বদরুল বলেন, ‘সিলেটের রুহুল ট্রাভেলসে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা জমা করে ভিসা নিয়েছি। বাকি টাকা টিকিট করতে গেছে। ভাই বলেছে কাজের সুযোগ আছে। বাকিটা আল্লাহ জানেন।’
ফেনীর ফাজিলপুরের ইমরান হোসেন জানান, তিন মাস মেয়াদি ভ্রমণ ভিসা ও টিকিট নিতে তার খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকা। ভিসা বাবদ জ্যাঠাতো ভাইকে দিতে হয়েছে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। দেশে সিরামিক্সের কাজ করে দৈনিক আটশ’ টাকা আয় হতো তার।
বদরুল ও ইমরানের মতো প্রতিদিন এমন অনেক তরুণ ভ্রমণ ভিসা নিয়ে কাজের সন্ধানে আরব আমিরাতে পা রাখছেন। তবে এ পর্যন্ত কী পরিমাণ বাংলাদেশি ভ্রমণে আমিরাত এসেছেন, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই দূতাবাসে। আবুধাবি দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, প্রতিদিন কী পরিমাণ যাত্রী দেশ থেকে আমিরাত ভ্রমণে আসছেন, দূতাবাসে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। ভিজিট ভিসা এজেন্সি দিয়ে থাকে। এজেন্সি থেকে ভিসা নিয়ে তারা আমিরাত যান।
আবুধাবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ইফতেখার হোসেন বাবুল বলেন, ভ্রমণ ভিসায় আসা বাংলাদেশিদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ লোক ভিসার ধরন পরিবর্তন করে কাজের ভিসা নিচ্ছেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শ্রমবাজারের জন্য এটি ইতিবাচক দিক। তবে একটি ক্ষুদ্রতম অংশ থেকে যাচ্ছে, যারা ভ্রমণ ভিসার মেয়াদ শেষ করে অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। এই সংখ্যা বাড়তে থাকলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।
আল আইন ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস ব্যবসায়ী ওসমান হক বলেন, ভ্রমণ ভিসাধারীদের আমিরাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের ব্যাংক ডিপোজিট রাখা এবং ভিসা পরিবর্তন না করলে বা দেশে ফেরত না গেলে শর্তসাপেক্ষে এই টাকা কেটে নেওয়ার নিয়ম করলে অবৈধ হওয়ার পরিমাণ যেমন কমবে, তেমনি দালালদের দৌরাত্ম্য কমতে পারে।