করোনা থেকে মুক্তি পেতে ভ্যাকসিনের দিকেই তাকিয়ে আছে পুরো বিশ্ব। এর মধ্যেই রাশিয়া জানিয়েছে, আগামী ১২ আগস্টই চলে আসছে তাদের তৈরি ভ্যাকসিন। তবে ভ্যাকসিন নিয়ে রাশিয়ার এমন ঘোষণা বিশ্বকে অবাক করলেও এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নির্ভরশীলতার পথে হাঁটছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন। ইতোমধ্যেই এই ভ্যাকসিনের বেশ কয়েক ধাপের কাজ সফল হয়েছে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে আসছে এই ভ্যাকসিন। তার আগেই সুখবর দিল গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গ্যাভি)। বিশ্বের নিম্ন ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে ভ্যাকসিন সহায়তা দিয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠান। তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশসহ ৯২টি দেশ এই ভ্যাকসিন পাবে।
বিভিন্ন দেশে করোনার ভ্যাকসিন সুষ্ঠুভাবে পৌঁছে দিতে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া, গ্যাভি এবং বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মধ্যে চুক্তি হয়েছে।
এই চুক্তির অন্যতম কারণই হলো, অনুন্নত দেশগুলোতে গরিব মানুষদের কাছে যেন খুব সস্তায় ভ্যাকসিনটি পৌঁছে দেওয়া যায়। অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিনের প্রতি ডোজের দাম হতে পারে ৩ ডলার। অর্থাৎ ভারতীয় টাকায় এর মূল্য হবে মাত্র ২২৫ রুপি। আর বাংলাদেশি টাকায় এর দাম হবে ২৫৫ টাকার মতো।
৯২টি দেশে ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে ১০ কোটি ভ্যাকসিন তৈরির জন্য গ্যাভি এবং বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের মধ্যে ১৫ কোটি ডলারের চুক্তি হয়েছে। আর ভ্যাকসিন সরবরাহের দায়িত্বে থাকবে সিরাম ইন্সটিটিউট।
শুধু অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনই নয়, ভারতের আইসিএমআর-ভারত বায়োটেকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি কো-ভ্যাকসিন, জাইডাস ক্যাডিলার জাইকোভ-ডি, মডার্না, ফাইজারের মতো সংস্থাও ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করে চলেছে। কিন্তু সারাবিশ্বে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটিকেই আপাতত সবচেয়ে এগিয়ে রেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছেও এগিয়ে এই ভ্যাকসিন। এমনকি অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল ব্যাপক হারে ভারতেও হবে বলেও জানানো হয়েছে।
সিরামের কর্ণধার আদর পুনাওয়ালা শুক্রবার এক টুইট বার্তায় বিল গেটসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গ্যাভি এবং বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়েছে। ভ্যাকসিনের ১০০ মিলিয়ন ডোজ দ্রুত প্রস্তুত করার জন্যই এই চুক্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তার মতে, ভ্যাকসিনের দাম যতটা সম্ভব কম রাখা হবে, যাতে সকলের আয়ত্তের মধ্যে হয়।
এদিকে, গ্যাভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সেথ বার্কেল বলেন, শুধু ধনী দেশগুলোই যদি সুরক্ষিত হয় তাহলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, শিল্প ও সমাজ মহামারির কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। এমনটা যেন ঘটতে না পারে সেজন্যই আমাদের এই পদক্ষেপ। শুধু কয়েকটি ধনী দেশ নয়, সব দেশের জন্যই ভ্যাকসিন উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।
তিনি আরও বলেন, আমরা বহুবার দেখেছি যে, ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো নতুন চিকিৎসাসেবা, রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং নতুন ভ্যাকসিন পাওয়ার দৌঁড়ে পেছনে পড়ে থাকে। কিন্তু করোনার ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে আমরা এমনটা হতে দিতে চাই না।