বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজে গ্যালারি অব একসেলেন্স নি:সন্দেহে একটি মহতী উদ্যোগ ছিল। যতটুকু জানি এই গ্যালারির সূচনা ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। সূচনাকালে জেনেছিলাম এই গ্যালারিতে এই কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্নে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন এবং এই ভূমির সন্তান যারা ব্যক্তিগুণে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জন করে বিয়ানীবাজারবাসি জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন, তাদের কে এই কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে প্রেরণার উৎস হিসেবে স্থাপন করা এই গ্যালারি অব একসেলেন্স এর মূল লক্ষ্য ।
এধরণের চিন্তা নিয়ে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ নাথ এই গ্যালারির সূচনা করায় তিনি স্বাধুবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন । সূচনালগ্নে বিভিন্ন ব্যক্তির ফেইসবুকে আপলোড করা ছবির বদৌলতে গ্যালারি অব একসেলেন্সে স্থান পাওয়া ব্যক্তিদের দেখে ভালোই লেগেছে । অনেক কে সুন্দর কমেন্ট করতে দেখেছি। কলেজের ছাত্র- ছাত্রী তথা বিয়ানীবাজারের জনগণের পক্ষ থেকে এই গ্যালারি নিয়ে বিরুপ কোন মন্তব্য করতে শুনিনি । প্রথম পর্যায়ে এই গ্যালারি অব একসেলেন্স ছিল অসম্পূর্ণ, যা হওয়া স্বাভাবিক ।
মানুষের ধারণা ছিল ক্রমে ক্রমে যোগ্য লোকের এই গ্যালারিতে স্থান হবে । আজ প্রায় আড়াই বছর পর হঠাৎ করে এই গ্যালারি অব একসেলেন্স নিয়ে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত বর্তমান, প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী তথা বিয়ানীবাজারবাসি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিবাদী হয়ে ওঠাতে তার কারণ উদ্ঘাটন করতে গিয়ে অনেক রহস্য উদ্ঘাটিত হল- যা প্রকাশ করা আমাদের সকলের জন্য লজ্জার ।
এই গ্যালারি অব একসেলেন্স নিয়ে মানুষ প্রতিবাদী হওয়ার মূল কারণ নতুন করে স্থান পাওয়া দু-একজন অযোগ্য মানুষের ছবি গ্যালারি থেকে অপসারণ করে যোগ্য মানুষদের ছবি স্থাপন করা নিয়ে।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি নতুন করে এই গ্যালারিতে স্থান পাওয়া ব্যক্তিরা সকলেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে সম্মানিত। তাদেরকে আমরা সকলেই সম্মান করি । সকল সম্মানিত ব্যক্তিরা যে সব চেয়ারে বসার অধিকার রাখে না অথবা বসতে পারে না। আর বসলে কেমন হয়, তা আমরা উপলব্ধিতে এনেছি ছাত্র জীবনে ।
আমরা সকলেই ‘বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে‘ এই ভাবসম্প্রসারণটি ছাত্র জীবনে পড়েছি এবং এর মর্মকথা উপলব্ধিতে আনার চেষ্টা করেছি । যারা এর মর্মকথা ধারণ করেছে, তাদের জীবন চলার পথ সহজ হয়েছে। আর যারা ধারণ করতে পারেনি, তাদেরকে জীবন চলার পথে বার বার হুছট খেতে হচ্ছে ।
আসলে এই ভাবসম্প্রসারণের মূলকথা হচ্ছে, সৃষ্টি জগতের সবকিছু নিজ নিজ পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতায় স্বাভাবিক সৌন্দর্যে অনুপমতা পায়। পরিবেশের সঙ্গে থাকে তার স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দ সম্পর্ক। পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যের অনুষঙ্গেই বিকশিত হয় তার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য । পরিবেশ বিচ্ছিন্ন হলে তার সে স্বাভাবিক সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায়।
আসলে গ্যালারি অব একসেলেন্স যাদের ছবি স্থান পাওয়ায় বিতর্কের ঝড় উঠেছে, তারা আসলেই পরিবেশের সাথে বড়ই বেমানান। তাদের ছবি এখানে স্থান পাওয়াতে পরিবেশের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ম্লান হয়ে গেছে। এই গ্যালারিতে স্থান পাওয়া যে কজন বিয়ানীবাজারের সন্তান নিজগুণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জন করে আমাদের বিয়ানীবাজারের সকলের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন তাদের সাথে যদি আলাদিনের চেরাগের ঘষায় যারা খ্যাতিমান হয়েছেন, তাদের তুলনা করা হয়, সেক্ষেত্রে বিয়ানীবাজারের সচেতন মানুষ গলায় কলসি বেধে আত্মহত্যা করা ছাড়া বিকল্প কিছু থাকে না।
আমি এই নগ্ন কাজের তীব্র নিন্দা করার পাশাপাশি বিয়ানীবাজার উপজেলার চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব সহ এপর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে যারা প্রতিবাদ করে কলেজ প্রশাসন কর্তৃক ২৮শে জুন গ্যালারিটির কার্যক্রম স্থগিত করাতে সমর্থ হয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ।
এই প্রতিবাদ প্রমাণ করেছে অসাধুরা বাংলাদেশের অন্য কোথাও পুটি মাছকে রুই মাছ বলে চালিয়ে দিলেও জ্ঞানে- গুণে ভরপুর কালের নবদ্বীপ আর বর্তমান বিয়ানীবাজারে তা সম্ভব নয় ।
বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজে একটি স্বায়তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানেও যে নোংরাভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হয় এই গ্যালারি তার জ্বলন্ত প্রমাণ। বিগত বছর দিন পূর্বে কোনো একটি বিষয়ে আমি পরোক্ষভাবে জড়িত থেকে নোংরা রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে প্রশাসন যে অসহায় তা উপলব্ধি করেছি । আমাদের সকলের মনে রাখা উচিত, যারা এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিষ্ঠা করেনি । এই কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্নে দল -মত নির্বিশেষে বিয়ানীবাজারের সর্বস্তরের মানুষের সম্পৃক্ততা ছিল । তাদের প্রচেষ্টায় আমরা পেয়েছিলাম একটি সার্বজনীন প্রতিষ্ঠান ।এখানে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার নি:সন্দেহে দূ:খজনক।
এই বিয়ানীবাজার উপজেলায় বিগত কয়েক বছর থেকে ‘আলাদীনের চেরাগের’ ক্ষমতার বদৌলতে অনেক কিছু অন্যায়ভাবে ঘটে যাচ্ছে আমাদের চোখের সামনে আর আমরা সবাই নির্বাক হয়ে দেখছি।আবার অনেক সময়, অনেক ঘটনা না বুঝে আমরা বাহ্ বাহ্ দিয়েছি । আর এর খেসারত আজ সবাইকে দিতে হচ্ছে ।
আমার মনে একটি প্রশ্ন জেগেছে যে, বিগত সরকারের আমলে নুরুল ইসলাম নাহিদ সাহেব যখন মন্ত্রী ছিলেন তখন, এই বিয়ানীবাজারের সন্তানরা জাতীয় থেকে স্থানীয় সকল ক্ষেত্রে ‘মাসে-চাঁন্দে শ্রেষ্ঠত্ব‘ অর্জন করেছেন । আজ প্রায় তিন বছর গত হল নুরুল ইসলাম নাহিদ সাহেবের মন্ত্রীত্ব নেই এবং আমাদের এই এলাকার কোনো সন্তান কোনো প্রতিযোগীতা বা কর্মের কারণে স্থানীয় অথবা জাতীয় কোথাও শ্রেষ্ঠত্বে স্বীকৃতি না পাওয়া কি স্পষ্ট প্রমাণিত হয় না এই সবের সিংহ ভাগই ছিল আলাদীনের চেরাগের খেলা ?
তাই বিয়ানীবাজারবাসিকে বলতে চাই এধরনের আলাদীনের চেরাগের ঘষায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করার কোনো সুযোগ কোনোদিন নিজে অথবা নিজের সন্তানদের জন্য পেয়ে থাকেন তাহলে তা গ্রহণ করবেন না । যদি গ্রহণ করেন তাহলে আজকের বিয়ানীবাজার কলেজের গ্যালারি অব একসেলেন্স নিয়ে যেমন অনেকেই বিব্রতকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন ঠিক তদ্রুপ আপনি এবং আপনার সন্তান তাই করতে হবে ।
এই আলাদীনের চেরাগ বেষ্টিত একটি সিন্ডিডিকেট চক্র দীর্ঘদিন থেকে গড়ে উঠেছে। তাদের কর্মে আমরা বিয়ানীবাজারবাসি জাতীয় পর্যায়ে অপমানিত ও লজ্জিত হতে হয়েছে । আমরা সকলেই জানি নুরুল ইসলাম নাহিদ সাহেব মন্ত্রী থাকা অবস্থায় এই চক্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জাতীয় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশিত হলে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত গড়ায়। আমরা সকলেই জানি নুরুল ইসলাম নাহিদ সাহেব এই অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা করতে যেয়ে বলেন, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা তার উপর আক্রোশবশত মিথ্যা এই অভিযোগ তার এবং তাকে বেষ্টিত সিন্ডিকেট এর বিরুদ্ধে ছাপিয়েছে । তার উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি তা সত্য না হয়, তাহলে আপনি পত্রিকার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন । আজ প্রায় তিন বছর হয়ে গেল- অভিযোগের বিরুদ্ধে মামলা তো দূরের কথা, উল্টো পত্রিকার মালিকের হাতে পায়ে ধরে আর অভিযোগ না ছাপানোর প্রচেষ্টায় তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে । জাতীয় পর্যায়ে প্রকাশিত এধরনের অভিযোগ কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি মোকাবেলা না করা-ই প্রমাণ করে এই চক্র প্রকাশিত দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত।
গ.
এই চক্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণের দীর্ঘদিনের নিরবতা তাদেরকে এমন একটি পর্যায় নিয়ে পৌঁছেছে তারা সমাজের মানুষকে আর মানুষ বলে ভাবে না । এই সমাজ, এই কলেজ যারা গড়েছে, তাদের কাছে যেন তারা কচুরিপনা। যারা বিয়ানীবাজার কলেজের প্রতিষ্ঠাতা তাদের ছবি গ্যালারি অব একসেলেন্স তে না লাগিয়ে নিজেদের ছবি লাগানো কি তা প্রমাণ করে না ?
শুধু তাই নয়, বিগত বছর দুয়েক পূর্বে পঞ্চখন্ড হরগবিন্দ হাইস্কুলের একটি অনুষ্ঠানে বিয়ানীবাজারের সর্বস্তরের মানুষের কাছে সম্মানিত ব্যক্তি যিনি দীর্ঘ দিন এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে ( সেই সময়, কয়েক দিন পূর্বে ) অবসরে গেছেন । এবং আমার দেখা বিয়ানীবাজার উপজেলায় কোনো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলে যে দুজন মানুষকে জ্ঞান গর্ভ কথা বার্তা বলার জন্য অতিথি হিসেবে সম্মানের সাথে অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করা হতো, এবং আমরা বসে তাদের কথা শুনতাম তারা হচ্ছেন পঞ্চখন্ড হরগবিন্দ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রদ্ধেয় আলী আহমদ ও বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মাহবুবুর রশীদ চৌধুরী ।
এই সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলী আহমদ স্যারকে তিনি যে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন সেই স্কুলের অনুষ্ঠান মঞ্চের তৃতীয় সারিতে বসিয়ে অনুষ্ঠান করার মত স্পর্ধা এই চক্র দেখিয়েছে । আর আলী আহমদ স্যারের সামনে যারা বসেছিলেন তারা নাকি ছিলেন রাজনৈতিক নেতা । প্রকৃত অর্থে ছবিতে স্যারের সামনে বসা এই তথাকথিত নেতাদেরকে দেখে অনেকে মন্তব্য করেছেন-আলী আহমদ স্যারকে পেছনে বসিয়ে, যারা সামনে বসেছেন, তারা আরও বড় নেতা হলেও, স্যারের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত স্যারের অনেক ছাত্রের পায়ের কাছে বসার যোগ্যতা তাদের কোনো দিনও হবে না । এই সমস্ত বেয়াদবির সাথে যারা সংশ্লিষ্ট এই চক্রই আজ বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে সংকট সৃষ্টির পিছনে রয়েছে বলে সচেতন বিয়ানীবারবাসী মনে করে ।
তাদের কারণে গত ২৮ জুন এই কলেজের শিক্ষার্থী ,পরে এই কলেজে দীর্ঘ দিনের শিক্ষক এবং পরবর্তিতে দীর্ঘদিন অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে শিক্ষকতা জীবনের পরিসমাপ্তি দিন বিষাদময় পরিবেশের মধ্য দিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিতে হয়েছে শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ নাথ কে। বিদায় বেলা তার হাতে স্বাক্ষর করে গ্যালারি অব একসেলেন্স ২৮ জুন সোমবার স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন। এই বিজ্ঞপ্তিটি নিশ্চিত সংঘাত থেকে রক্ষার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। তাই স্বস্থির নি:শ্বাস ফেললেও মনের দিক দিয়ে আহত হয়েছি বেশি। কারণ দুএকজন অযোগ্য মানুষের কারণে মহৎ কাজটি স্থগিত হওয়ার পাশাপাশি গ্যালারিতে থাকা মহৎ ও আলোকিত মানুষের ছবি পর্দার অন্তরালে যাওয়া তাদের প্রতিও একধরণের অপমান স্বরূপ। এখানে বিতর্কিতদের ছবি সরিয়ে অন্যদের ছবি সম্মানের সাথে রক্ষা করা যেত। আমার মনে হয় সেইসব বিতর্কিতদের নোংরা মনমানষিকতার কারণে সেটাও হয়তো দারকেশ চন্দ স্যার করে যেতে পারেন নি।
শ্রদ্ধেয় দ্বারকেশ চন্দ নাথ স্যার এই কলেজের একটি ইতিহাস। তিনি এই কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন । তিনি মুজিববাদী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্যানেল হয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বার্ষিকী সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন । ছাত্র জীবন থেকে শিক্ষকতা জীবনের পরিসমাপ্তির মধ্যে হাতে গোনা দু চারটি বছর তার বাহিরে কাটলেও অন্য সময়টুকু পদচারণা ছিল তার এই কলেজ ক্যাম্পাসে। এত দীর্ঘ সময় এই ক্যাম্পাসে অতিবাহিত করার রেকর্ড বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজে অতীতে ছিল না। ভবিষ্যতে থাকবে কি না সন্দেহ রয়েছে।
এই দীর্ঘ সময়ে তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দেয়া ছাড়াও এই কলেজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে ভূমিকা রেখেছেন, তার জন্য আমরা এলাকাবাসী তার কাছে চির কৃতজ্ঞ হয়ে থাকলাম।
একটি মফস্বল সরকারী কলেজ কত বৈরি দিক মোকাবেলা করে পরিচালনা করতে হয়, যারা পরিচালনা করেন শুধু তারাই অনুধাবন করতে পারেন। আমরা বিভিন্ন সময় স্যারের বিভিন্ন কর্ম নিয়ে সমালোচনা করেছি। আমারা সকলে জানি আমাদের দেশে যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে সেই সরকারি দলের নেতার চেয়ে তার ড্রাইভারের ক্ষমতা থাকে বেশি। ক্ষমতার অপব্যবহারও করে বেশি। ড্রাইভারের আদেশ না শুনলে ট্রান্সফার খাগড়াছড়ি। যেখানে নেতার চেয়ে ড্রাইভার ক্ষমতাসীন থাকে, সেখানে একজন সরকারী অফিসার বা সরকারি কলেজের শিক্ষকের কাছে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ কাজ আমরা আশা করতে পারি না।
দেশে ও প্রবাসে ছড়িয়ে থাকা বিয়ানীবাজারবাসীর সিংগভাগই মনে করেন গ্যালারি অব একসেলেন্স এধরনের অপ্রত্যাশিত চাপে হয়তো তাকে সাজাতে হয়েছে । এর পরিপেক্ষিতে আমরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তার কঠোর সমালোচনা করেছি ।
প্রিয় শ্রদ্ধেয় শিক্ষক দ্বারকেশ স্যার: আমরা কেউ হয়তো আপনার ছাত্র। কেউ সহপাঠি। কেউ হয়তো আপনার ছাত্রের অভিভাবক। গ্যালারি অব একসেলেন্স সাজাতে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটায় আমরা অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে আপনার প্রতি কটু বাক্য ব্যবহার করেছি। যাতে আপনার মনক্ষন্ন হওয়া স্বাভাবিক। আমি এই কলেজের একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থী । আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিবেন, প্লিজ।
ঙ.
তবে শেষে, একটি কথা স্পষ্ট বলে যেতে চাই- পাপ কোনদিন বাপকেও ছাড়ে না। ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে যিনি অযোগ্যদের এই বিয়ানীবাজার তথা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বানিয়ে ছিলেন সেই কর্মফল ২৮ জুন গ্যালারি অব একসেলেন্সে থাকা তার ছবি সহ স্থগিতের মাধ্যমে তাকেও দেশে-প্রবাসে বিয়ানীবাজারবাসির সামনে অপমান ভোগ করতে হয়েছে । এবং এই চরম সামাজিক অপমানটি বিয়ানীবাজারবাসীর জন্য পজিটিভ ও নেগেটিভ উভয় অর্থেই সবসময় উদাহরণ হয়েই থাকবে বলে আমার গভীর বিশ্বাস।
গোটা কতক অকর্মন্য, অযোগ্য ,রাজনৈতিক জ্ঞানপাপীদের কারণে অনেক আলোকিত ব্যক্তিত্বদের নামও কলেজের দেয়াল থেকে উঠে গেল। তাদের জন্য যেমন মন খারাপ লাগছে। তেমনি আমার বিশ্বাস আগামী প্রজন্ম একদিন বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা প্রকৃত যোগ্য, মহৎ, আলোকিতদের সম্মানের সাথে স্থান দিবে।
সত্য, সুন্দরের জয় হোক।
২৯.০৬.২০২০
ছরওয়ার আহমদ: স্যোসাল এক্টিভিস্ট, সাবেক ভিপি ; বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ।যুক্তরাজ্য প্রবাসী।
আরও পড়ুন: