রাত পোহালেই নির্বাচন। গোলাপগঞ্জ পৌর নির্বাচন নিয়ে মিছিলের শহরে পরিণত হয় বৃহস্পতিবার। ৩জন মেয়র প্রার্থী দিনভর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে
শেষ নির্বাচনী সভা-শোডাউন সম্পন্ন করেন। বড় দল আওয়ামীলীগ বিএনপি প্রার্থীদের ন্যায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও শেষ মুহুর্তের নির্বাচনী প্রচার চালান। তবে ভোটারদের অভিমত স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল (জগ) প্রতীক নিয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। ঘোগারকুল মাঝপাড়া এলাকার ভোটার খলিলুর রহমান বলেন, মানুষ যে ভাবে জগ মার্কার সমর্তনে এক অইছে নির্বাচনো রাবেল ভাই ২/৩ হাজার ভোট বেশি পাইয়া ফাস করবা। এদিকে ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনের আগের রাত কালো টাকার ছড়াছড়ি না হলেও ভোটাররা স্বতঃস্পূর্তভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে জনগনের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি পাওয়া সম্ভব হবে। এখন দেখার বিষয় ৩০ জানুয়ারীর ফলাফলে শেষ হাসি কে হাসবে।
গোলাপগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৩জন প্রার্থী তাদের পৃথক পৃথক শেষ পথসভায় নির্বাচনী ইশতেহার সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অঙ্গিকার তুলে ধরেন।
বর্তমান মেয়র ও মেয়র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম রাবেল তার নির্বাচনীইশতেহার তুলে ধরে বলেন, আমি উপ নির্বাচনে জয়ী হয়ে মাত্র দুবছর সময় পেয়েছি। এসময়ের মধ্যে যে বরাদ্দ পেয়েছি তা সব ওয়ার্ডের কাউন্সিলারদের পরামর্শের আলোকে সমভাবে বন্টন করে উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি। আমার দায়িত্বকালীন সময়ে কোন ওয়ার্ডের নাগরিকগন বৈষম্যের শিকার হননি। আমি নির্বাচিত হলে আগামীতেও সমভাবে সকল ওয়ার্ডে উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাব।
অতীতে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য ব্যবসায়ীরা নানা ভাবে ভোগান্তির শিকারহয়েছেন। মাসের পর মাস পৌরসভায় গিয়েও ট্রেড লাইসেন্স পাননি। আমি দায়িত্ব লাভের পর এক দিনের মধ্যে ব্যবসায়ীদেরকে ট্রেডলাইসেন্স দেয়ার ব্যবস্থা
করেছি। আগামীতে সুযোগ পেলে সবার সহযোগীতা নিয়ে গোলাপগঞ্জ পৌরসভাকে সন্ত্রাস মুক্ত, মাদক মুক্ত, অপরাধ মুক্ত একটি মডেল পৌরসভায় গড়ে তুলব। এছাড়া পৌর এলাকার নাগরিকদের সুবিধার জন্য একটি পৌর কবরস্থান ও একটি এ্যম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করবো।
গোলাপগঞ্জের ৪ হাজার পরিবারকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের জন্য সরকার ২৫কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। আগামীতে সুযোগ পেলে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে নাগরিক সমাজের বিশুদ্ধ পানি সমস্যা সমাধান করবেন বলে জানান।
উল্লেখ্য জগ মার্কা নিয়ে আমিনুল ইসলাম রাবেল ৪নং ওয়ার্ড বাসীর উদ্যোগে এক নির্বাচনী সভা করে বিকাল ৫টায়। তিনি শেষ নিবাচনী সভা করেন বুধবার বিকাল ৪টায় গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীতে।
আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ও গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহেল আহমদ বলেন গোলাপগঞ্জ এ গ্রেড পৌরসভা। আমি এই পৌরসভাকে দূর্নীতি মুক্ত, সন্ত্আরাস মুক্ত, মাধক মুক্ত একটি আধুনিক উন্নত পৌরসভা গঠন করাই আমার মূল লক্ষ্য থাকবে। বিগত নির্বাচনে বিজয়ীদের সরকারের সাথে সরাসরি কোন সংযোগ ছিল না। এবার দল আমাকে মনোনয়ন দেওয়ায় সরকারের সাথে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ রয়েছে বলে
জানান। ক্ষমতাসীন দলের অধীনে পৌর এলাকার উন্নয়ন ঘাটতি পূরণ করে মডেল পৌরসভা গড়তে তিনি বদ্ধ পরিকর। গোলাপগঞ্জের রাস্তাঘাট সংকীর্ণ। মাষ্টারপ্ল্যাান অনুযায়ী প্রসস্থকরণ, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা শতভাগ নিশ্চিত, পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি, বেকারত্ব দূরীকরণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন গ্রাম হবে শহর এ আলোকে একটি আধুনিক পৌরসভা গঠন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি নির্বাচিত হলে পৌর এলাকার হতদরিদ্র মানুষের জন্য পৌরসভার উদ্যোগে একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নির্মাণ করার কথা জানান। অতীত কমকান্ড যাচাই করে ভোটাররা বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে নৌকাকে নির্বাচিত করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহীন বলেন পৌরসভা প্রতিষ্ঠাকালীন সময় ২০০১ সাল থেকে আপনাদের সুখে দুঃখে পাশে থেকে সেবা করে যাওয়ার মনোভাব নিয়ে আজও জনগণের দাবী আদায়ে মাঠে রয়েছি। তিনি বলেন একটিবার তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার আহবান জানিয়ে বলেন তিনি নির্বাচিত হলে সর্বোচ্চ সেবাদেওয়ার চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন আপনারা যেভাবে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন এই পরিবেশ বিরাজ করলে ও অবাধ সুষ্টু নির্বাচন হলে ধানের শীষের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবেন না বলে আশা রাখেন।
তিনি বিভিন্ন প্রার্থীর কালো টাকার ছড়া-ছড়ি উল্লেখ করে বলেন, আপনারা আপনাদের এলাকায় পাহারা দিবেন, সেন্টারে ফলাফল না দেওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবেন। যাতে কুচক্রী মহল তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পারে। জনগনের ভালবাসায় ইনশাল্লাহ ৩০জানুয়ারীধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত হবে।
সাবেক মেয়র ও মোবাইল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাকারিয়া আহমদ পাপলু বলেন, আমি নির্বাচিত হরে পৌরসভার বেকারত্ব দূরীকরণ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে নতুন হাসপাতাল স্থাপন, নতুন প্রজন্মকে আরো বেশি উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে আধুনিক মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবো। পানি সমস্যা নিরসনে কাজ করব। দলীয় মনোনয়নের বাইরে গিয়ে নির্বাচনের ব্যাপারে বলেন, আমি এর আগেও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে একাধিবার নির্বাচিত হয়েছে। পরবর্তীতে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করি,তখন দলের ভিতরই কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের নগ্ন হস্তক্ষেপে এবং কিছু কর্মকর্তা মিলে আমার পরাজয়ে ভূমিকা রেখেছিল। এবারও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম, কিন্তু আবারও আমাকে নিয়ে দল এবং নেত্রীর কাছে ভুল বার্তা দিয়ে মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত জনগণের চাপে নির্বাচন করতে বাধ্য
হই। বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
উল্লেখ্য, ৩০ জানুয়ারী নির্বাচনে চার মেয়র প্রার্থী সহ ৯টি ওয়ার্ডে ৪৭জন কাউন্সিলর প্রার্থী (পুরুষ) ও সংরক্ষিত ৩টি ওয়ার্ডে ১০ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে মোট ২২ হাজার ৯শ ১৬ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ হাজার ৬শ ৯৪ জন এবং মহিলা ভোটার ১১হাজার ৩শ ১৯ জন। ভোট কেন্দ্র ৯টি এবং ভোট কক্ষ থাকবে ৬১টি।