জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয় বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভ। সেই বিক্ষোভ তিন সপ্তাহ ধরে চলছে। বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি, নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, লস অ্যানজেলেস ও সান ফ্রান্সিসকোর মতো শহরে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুই বিশ্বকে পাল্টে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দল থেকে প্রার্থী জো বাইডেন। হিউজটনে ব্যক্তিগতভাবে ফ্লয়েড পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদেরকে সহানুভূতি জানান তিনি। এরপর তিনি সিবিএস নিউজকে বলেন, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক বড় প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকবে।
উল্লেখ্য, এরই মধ্যে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিন যুবক জর্জ ফ্লয়েড মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভের প্রতীক। মঙ্গলবার দিনশেষে হিউজটনে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। তার পরিবার সম্পর্কে জো বাইডেন বলেছেন, তার চমৎকার পরিবার। ছোট্ট মেয়েটি তার বাসায় ছিল। সে বলেছে, বাবা বিশ্বকে পরিবর্তন করতে গেছেন।
আমিও মনে করি, তার পিতা বিশ্বকে পরিবর্তন করছেন। আমি মনে করি, এখানে যা ঘটেছে তা আমেরিকান ইতিহাসের বাস্তবে নাগরিক স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার এবং মর্যাদার সঙ্গে মানুষের সঙ্গে আচরণে একটি মহান প্রতিফলন পয়েন্ট।
ফ্লয়েডের পরিবারের একজন মুখপাত্র বেনজামিন ক্রাম্প বলেছেন, জো বাইডেনের মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন ফ্লয়েডের আত্মীয়-স্বজন। এর অর্থ হলো এই শোকার্ত পরিবারের পাশে আছে বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের একজন সহযোগী বলেছেন, তিনি মঙ্গলবারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য একটি ভিডিও বার্তা রেকর্ড করবেন। ওদিকে জর্জ ফ্লয়েডের মৃতদেহের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, তার প্রতি সম্মান জানাতে টেক্সাসের হিউজটনে দীর্ঘ লাইন ধরে দ্য ফাউন্টেইন অব প্রেইজ চার্চের বাইরে ৬ ঘন্টা দাঁড়িয়েছিল শোকার্ত মানুষ। এর আগে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় মিনিয়াপোলিস, নর্থ ক্যারোলাইনাতে। সেখানে জন্মেছিলেন জর্জ ফ্লয়েড।
এদিকে জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগে সোমবার প্রথম আদালতে উপস্থিত করা হয় শ্বেতাঙ্গ ও বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চাউভিনকে। সেখানে তার জামিন নির্ধারণ করা হয় ১২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। চাউভিনই ঘটনার দিন জর্জ ফ্লয়েডের কাঁধে তার হাঁটু সজোরে চেপে ধরে রাখে মাটির সঙ্গে প্রায় ৯ মিনিট। এ সময় নিশ্বাস ছাড়তে হাসফাস করেন ফ্লয়েড। তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন ‘আই ক্যান্ট ব্রিদ’। কিন্তু তাতে চাউভিন ও তার সঙ্গীদের মন টলে নি। পরে ফ্লয়েডকে হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এতে চাউভিনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্য তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগের ভয়াবহতা এবং জনগণের ক্ষোভের কথা উল্লেখ করে জামিনের অংক ১০ লাখের বেশি ধরার কথা বলেছেন প্রসিকিউটররা। আগামী ২৯ শে জুন চাউভিনকে আদালতে উপস্থিত করার কথা রয়েছে।
ওদিকে আমেরিকার পুলিশে সংস্কার আনার জন্য কংগ্রেসে প্রস্তাব উত্থাপন করেছে ডেমোক্রেটরা। এই বিলটি পাস হলে অসদাচরণের জন্য পুলিশের বিচার করা সহজ হয়ে যাবে। বর্ণবাদ সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু বিলটি পাস হবে কিনা তা অস্পষ্ট। কারণ, মার্কিন সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে। তারা এই বিলে সমর্থন দেবে কিনা তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।