সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
প্রধান উপদেষ্টাকে সংগ্রামের গল্প শোনালেন ১৫ উদ্যোক্তা  » «   ‘ভুইফোঁড়’ সংগঠনের দাবিতে গ্রাফিতি সরানো হল কেন? সমাবেশে প্রশ্ন  » «   সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে আওয়ামীপন্থিদের জয়  » «   ইমরান খান ও স্ত্রী বুশরা বিবির ১৪ বছরের কারাদণ্ড  » «   প্রতিদিন ফ্যাসিবাদ পুনরুৎপাদিত হচ্ছে: সলিমুল্লাহ খান  » «   বন্ধু নেতানিয়াহুকে বিদায়লগ্নে উপায় খুঁজতে বললেন বাইডেন  » «   শিশুর বাম চোখের পরিবর্তে ডান চোখে অস্ত্রোপচার, চিকিৎসক গ্রেফতার  » «   ‘মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত’ বাবর ১৭ বছর পর কারামুক্ত  » «   সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে মামলা  » «   ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর স্ত্রীসহ গ্রেফতার  » «   জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট: আপিলে খালেদা-তারেকসহ সবাই খালাস  » «   বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের অবমানননা ও লাঞ্ছনার তীব্র প্রতিবাদ  » «   অফস্টেডে ‘আউটস্ট্যান্ডিং’ টাওয়ার হ্যামলেটস : সরকারের রিপোর্ট বলছে, “শিশুরা পায় চমৎকার সহায়তা”   » «   সাত বছরের শিশুর ধর্ষণের বিচারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে এক মা  » «   বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষ কর্মী নিতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি আহ্বান  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

 ভারতবর্ষে মুসলিমদের উত্তরণ কোন পথে?



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

“আমি সাম্প্রদায়িক নই।” কথাটির মধ্যেও সুপ্ত থাকে এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সাম্প্রদায়িকতা! অনেকটা “ঠাকুর ঘরে কে? আমি কলা খাইনি ; ধরনের। কে কবে কোন মুসলিম হত-দরিদ্রকে এক বেলা ভাত খাইয়েছিলেন, কিংবা বারান্দায় বসার জায়গা দিয়েছিলেন, সেই কথার পুনরাবৃত্তি করে প্রতিবেশীর হক যে আদায় হয় না, তা বলা-ই বাহুল্য! বীরবলের পদ্ধতির মতোই, নিজেদের উদারতার সম্মুখায়ন ঘটিয়ে প্রতিবেশীকে খাটো করার এ-এক সহজ পদ্ধতি! এই আখ্যান বাংলা কথা সাহিত্যের ঊষালগ্ন থেকেই আমরা শুনে শুনে অভ্যস্থ হয়ে গেছি!

উনিশ শতকের ত্রিশ/চল্লিশের দশক থেকেই ভারতবর্ষে বিশেষত বাংলায় মুসলমানদের পতন সূচিত হতে থাকে। ফার্সি ভাষাকে রাজভাষা-এর স্বীকৃতি বাতিল করা হয় ১৮৩৭ সালে। ১৮৪৪ সালে লর্ড হার্ডিঞ্জ ঘোষণা করেন, ইংরেজি ভাষায় যাঁদের উপযুক্ত ডিগ্রি আছে, কেবল তাঁরাই সরকারি চাকরিতে নিযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। ফলে, ইংরেজি জ্ঞানশূন্য ফার্সি জানা কর্মচারীদের চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হল। তারও আগে, অর্থাৎ পলাশীর যুদ্ধের পরপর নবাব সিরাজ-উদ-দ্দৌলাহর বিশাল সেনাবাহিনী থেকে ৮০ হাজার মুসলিম সৈন্যকে বরখাস্ত করে মুসলিমদের সামরিক বনিয়াদ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। তা ছাড়াও, ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, ১৮২৮ সালে বাজেয়াপ্ত আইনে নিষ্কর ভূমির রায়তিস্বত্ব লোপ ; ১৮৩৫ সালের শিক্ষা সংক্রান্ত লর্ড টমাস ব্যাবিন্টন মেকলের আইন প্রভৃতি মুসলিমদের প্রতিকূলে গিয়েছিল! মুসলিমদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিল ব্রিটিশরা। ফলে, বলতে গেলে উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে আক্ষরিক অর্থে মুসলিমদের পতনের শুরুয়াত! অর্থাৎ শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে যাঁরা ছিলেন কেন্দ্রে, রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর তাঁরা-ই চলে গেলেন পরিধিতে! পাশাপাশি, ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে বাঙালি কেরানিকুল সৃষ্টির লক্ষ্যে স্থাপিত হল ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। হিন্দুরা ইংরেজি শিক্ষাগ্রহণ করে ১৮৪৪ সালে লর্ড হার্ডিঞ্জের নতুন চাকরিনীতির ফায়দা তুলতে সক্ষম হলেন! মুসলিমদের পশ্চাদপদতার সেই শুরু! ঘৃণায়, অভিমানে ব্রিটিশদের প্রবর্তিত ইংরেজি শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন মুসলমান! নাম লেখালেন অন্ত্যেবাসীর খাতায়! পরিচিত হলেন প্রান্তিকায়িত বলে!

ইদানীং কেউ কেউ সমাজ ও রাজনীতির একাল ও সেকাল বোঝাতে বা স্পষ্ট করে বললে, “সাম্প্রদায়িক নই” বা “বর্ণবাদী নই”-এর নমুনা তুলে ধরতে এমন কিছু প্রসঙ্গের অবতারণা করছেন, যেগুলোর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প-উপন্যাসের খণ্ডচিত্র ধরা পড়ছে। উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষের সাত দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পরও ভারতবর্ষের মুসলিমদের বিশেষত বাংলাভাষী মুসলিমদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন যে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মতো হয়নি, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সাচার কমিশনের রিপোর্ট-ই তার প্রমাণ। তবে, সব যুগে ব্যতিক্রম যে ছিল না বা নেই, তা অস্বীকার করারও উপায় নেই। সেই ব্যতিক্রম খোঁজার জন্য যে সময় ও শ্রমের দরকার, তা অনেকেরই নেই। ছিলও না। হয়তো সদিচ্ছাও ছিল না! তাই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প-উপন্যাসেও এরকম অনেক মুসলিম চরিত্রের দেখা মেলে, যারা আক্ষরিক অর্থেই প্রান্তিকায়িত!

উচ্চশিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত মুসলিমদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ওঠা-বসা থাকলেও তাঁর গল্প-উপন্যাসে আশ্চর্যজনকভাবে তাঁরা অনুপস্থিত! যেমন, “চা আনলে মুসলমান খানসামা।” “চা’টা ঢেলে দাও-না মোবারক, ঠাণ্ডা হয়ে গেল যে।”(ল্যাবরেটরি) “মা-মেয়ের সংঘাত যখন চরমে চলছে, তখন তার বিশ্বস্ত দারোয়ান নাসেরউল্লাকে দরজায় হাজির থাকার নির্দেশ দিয়ে রেখেছে সোহিনী।”(ল্যাবরেটরি)”লোকের কাছে যদি সমস্ত খুলিয়া বলা আবশ্যক মনে কর তো বলিয়ো, অছিমদ্দি তোমার ভাই হয়, আমার পুত্র।” (সমস্যাপূরণ) অছিমদ্দি বিশ্বাস মির্জা বিবির গর্ভজাত জমিদার কৃষ্ণগোপালের অবৈধ সন্তান!
“ময়লা টুপি আর তেলকালিমাখা নীলরঙের জামাইজের পরে বারন কোম্পানির কারখানায় প্রথমে মিস্ত্রিগিরি ও পরে হেডমিস্ত্রির কাজ পর্যন্ত চালিয়ে দিয়েছে। মুসলমান খালাসিদের দলে মিশে চার পয়সার পরোটা আর তার চেয়ে কম দামের শাস্ত্রনিষিদ্ধ পশুমাংস খেয়ে ওর দিন কেটেছে সস্তায়। লোকে বলেছে, ও মুসলমান হয়েছে ; ও বলেছে, মুসলমান কি নাস্তিকের চেয়েও বড়ো?” (রবিবার)
“তখনই আমার মুসলমান ভৃত্য প্রজ্বলিত কেরোসিন ল্যাম্প হাতে করিয়া ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল।” (ক্ষুধিত পাষাণ)

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অমুসলিম লেখকদের রচনায় মুসলিমরা এর চেয়ে উঁচু বা সম্মানের স্থান বাংলা সাহিত্য তথা সমাজে সেরকমভাবে কোনওকালে পাননি! বঙ্কিমচন্দ্র তো “যবন”, “ম্লেচ্ছ” ইত্যাদি শব্দের শৈল্পিক প্রয়োগে তৃপ্তি অনুভব করতেন!
রবীন্দ্রনাথ শুধু তাঁর “মুকূট” নাটকে ঈশা খানকে মহিমান্বিত করতে পেরেছেন! “গোরা” র সবজিবিক্রেতাটিও সেই মুসলমান! ফরু সর্দার বা তার পুত্র তমিজও মুসলমান! ফরু সর্দার জেলে গেলে তার পুত্র তমিজের দেখভালের দায়িত্ব নেয় একটি নাপিত পরিবার! মেওয়াবিক্রেতা সেই কাবুলিওয়ালাটিও মুসলমান! নাম রহমত। “মণিহারা” গল্পের মাঝিটিও মুসলমান! এ-তো চাঁদের এক পৃষ্ঠ দেখলাম! অপর পৃষ্ঠটি অনুচ্চারিত!

মূল সমস্যা হচ্ছে, মুসলমানদের “সমকক্ষ” হওয়ার চেষ্টা করাটা-ই কাল! বা “সমকক্ষ” বলে স্বকপোলকল্পিত একটি ধারণা অনেকের মনে বদ্ধমূল হয়ে গেছে! বিশ শতকের প্রথমার্ধে যখনই মুসলমান “সমকক্ষ” বা “প্রতিদ্বন্দ্বী” হয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন, তখন-ই তাদের “পৃথক” করে দেয়ার পাঁয়তারা শুরু হল! শেষমেশ দেশভাগ করে একটা অংশ দেয়া হল তাঁদের, যাতে তাঁরা বৃহত্তর ভূখণ্ডে কোনও দাবি খাটাতে না-পারে! সেই ফর্মূলা কাজে লাগল! সিংহভাগ মেধাবী মুসলমান ভারত ছাড়লেন! দীর্ঘ পাঁচ/ছয় দশক শূন্যতার পর মুসলমানরা আবার যখন শিক্ষাদীক্ষায় অগ্রসর হয়ে একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব ঘটাতে যাচ্ছেন, তখন আবারও শুরু হয়েছে পুরনো খেলা! এবার আর দেশভাগ করে নয়। দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার পাঁয়তারা! মুসলমানরা ছাতা মেকার, টর্চলাইট মেকার, রিক্সাচালক, শ্রমিক, মিস্ত্রি, হকার, সবজি বিক্রেতা, কৃষক হলে উগ্র অসমিয়া জাতীয়তাবাদীরও আপত্তি নেই! সস্তায় শ্রম পাওয়া যাবে! তারাও খুশি! কিন্তু জনপ্রতিনিধি, সরকারি উচ্চপদস্থ চাকরি! নৈব নৈব চ!

আমাদের বাড়িতে বারই পাড়ার দরিদ্র টেইলার পরিমলদা এলে বাড়ির মহিলারা উচিত দামের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিকই দেন! তাঁর অবাধ প্রবেশাধিকার! বিপত্নীক  পরিমলদার স্ত্রীর অসময়ে মৃত্যুতে আমাদেরও চোখ ছলছল  করে! কিন্তু সমাজ বাস্তবতার তেমন কোনও হেরফের হয় না!

০৪ অক্টোবর, ২০২০
লেখক: কবি,গবেষক ও শিক্ষাবিদ । প্রকাশক, দৈনিক নববার্তা প্রসঙ্গ। করিমগঞ্জ। অসম।

আরও পড়ুন:

ইলবার্ট বিল ও বর্তমান বাস্তবতা

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক