রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসমূহ বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, গণবিরোধী ও হটকারী সিদ্ধান্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের প্রধান শিল্প পাটকলসমূহ রাষ্ট্রায়ত্তকরণ করা ছিল ১১ দফার অন্যতম অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন। গত ৪০ বছর ধরে ক্ষমতাসীন সরকারসমূহ এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজীসহ পঞ্চাশের অধিক পাটকল বন্ধ বা বেসরকারিকরণ করে জাতির সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
পাটকল বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার (৩ জুলাই) তিনি এমন মন্তব্য করেন।
মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের পাটচাষিদের উৎপাদিত পাট ব্যবহার করে পশ্চিম পাকিস্তানি আদমজী-বাওয়ানিদের এ দেশের মানুষকে শোষণের বিরোধীতা করেই পাটকলসমূহ জাতীয়করণের দাবি উত্থাপিত হয়েছিল। মুক্তিসংগ্রামের অঙ্গীকার হিসেবে ৭২ সালে ৭৭টি পাটকল রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়। ১৯৮২ সালে এরশাদ আমলে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ এর প্রেসক্রিপশন স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্টের নামে পাটকলসমূহ বেসরকারিকরণ শুরু হয়। ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের শিল্পমন্ত্রী রাজাকার নিজামীর হাত দিয়ে দেশের বৃহত্তম আদমজী পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার বর্তমান আওয়ামী সরকার অবশিষ্ট ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ পুরো প্রক্রিয়াটাই জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাকতা।
তিনি বলেন, সরকার লোকসানের কথা বলে পাটকলসমূহ বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লোকসানের জন্য শ্রমিকরা দায়ী নয়। দায়ী সরকারের ভুল নীতি, দুর্নীতি ও কর্মকর্তাদের লুটপাট। পাট ক্রয়, পাটপণ্য বহুমুখীকরণের ব্যর্থতা ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাটপণ্য বিক্রির ব্যর্থতার দায় শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না।
তিনি বলেন, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসমূহ ৬০-৭০ বছরের পুরোনো যন্ত্রপাতির কারণে উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে। এর দায়ও শ্রমিকদের নয়। আধুনিকায়নের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে মুনাফা করা সম্ভব।
বামপন্থি এ রাজনীতিবিদ বলেন, সরকার ২৫ হাজার স্থায়ী পাট শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক করার জন্য ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে চায়। কিন্তু মাত্র ১২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কারখানাগুলোকে আধুনিকায়ন করতে আগ্রহী নয়। এ থেকে সরকারের দুরভিসন্ধি বোঝা যায়। এর আগেও পিপিপির মাধ্যমে বেসরকারিকরণ করা শিল্প কারখানাসমূহের পরিণতি সবাই জানে। অবশিষ্ট যে ২৫টি কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে তার পরিণতিও একই হবে।