বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
ধর্মীয় উগ্রবাদ ঠেকাতে না পারলে ফের গণতন্ত্রের কবর হবে: তারেক রহমান  » «   জাতীয় পার্টির ইফতারে হামলা: দেশ ধ্বংসের মুখে চলে যাচ্ছে, এই সরকার দ্রুত বিদায় নিলেই মঙ্গল: জি এম কাদের  » «   আবার ‘জিয়া উদ্যান’ হলো ‘চন্দ্রিমা উদ্যান’  » «   বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিসৌধে বাবার নাম ‘চান না’ সিলেটের আতাউর  » «   মহাসড়কে প্রবাসী গাড়ি টার্গেট করে ডাকাতি : নজরদারি বাড়ানের দাবি, অতিরিক্ত ৭০০ পুলিশ মোতায়েন  » «   রাজধানীতেই আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়! অনুমোদন পেল ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’  » «   আরসা প্রধান জুনুনিকে গ্রেপ্তারের দাবি র‌্যাবের  » «   হিন্দুদের ওপর আক্রমণ ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক: মার্কিন সিনেটরকে প্রধান উপদেষ্টা  » «   দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেলসেতুর উদ্বোধন  » «   বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন: তুলসী গ্যাবার্ড  » «   রেমিটেন্সের নামে এক ব্যক্তি এনেছেন ৭৩০ কোটি টাকা!  » «   সিলেটে ভালোবাসায় সিক্ত হামজা চৌধুরী, বললেন, ‘ইনশাল্লাহ আমরা উইন খরমু’  » «   এমসি কলেজে ধর্ষণের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালেই  » «   জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরে এক ঢিলে তিন পাখি  » «   অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের আরেকটি দল আসছে, নেতৃত্বে শিবিরের সাবেকরা  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ: চেয়ারম্যান পদ অস্বীকার, দাম্পত্যে ফাটল



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল দুপুরে। কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে বারবারই অস্বীকার করছিলেন যে তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান নন। এ বিষয়ে বিকেলে ডিসি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিসি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জিজ্ঞাসাবাদের একাংশ তুলে ধরেন। জিজ্ঞাসাবাদে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতেই আটকে যান ডা. সাবরিনা।

ডিসি হারুন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে উনাকে (ডা. সাবরিনা) প্রশ্ন করা হলো, ‘আপনি কি জেকেজির চেয়ারম্যান?’ উনি বললেন, ‘না, আমি কখনোই চেয়ারম্যান না।’

‘আমি (ডিসি হারুন) বললাম, কয়েক দিন আগেই তো আপনাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বহিষ্কার করলো। তাছাড়া আপনি তিতুমীর কলেজের ঘটনায় দাঁড়িয়ে জেকেজির পক্ষে কথা বললেন, মুখপাত্র হিসেবে, চেয়ারম্যান হিসেবে কথা বললেন। সেটা কী ছিল?’

উত্তরে সাবরিনা বলেন, ‘সেটা আমার হাসব্যান্ড (জেকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরী) আমাকে বলতে বলেছিল।’

জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে ডিসি হারুন বলেন, জেকেজির কর্মকাণ্ড ও তার কর্মকাণ্ড নিয়ে আরও কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। আমরা মনে করি, যে কোম্পানি মানুষকে ক্ষতি করছে, যারা করোনা নেগেটিভকে পজিটিভ আর পজিটিভকে নেগেটিভ বানাচ্ছে, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে সেই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে আমরা তাকে গ্রেফতার করি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, যেহেতু তিনি (ডা. সাবরিনা) একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, তিনি কোনোভাবেই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান থাকতে পারেন না, আবার চেয়ারম্যান থাকাকালীন সেই কোম্পানির মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দিতে পারেন না। উনি যেহেতু ফেসবুকেও জেকেজির পক্ষে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন তাই জেকেজির কর্মকাণ্ডের দায়দায়িত্ব তিনি এড়াতে পারেন না। এ কারণেই তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে আনা হচ্ছে।

যেভাবে এলো ডা. সাবরিনার নাম

ডিসি হারুন বলেন, ২২ জুন জেকেজির সাবেক গ্রাফিক্স ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে আটক করে পুলিশ। হিরু আমাদের জানায়, সে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেটের ডিজাইন তৈরি করতো। এই ভয়ানক তথ্য জানার পর আমরা তাকে জিজ্ঞেস করি এর সাথে কারা জড়িত। সে স্বীকার করেছে, কোর্টেও ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে যে ভুয়া রিপোর্টের সাথে জেকেজি গ্রুপের লোকজন জড়িত।

ডিসি হারুন বলেন, তখন জেকেজির সিইও আরিফুলসহ চারজনকে আটক করি। গ্রেফতার সিইওকে আমরা জিজ্ঞেস করি, ‘এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কে?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী।’ এরপর একে একে ছয়জনই এক উত্তর দিলেন।

ডা. সাবরিনাকে গ্রেফতারে বিলম্ব কেন?

ডিসি হারুন বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আমরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছিলাম। তদন্ত কর্মকর্তা গ্রেফতারের জন্য একটু সময় নিয়েছে, যেহেতু সাবরিনা চৌধুরী একজন ডাক্তার, একজন সরকারি কর্মকর্তা।’

এর আগে রোববার দুপুর সোয়া ১টায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ (ডিসি) কার্যালয়ে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করেন জেকেজির প্রতারণা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ডিসিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দুই ঘণ্টা পর বিকেল সোয়া ৩টার দিকে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

কে এই ডা. সাবরিনা

ডা. সাবরিনা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক। পুলিশ বলছে, সাবরিনা জেকেজির চেয়ারম্যান। তবে সাবরিনা নিজেকে জেকেজির ‘চেয়ারম্যান নয়’ বরং প্রতিষ্ঠানটির ‘কোভিড-১৯ বিষয়ক পরামর্শক’ দাবি করেছেন।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সাবরিনা আরিফের চতুর্থ স্ত্রী। তার প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী রাশিয়া ও লন্ডনে থাকেন। তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে তালাক হয়েছে তার। চতুর্থ স্ত্রী ডা. সাবরিনার কারণেই করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজ পায় জেকেজি হেলথকেয়ার। প্রথমে তিতুমীর কলেজ মাঠে স্যাম্পল কালেকশন বুথ স্থাপনের অনুমতি মিললেও প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার অন্য এলাকা এবং অনেক জেলা থেকেও নমুনা সংগ্রহ করছিলেন তারা।

সূত্র আরও জানায়, ঢাকা, নায়ায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করেছিল সাবরিনা-আরিফ দম্পতির জেকেজি প্রতিষ্ঠান। নমুনা সংগ্রহের জন্য মাঠকর্মী নিয়োগ দেয়া ছিল। তাদের হটলাইন নম্বরে রোগীরা ফোন দিলে মাঠকর্মীরা বাড়ি গিয়েও নমুনা সংগ্রহ করতেন। আবার অনেককে জেকেজির বুথের ঠিকানা দেয়া হতো। এভাবে কর্মীরা প্রতিদিন গড়ে ৫০০ মানুষের নমুনা সংগ্রহ করতো।

পরে তাদের গুলশানের একটি ভবনের ১৫ তলার অফিসের একটি ল্যাপটপ থেকে ভুয়া সনদ দিত। ওই ল্যাপটপ থেকে জেকেজির কর্মীরা রাতদিন শুধু জাল রিপোর্ট তৈরির কাজ করতো। প্রতিটা সনদের জন্য নেয়া হতো পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিদেশিদের কাছ থেকে নেয়া হতো ১০০ ডলার। যদিও শর্ত ছিল বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহ করে সরকার নির্ধারিত ল্যাবে পাঠাতে হবে। কিন্তু তারা সব ধরনের শর্তভঙ্গ করে পরীক্ষা ছাড়াই রিপোর্ট দিত।

এদিকে ডা. সাবরিনা গণমাধ্যমে দাবি করেছেন, গেল মে মাসে স্বামী আরিফের সঙ্গে তার বিয়ে বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে বিচ্ছেদের কারণেই সাবরিনা জেকেজির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সে কারণেই তিনি নিজেকে চেয়ারম্যান না বলে প্রতিষ্ঠানটির কোভিড বিষয়ক পরামর্শক বলে দাবি করছেন। তবে অনেকেই বলছেন, ডা. সাবরিনাকে ব্যবহার করেই প্রতারণার সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন আরিফুর রহমান।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন