যুক্তরাজ্যে নতুন ধরণের করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সাথে বাংলাদেশের আকাশপথে যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) সংসদ ভবনে দীর্ঘ দিন পরে অনুষ্ঠিত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
বৈঠকে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। গতকাল সংসদ ভবনে কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, কমিটির সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, মো. আব্দুল আজিজ, সৈয়দা জাকিয়া নুর, রাহগির আল মাহি এরশাদ (শাদ এরশাদ) এবং মো. আমিরুল আলম মিলন অংশ নেন।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম গণমাধ্যমকে জানান, যুক্তরাজ্যে করোনার যে নতুন ধরন পাওয়া গেছে, তা বাংলাদেশে আছে কিনা এখনও কনফার্ম নয়। কিন্তু সে দেশের সঙ্গে ফ্লাইট যেহেতু চলছে, আসার আশঙ্কাও থেকে যায়। এ কারণে আমরা বিমান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে সাময়িকভাবে ফ্লাইট বন্ধ করতে বলেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিমান মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস মহামারীর এক বছর পেরিয়ে আসার পর যুক্তরাজ্যে ভাইরাসটির নতুন একটি ধরন শনাক্ত হওয়ার পর বিভিন্ন দেশ দেশটির সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের মধ্যে এই দাবি উঠলেও সরকার এখনও লন্ডনের ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে যুক্তরাজ্য থেকে আসা সবাইকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
শেখ সেলিম বলেন, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টিন যাতে কঠোরভাবে মানা হয়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে বলেছি আমরা। প্রথম যখন দেশে সংক্রমণ হল। তখন কোয়ারেন্টিন নিয়ে কিছু গাফিলতি ছিল। সেকারণে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে মাস্ক, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) বিতরণ এবং নমুনা পরীক্ষায় অনিয়মের কথা তুলে ধরে টিকা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সতর্ক থাকতে বলেছে কমিটি।
শেখ সেলিম বলেন, গত ২৪ মার্চ আমরা যে বৈঠক করেছিলাম সেখানে করোনাভাইরাসের প্রস্তুতি নিয়ে অনেক কিছুই বলা হয়েছিল। কিন্তু সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর আমরা দেখলাম আমাদের প্রাথমিক প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। মাস্ক আর করোনা পরীক্ষা নিয়েও কেলেঙ্কারি হয়েছে। করোনা টিকায় যাতে কোন ধরনের অনিয়ম না হয় সে জন্য করোনাভাইরাসের টিকা সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখে জেলা সরকারি হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে দেবার কথা বলেছে কমিটি।
তিনি বলেন, আমরা ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা এরকম পরিস্থিতি দেখতে চাই না। টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা আগে থেকে নিতে হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি ডাক্তারদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বেসরকারি খাতে এই টিকা দেওয়া যাবে না। যদি কেউ বিদেশ থেকে টিকা আমদানি করতে চায় তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে করতে হবে।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি জানান, শিশুদের উপযোগী কোভিড-১৯ টিকা যাতে বাংলাদেশ প্রথম থেকেই পায়, সেজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন টিকা উৎপাদকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে যে টিকা বেরিয়েছে, সেটি ১৮ বছরের নিচের মানুষদের দেওয়া যাবে না। সেজন্য আমরা টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে বলেছি যাতে বাংলাদেশ শুরু থেকে তা পায়।
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল্স এবং কোভ্যাক্সের আওতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে চার কোটি ৯০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে বলে মন্ত্রণালয় কমিটিকে জানিয়েছে।