প্রায় দু’টি ফুটবল মাঠের সমান একটি ছবি। আয়তনে ১৮০০ বর্গ মিটারের বেশি। আকা হয়েছে হোটেলের বল রুমে। সম্ভবত বিশ্বের সব থেকে বড় ক্যানভাসে ছবি আঁকার রেকর্ড-ও এটি।
এই কাজটিতে জড়িয়ে আছে মহাকালের একটি বিশেষ সময়ও । তা হলো- করোনাকাল। লকডাউনে দুবাই আটকে পড়েছিলেন ব্রিটিশ চিত্রকর সাচা জাফরি। আর সেখানেই রঙ তুলি আর নিজের মেধা-মনন ও শ্রম দিয়ে তৈরী করেছেন বিশ্বসেরা একটি ক্যানভাস।
দুবাইয়ের আটলান্টিস হোটেলের বলরুমে বিশাল এই ছবি আঁকছেন- সাচা জাফরি। নাম দিয়েছেন ‘দ্য জার্নি অব হিউম্যানিটি’। ইতিমধ্যে বহুল উচ্চারিত হচ্ছে, ব্রিটিশ চিত্রকর সাচা জাফরির ‘দ্য জার্নি অব হিউম্যানিটি’ হচ্ছে রঙ-তুলিতে হাতে আঁকা বিশ্বে সব থেকে বড় ক্য়ানভাস। তার এই আঁকার পরিকল্পনাটিও অনেক মৌলিক।
করোনা সময়ে অসম্ভব ভালো এই সৃষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে দুবাইয়ের নাম। এ বছর মে মাসে এই ছবি আঁকা শুরু করেন জাফরি। অগুনতি রঙের মিশ্রণে এই ছবির কাজ খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন জাফরি।
এই বিশাল ছবিটি আঁকছেন ৬০টি অংশে। সবগুলো চুড়ান্ত হয়ে গেলে, ৬০টি অংশে বিভক্ত করে- আলাদা আলাদা করে ফ্রেম করা হবে ‘দ্য জার্নি অব হিউম্যানিটি’। ক্যানভাসে থাকছে পাহাড়, নদী, সমুদ্র প্রকৃতি ও , মানবিকতার প্রতিকী অসংখ্য দৃশ্য।
এই কাজে সাচা জাফরি করেছেন আরেকটি আলোজাগানিয়া কাজ। ২ থেকে ১৮ বছর বয়েসীদের আকা অসংখ্য ছবি সংগ্রহ করে প্রথম লেয়ারে যুক্ত করেছেন। এবং শিশুদের প্রেরণা দিতে নাম দিয়েছেন- ‘স্মাইল ইন ফেইস।’ আটলাটাস এট পাম এ অনবদ্যকাজে সময় লাগছে ৮ সপ্তাহ।
সাচা জানিয়েছেন, ৩০টি পেনালে, তিনটি সেকশনে, ৪শত লেয়ারে ছবি আকছেন তিনি। এবং প্রথম সেকশনের নাম দিয়েছেন – ‘এরাইভেল অফ হিউমেনিটি’। যা দিয়েই শুরু – গিনিস বুকে নাম লেখানো ক্যানভাস ‘জানি অফ হিউম্যানিটি’।
ব্রিটিশ চিত্রকর সাচা জাফরির নাম শিল্প মহলে নতুন নয়। তিনি নেলসন মেন্ডেলা, বারাক ওবামা, ম্যাডোনা, শেখ মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাকতূম সহ বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের ছবি এঁকে অনেক আগেই খবরে উঠে এসেছেন।
প্রকৃতি ,মানুষ ও মানবিকতা নিয়ে তার কাজে রয়েছে অগাধ মমতা। নিজের খ্যাতি ও সৃষ্টিকর্ম দিয়ে কাজ করছেন বিশ্বের বঞ্চিত, নিপীড়িত ও নিডি মানুষদের জন্য। তার আকা ছবি এবং এর বিক্রিত অর্থ চ্যারিটেবল সংগঠনে দান ও মানবিক কাজে সম্পৃক্ততার জন্য বহুল প্রসংশিত অনেক আগ থেকেই।
সাচা জাফরি জানিয়েছেন, ক্যানভাসটি নিলামে বিক্রি করে শতভাগ টাকা ব্যয় করা হবে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র শিশুদের লেখাপড়া ও জীবন মান উন্নয়নে। এছাড়াও করোনা সময়ে ইমাজেন্সি সার্ভিসেস, কেয়ারাস ও ফ্রন্ট লাইন ফাইটারসদের জন্যও ব্যয় হবে টাকা।
শিল্পবোদ্ধারা ইতিমধ্যে তার কাজটিকে সাধুবাদ জানিয়ে বলছেন- সাচা জাফরির এবারের সৃষ্টিকমটিও হয়তো ছাড়িয়ে যাবে অতীতের সব রেকড। আগামী ডিসেম্বরে দুবাইয়ে তাঁর এই ছবি নিলাম হবে। আশা করা হচ্ছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকায় ছবিটি বিক্রি হবে, যা ‘হিউম্যানিটি ইনস্পায়ার্ড’ নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় দান করা হবে।