বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
Sex Cams
সর্বশেষ সংবাদ
সৈয়দ আফসার উদ্দিন এমবিই‘র ইন্তেকাল  » «   ছাত্রলীগের উদ্যোগে বিয়ানীবাজারে পথচারী ও রোগীদের মধ্যে ইফতার উপহার  » «   ইস্টহ্যান্ডসের রামাদান ফুড প্যাক ডেলিভারী সম্পন্ন  » «   বিসিএ রেস্টুরেন্ট কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এনএইচএস এর ‘টকিং থেরাপিস’ সার্ভিস ক্যাম্পেইন করবে  » «   গ্রেটার বড়লেখা এসোশিয়েশন ইউকে নতুন প্রজন্মদের নিয়ে কাজ করবে  » «   স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের দোয়া ও ইফতার মাহফিল  » «   কানাডা যাত্রায়  ইমিগ্রেশন বিড়ম্বনা এড়াতে সচেতন হোন  » «   ব্রিটিশ রাজবধূ কেট মিডলটন ক্যানসারে আক্রান্ত  » «   যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজাবাসীদের সাহায্যার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের অনুদান  » «   বড়লেখায় পাহাড়ি রাস্তা সম্প্রসারণে বেরিয়ে এলো শিলাখণ্ড  » «   মাইল এন্ড পার্কে ট্রিস ফর সিটিস এর কমিউনিটি বৃক্ষরোপণ  » «   রয়েল টাইগার্স স্পোর্টস ক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন  » «   গোলাপগঞ্জ স্যোশাল এন্ড কালচারাল ট্রাস্ট ইউকে’র সাধারণ সভা ও নির্বাচন সম্পন্ন  » «   যুক্তরাজ্যবাসি  সাংবা‌দিক সাইদুল ইসলামের পিতা আব্দুল ওয়াহিদের ইন্তেকাল  » «   ইউকে বাংলা রিপোটার্স ইউনিটি‘র নতুন কার্যকরী কমিটির অভিষেক  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

ব্রিটেনের ব্রেক্সিট বিজয়



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বহু জল্পনা-কল্পনা আর আলোচনা-বিশ্লেষণের পর অবশেষে জট কেটেছে ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তির। বড়দিন উৎসবের মধ্যেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।গত বৃহস্পতিবার ক্রিসমাসের আগের দিন বহু প্রতিক্ষিত এ ‘ব্রেক্সমাক্স’ বার্তাটি দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

প্রায় অর্ধশতাব্দিকাল থেকে একীভূত ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসা নিয়ে গত চার বছর থেকেই চলছে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক বিতর্ক।  বিষশেত ফ্রান্স আর জার্মানের উপহাস-অবজ্ঞায় শেষপর্যন্ত ব্রিটেনের এমনকি ব্রেক্সিট বিরোধীদের একটা বড় অংশই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ‘নো-ডিল’ চুক্তির পক্ষে কথা বলেছে। সাধারন মানুষ চেয়েছে নো-ডিল হলেও ব্রিটেন বেরিয়ে আসুক, তার নিজস্ব সার্বেভৌমত্ব আর স্বীয় সত্ত্বা নিয়ে।সকল বিতর্কের অবসান না হলেও যা হয়েছে, তার জন্য প্রস্তুত ছিল না ব্রিটেনের নাগরিকরা।

ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ব্রিটেনের বিচ্ছেদ ইস্যুকে  প্রথম থেকেই মেনে নিতে পারে নি।এবং সেজন্যই ব্রিটেনের বিচ্ছেদ মুলত বিলম্বিত হচ্ছিল।আর সেকারনে ব্রিটেনের রাজনীতিতেও দ্রুত বিভিন্ন পরিবর্তন ঘঠতে থাকে । এই সাড়ে চার বছরে ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়ে ব্রিটেনের দুজন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।মধ্যবর্তী নির্বাচনও করতে হয়েছে ব্রিটেনকে।সত্যি বলতে ব্রিটেনের এই রাজনৈতিক অস্তিরতাকে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ‘এনজয়’ করেছে।কিন্তু বরিস ক্ষমতায আসার পর তার বুদ্ধিবৃত্তিক ‘পাগলামো’  দিয়ে ব্রিটেনকে এক নতুন প্রাণ দিয়েছেন।তিনি যে কোন ধরনের লোকসানের বিনিময়ে হলেও ব্রেক্সিট করবেন বলেই অঙ্গীকার করলে ইউোপীয়ান ইউনিয়ন যেন আরও খড়গ হাতে নেয়। কিন্তু বরিসের দৃঢ়তায় কোন ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয় নি, বরং ৩১ মে ডিসেম্বর বিচ্ছেদ হবে বলেই তিনি দৃঢ় উচ্চারণ করেন।  মাত্র দুসপ্তাহ আগেও ব্রিটেনের নাগরিকদের যে কোন ধরনের চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের জন্য প্রস্তুত থাকতে আহবান জানান।বিটিশ নাগরিকরা অনেকটা হতাশার মাঝেই ছিল এবং তাই প্রধাননমন্ত্রীর ‘নো-ডীল অন দ্যা টেবিল’ থিয়োরীকে খুব একটা নেতিবাচক হিসেবে নেয় নি।এই সময়ের মাঝেও ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন চেয়েছে ব্রেক্সিট বিলম্বিত করার। কিন্তু বরিস জনসন এবং তার সরকার ছিল অনড়।

বিশেষত ফ্রি বাণিজ্য নিয়ে ব্রিটেনকে বার বার ভয় দেখিয়ে একটা ভীতিজনক অবস্থায় ফেলে দেয়া হয়েছিল।বাণিজ্যে শুল্ক কিংবা কোটা আরোপের কার্ড ছিল তাদের হাতে । অন্যদিকে ব্রিটেনের সমুদ্র এলকায় মাছ ধরাটা ছিল ইউরোপীয়ান দেশভুক্ত দেশগুলোর একটা প্রধান বিষয়। বিলিয়ন-বিলিয়ন পাউন্ডের বাণিজ্য এখানে।বরিস সমুদ্র সীমাকে ব্যবহার করেছেন তাঁর দেশের ট্রাম্প কার্ড হিসেবে।ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন অনেক দেন-দরবার করেও ব্রিটেনকে তার অবস্থান থেকে নড়াতে পারে নি। । মাছ শিকারের ইস্যুতে ব্রিটেনও কোন ছাড় দিতে রাজ হয় নি । এমনকি মাত্র কয়েকদিন আগে তিনি হাজারের উপর মানুষ নিয়োগ দিয়েছেন তার সমুদ্রসীমায়।

সত্যি বলতে কি, ইইউ’র যে প্রধান কার্যালয় ব্রাসেলস ধরনা দিতে হয়েছে ব্রিটেনকে বছরের পর বছর, সেই ইইউ’র নেতা আরসোলা শেষপর্যন্ত ব্রিটেনে এসেই একটা সম্মানজনক এবং গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌছলেন বিচ্ছেদ ঘঠার মাত্র এক সপ্তাহ আগে।এই বিচ্ছেদে বরিস উৎফুল্ল, এমনকি ব্রিটেনের নাগরিকরাও মনে করছেন সরকারের এ এক বড় ধরনের জয়। এই চুক্তিতে ব্রিটেন যে বড় ধরনের বিজয় পেয়েছে, তা নয়। ব্রিটেনকেও ছাড় দিতে হয়েছে। যুক্তরাজ্য এবং ইইউ’র মধ্যে বাণিজ্যে নতুন করে কোনও শুল্ক বা কোটা আরোপ হচ্ছে না, সেটা নিশ্চিত করেছে দুই পক্ষই।এটা যুক্তরাজ্যের একটা বড় ধরনের চাওয়া ছিল। তারপরও ব্রিটিশ রপ্তানিকারকরা বেশ কিছু নতুন নীতির সম্মুখীন হবেন, যার ফলে ইউরোপে ব্যবসা করা তাদের জন্য আগের চেয়ে কিছুটা কঠিনই হবে। তবুও এটা বলতেই হয়, আলোচিত বাণিজ্যিক চুক্তি বিশেষত শুল্কমুক্ত পণ্য আদান-প্রদানের চুক্তিতে ব্রিটেন একটা বিজয় পেয়েছে। ফিসিং এ ছাড় দেয়ায় ব্রিটেনের খুব একটা হারানোর কিছু নেই। ইইউ-যুক্তরাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলোর একটির চুক্তি অনুসারে, যুক্তরাজ্যের নৌযানগুলো আগামী পাঁচ বছর ব্রিটিশ জলসীমায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের শিকার করা মাছের ২৫ শতাংশ নেবে। এর মূল্য হতে পারে ১৪৬ মিলিয়ন পাউন্ড। আলোচনার শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের দাবি ছিল ৮০ শতাংশ নেওয়ার। অর্থাৎ, চুক্তির জন্য তারা এই ক্ষেত্রটিতে বড় ছাড় দিয়েছে।

যুক্তরাজ্য বিদ্যুৎ আমদানির ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল।ব্রিটেনের ৮ শতাংশ বিদ্যুত আসে অন্য দেশ থেকে। সেক্ষেত্রে সংযোগকারী বৈদ্যুতিক লাইনের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা ব্রিটিশদের জন্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তিতে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত রাখারও গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। তবে দুই পক্ষের কেউ যদি ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ভঙ্গ করে, তাহলে বাণিজ্য চুক্তিটি বাতিল হতে পারে।

যদিও আরও কিছুদিন পরই হয়ত দেখা যাবে কি আসছে সম্পুর্ন চুক্তিতে। মাত্র ৩৪ পৃস্টায় চুক্তির মুল কথাগুলো উঠে এসেছে, যেখানে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য নীতি ছাড়াও বাণিজ্যকি পণ্যের উৎস নীতি, পণ্য বিক্রির পরীক্ষা ও ছাড়পত্র, আর্থিক সেবা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, ভবিষ্যৎ বিরোধ নিষ্পত্তি, বিমান ও লরী চলাচল, জ্বালানী, ও তথ্য প্রবাহের মত গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে। তবে কোন কোন বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, কে কতটা ছাড় দিয়েছে তা কদিন পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে। যুক্তরাজ্যের প্রধান বাণিজ্যিক সমঝোতাকারী লর্ড ফ্রস্ট জানিয়েছেন, চুক্তির ১ হাজার ৫০০ পৃষ্ঠার নথি শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।

এসব কিছু মিলিয়ে ব্রিটিশ নাগরিকদের মাঝে একটা স্বস্তি আছে। গণভোটে যেমন ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকাংশই চেয়েছিল বিচ্ছেদ এবং পরবর্তীতে নির্বাচনেও ব্রেক্সিট ইস্যুটি বরিস জনসনকে সরকার গঠনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে।গত কবছরে ইউরোপ থেকে বিপুল সংখ্যক জনগুস্ঠির ব্রিটেনে প্রবেশ ব্রিটেনের সামাজিক ক্ষেত্রে কিছুটা বিঘ্ন সৃস্টি করেছে; বিশেষত স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রভৃতিতে দৃশ্যমান সংকটের জন্য ব্রিটিশদের একটা বড় অংশই ইউরোপীয়ান নাগরিকদের ব্রিটেনে স্থায়ী অভিবাসনকে দায়ী করেছে ।  ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের অভিবাসন নীতির কারণে ব্রিটিশরা মনে করত, তাদের সীমান্ত উন্মুক্ত হয়ে আছে।এবং এসব অভিযোগ প্রকাশ্যেই উচ্চারিত হয়েছে ইতিপূর্বে।

আর এসব কারণে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীও তাঁর ক্রিসমাসের পুর্বের দিন অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর ব্রেক্সিট বিজয়ে তাঁর উৎফুল্ল হৃদয়ের বহিপ্রকাশ ঘঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এখন থেকে ব্রিটেন তার আইন, অভিবাসন, সংস্কৃতি তারাই নিয়ন্ত্রন করবে।৩১ শে ডিসেম্বর থেকে এমনকি দেশটির সার্বভৌমত্বও না-কি তাদের হবে।বাণজ্যি নীতিতে স্বাধীনতা আসবে, জলসীমার নিয়ন্ত্রণ তারা ফিরে পাবে, ফিরে পাবে সামুদ্রিক সম্পদ, এমনকি দেশটির নাগরিকদের একটা বড় অংশও মনে করছে ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যি দিয়ে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারটুকও তারা পুনঃনিয়ন্ত্রনে এনেছেন।সেজন্য ক্রিসমাসের আগের দিনে ব্রিটেনের এই বিজয়কে ‘ব্রেক্সমাক্স’ হিসেবে উল্লেখ করে ক্রিসমাসের মতই উদযাপনের একটা অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছে ব্রিটেনের ট্যবলওয়েড ডেইলি মিরর।

তবে ব্রিটেন যে ইউরোপের বন্ধুপ্রতিম একটা রাষ্ট্র, তা-ও তিনি স্বীকার করে বলেছেন, সংস্কৃতি-চেতনা-আবেগ-ঐতিহ্যের মাঝে ব্রিটেন এবং সকল ইউরোপীয়ানভুক্ত দেশগুলোর সাদৃশ্য আছে । সেজন্য আগামীর দিনগুলোতে বন্দুত্বপুর্ন সম্পর্কে কোনই ফাটল ধরবে না, বরং আরও দৃঢ় হবে।এটাই প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় ধ্বনিত হয়েছে।

বিচ্ছেদ মানে সুখকর কিছু নয়। সকল বিচ্ছেদেই কিছু না কিছু হতাশা থাকে।বিচ্ছেদে কোন পক্ষই হয়ত শতভাগ জয়ী হতে পারে না। কিন্তু কিছু কিছু বিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে উঠে। ব্রিটেনের জন্য তা ছিল সেরকমই। এবং সেজন্য ছাড় দিলেও ব্রিটেন মনে করছে, তারা তাদের দাবী-দাওয়ার বড় অংশই তারা নিয়ে আসতে পেরেছে। ব্রিটেনসহ ইউরোপের এই ভয়াল করোনাকালীন সময়ে ব্রিটেন তাদের এই বিজয়কে ‘ব্রেক্সমাক্স’ হিসেবে উদযাপন করতেই পারে, যা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ২৪ ডিসেম্বর তাঁর রাষ্ট্রীয় ভাষনে।

ফারুক যোশী : কলাম লেখক, প্রধান সম্পাদক; ৫২বাংলাটিভি ডটকম

 

লেখকের পূর্ববর্তী কলাম

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য এবং মৌলবাদীদের উত্থান-আস্ফালন


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক