টেস্টের নামে মোটা অংকের টাকা নিয়েও করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে হৈচৈ ফেলে দেওয়া দৃশ্য দেশ ও দেশের মানুষকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে চিনিয়ে দিল করোনা মহামারীর চেয়ে কতটা ভয়াবহ বাংলাদেশের চিকিৎসা বাণিজ্যের প্রতিনিধি সাম্প্রতিক ৱ্যাবের হাতে সিলগালা হওয়া রাজধানী ঢাকার উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক ৩২ মামলার আসামি শাহেদ করিমদের বীরদর্পে ক্ষমতা প্রদর্শনের দাপট।
বহুমুখী প্রতারক শাহেদ দীর্ঘ অনেক বছর ধরে তার প্রতারণা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে আর ইদানীং বিভিন্ন টিভিতে মধ্যরাতের টকশোতে এসে নীতিবাক্য বলে নিজেকে বুদ্ধিজীবি এবং আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগ সেজে জাহির করছে।
বর্তমানে মোঃ শাহেদ/সাহেদ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকলেও তার আসল নাম কিন্তু মোঃ শাহেদ করিম, পিতাঃ সিরাজুল করিম, মাতাঃ মৃত সুফিয়া করিম। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। তার মা মৃত্যুবরন করেন ৬ নভেম্বর, ২০১০ সালে। প্রতারক শাহেদের একাধিক নাম রয়েছে। সে কখনো কখনো মেজর ইফতেকার আহম্মেদ চৌধুরী, কর্ণেল ইফতেকার আহম্মেদ চৌধুরী, কখনো মেজর শাহেদ করিম হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। কিন্তু তার আসল নাম জাতীয় পরিচয় পত্রে শাহেদ করিম লেখা। কিন্তু বর্তমানে সে মোঃ শাহেদ নামে আরেকটি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করছে যার নাম্বার হল- ২৬৯২৬১৮১৪৫৮৮৫। আর এ জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হয় ২৫-৮-২০০৮ইং। কিন্তু তাতে তার মা মারা গেছে লেখা রয়েছে, অথচ তার মা মৃত্যুবরন করেন ০৬ নভেম্বর ২০১০ইং। তাতেই প্রমাণ হয় এটাও ভুয়া।
ঠিকানা হরনাথ ঘোষ রোড, লালবাগ, ঢাকা-১২১১ রয়েছে। গ্রামের বাড়ী সাতক্ষীরা জেলায়। এক নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও প্রতারণা বাটপারি করে আজ শত শত কোটি টাকার মালিক। বিএনপি সরকারের আমলে রাজাকার মীর কাসেম আলী ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সাথে সর্ম্পক গড়ে তাদের মাধ্যমে তারেক জিয়ার হাওয়া ভবনের অন্যতম কর্তাব্যক্তি হয়ে উঠে সে।
শাহেদের বেশ কিছু প্রতারণার প্রমাণ তৎকালীন প্রভাবশালী ছাত্রদল নেতা বর্তমানে জাতীয় পার্টির সাংগঠিনক সম্পাদক সৈয়দ মঞ্জু , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাহসী ছাত্রলীগ নেতা এসএম হলের শামীম তথা শামীম আহমেদ এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পলাশ চৌধুরীর কাছে রয়েছে।
১/১১ ফকরুদ্দিন সরকারের সময় খাম্বা মামুনের সাথে সে ২ বছর জেলও খাটে। জেল থেকে বের হয়ে শাহেদ ২০১১ সালে ধানমন্ডির ১৫ নং রোডে এমএলএম কোম্পানী বিডিএস ক্লিক ওয়ান নামে বাটপারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। আর সেসময় তার নাম ছিল মেজর ইফতেখার করিম চৌধুরী।
তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় ২টি মামলা, বরিশালে ১ মামলা, বিডিএস কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরির নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণার কারনে উত্তরা থানায় ৮টি মামলাসহ রাজধানীতে ৩২টি মামলা রয়েছে।
অন্যদিকে, সে মার্কেন্টাইল কো- অপারেটিভ ব্যাংক বিমানবন্দর শাখা থেকে ৩ কোটি টাকা লোন নেয় আর সেখানে সে নিজেকে কর্ণেল (অব.) পরিচয় দিয়ে কাগজপত্র দাখিল করেন সে ব্যপারে আদালতে ২টি মামলা চলমান আছে। এ সম্পর্কে একুশে টিভি ২০১৫/১৬ সালে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করে।
এই প্রতারক মোঃ শাহেদ ওরফে মেজর/কর্ণেল ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী, ওরফে শাহেদ করিম, ওরফে মোঃ সাহেদ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও কর্তা ব্যক্তিদের কাছের লোক পরিচয় দিয়ে থাকে। প্রকাশ্যে অনেক মন্ত্রীর নাম ব্যবহার করেই মানুষকে হুমকি দিয়ে থাকে।
তার গাড়ীতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ও সাইরেনযুক্ত হর্ন ব্যবহার করে। সে নিজেকে কখনো মেজর, কর্ণেল, সচিব, এমনকি সে নাকি ৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর এডিসি ছিলো এমন পরিচয়ও দিয়ে থাকে। আবার কিছুদিন যাবৎ সে বিভিন্ন টিভিতে টকশোতে খুব নীতিবাক্য বলে।
বর্তমানে সে উত্তরাস্থ ১১ নং সেক্টরের ১৭ নং রোডে, বাড়ী নং-৩৮ একটি হাসপাতাল গড়ে তুলেছে যার কোন বৈধ লাইসেন্স নেই, যা র্যাব এর অভিযানেই প্রমানিত হয়েছে আর হাসপাতাল চালানোর মত কোন ডাক্তার, নার্স, যন্ত্রপাতি নেই তবুও দালালের মাধ্যমে টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগী ক্রয় করে এনে তাদের আটকিয়ে রেখে হাজার হাজার টাকা আদায় করে।
এছাড়াও প্রতারণার টাকায় সে উত্তরা পশ্চিম থানার পাশে গড়ে তুলেছে রিজেন্ট কলেজ ও ইউনির্ভাসিটি, আরকেসিএস মাইক্রোক্রেডিট ও কর্মসংস্থান সোসাইটি যদিও এর একটিরও কোন বৈধ লাইসেন্স নেই। আর অনুমোদনহীন আরকেসিএস মাইক্রোক্রেডিট ও কর্মসংস্থান সোসাইটির ১২টি শাখা করে হাজার হাজার সদস্যদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
এর আগেও সে উত্তরাস্থ ৪,৭ ও ১৩ নম্বর সেক্টরে ভুয়া শিপিংয়ের ব্যবসা করেছে সেই ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামেই সাধারন মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে মেরে দিয়েছে। বর্তমানে তার ভিজিটিং কার্ডে সে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান পরিচয় দেয়। কিছুদিন আগে সে একটি অস্ত্রের লাইসেন্সও নিয়েছে। অথচ অস্ত্রের লাইসেন্স করতে বাৎসরিক ন্যূন্যতম ৩ লক্ষ টাকা ইনকাম ট্যাক্স দেওয়া লাগে।
আমার জানামতে সে কোনদিনও ইনকাম ট্যাক্স দেয় না। শাহেদের প্রতারনা সর্ম্পকে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় ১১-১২-২০১৪ইং একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এবং অপরাধ জগত পত্রিকাও নিউজ করে। শাহেদের বেশ কয়েকটি গাড়ি রয়েছে সে গাড়িগুলোর কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। তার গাড়ীতে ভিভিআইপি ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড, অবৈধ ওয়ারল্যাস সেট আর অস্ত্রসহ ৩ জন বডিগার্ড থাকার কারনে সাধারণত পুলিশ তার গাড়ী থামাবার সাহস পায়না।
তার অফিসে লাঠিসোটা রাখা হয়। এমনিক তার অফিসের ভেতরে একটি টর্চার সেলও রয়েছে। কোন পাওনাদার টাকা চাইতে আসলে পাওনাদারদের সেখানে টর্চার করা হয়। তার অফিসে সুন্দরী মেয়েদের রাখা হয় বেশী আর অনেক সুন্দরীর সাথে তার অবৈধ সর্ম্পক রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে ৩২ টি মামলা রয়েছে দেশের বিভিন্ন থানায় এর মধ্যে ধানমন্ডি, মিরপুর, উত্তরায় বেশী সেগুলোর কয়েকটি মামলার নং- বাড্ডা- ৩৭(৭)০৯, আদাবর-১৪(৭)০৯, লালবাগ-৪৭(৫)০৯, উত্তরা ২০(৭)০৯, উত্তরা১৬(৭)০৯, উত্তরা ৫৬(৫)০৯, উত্তরা ১৫(৭)০৯, ৩০(৭)০৯, ২৫(৯)০৯, ৪৯(০৯)০৯, ১০(৮)০৯ সবগুলো মামণাআ ৪২০ ধারায়।
তার প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট কেসিএস লিঃ ইউসিবি ব্যাংক উত্তরা শাখায় একাউন্ট নং-০৮৩২১০১০০০০১০০০৩, রিজেন্ট হাসপাতাল লিঃ ইউসিবি ব্যাংক উত্তরা শাখায় একাউন্ট নং-০৮৩১১০১০০০০০০৬১৬, সহ ব্র্যাক ব্যাংক উত্তরাসহ বিভিন্ন ব্যাংকে শত শত কোটি রয়েছে।
বর্তমানে সে রিজেন্ট গ্রুপ ও কর্মসংস্থান সোসাইটি কেকেএসের নামে প্রতিষ্ঠান বাড়ী ১৬ রোড ১৭ সেক্টর ১১ উত্তরা ঢাকায় বসে সকল অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে তার রাজনৈতিক আচরণে বুঝিয়েছে যে,সে বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার। মধ্যরাতের বিভিন্ন টিভির টকশোতে এমন নীতিবাক্য বলেছে যা দেখে এখন হাসি পায়। যে নিজে মহাচোর আর সেই টকশোতে বসে অন্যকে বলে তুই চোর। অবাক লাগে ৩২ মামলার আসামি আজ নাম পাল্টিয়ে টকশোতে বসে জাতিকে নীতিবাক্য আর রাজনীতির সবক দিয়েছে।
দেশ আর কতকাল এমন শাহেদ করিমদের নীরব যাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকবে সেটাই প্রশ্ন হয়ে থাকবে।