গোলাপগঞ্জে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে উপজেলার বিভিন্ন জন প্রতিনিধিদের আক্রান্ত হওয়ায় ভাবিয়ে তুলেছে সূধীজন সহ সর্বস্তরের জনসাধারণ কে এমনটিই জানালেন অনেকেই। ইতিমধ্যে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার রুহিন আহমদ খাঁন আক্রান্ত হয়েছিলেন, যদিও তিনি এখন সুস্থ। পরবর্তীতে উপজেলার বুধবারী বাজার ইউপি চেয়ারম্যান মস্তাক আহমদ কামাল আক্রান্ত হন। ১০ জুন পৌরসভার ০৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার এম ফজলুল আলম ও ছেলে শিয়াব আলম সহ আক্রান্ত হন।
এনিয়ে সাধারণ জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বলে পৌর এলাকার বিভিন্ন জনের সাথে কথা হলে তারা জানান। গোলাপগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন মাহমুদ বলেন, আমাদের জনপ্রতিনিধিরা এতো সচেতন থাকার পরেও যদি উনারা আক্রান্ত হন তাহলে আমাদের সাধারণ মানুষের অবস্থা কি হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গোলাপগঞ্জ বাজারে মানুষজন যেভাবে চলাফেরা করছে তাতে বুঝাযায় করোনা ভাইরাস কোন রোগ-ই না। কথা হয় বাজার করতে আসা রানাপিং এলাকার কাদির মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, ভাই বাজারে এসে শোনলাম মেম্বারের (কাউন্সিলার) ভাইরাস হইছে ( ডর লাগের) ভয় লাগের আমরার কি অবস্থা (অইব) হবে।
পৌর এলাকার সৈয়দ মাসুদ আহমদ বলেন, আমাদের গোলাপগঞ্জবাসীকে আরো অনেক সচেতন হতে হবে এবং সুসীল সমাজের সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে পাড়া- প্রতিবেশিকে এই করোনা ভাইরাসের কুফল কত মারাত্বক হতে পারে তা সাধারণ মানুষকে বুঝাতে হবে, না হলে আমরা কেউই বাঁচতে পারবনা।
এভাবে কথা হয় আরো বিভিন্নজনের সাথে তারা সবাই বলেন, আবারো বিশেষ করে গোলাপগঞ্জে লকডাউন দেওয়া অত্যান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। গোলাপগঞ্জ বাজারে মানুষের অবাদ চলাচলের উপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারী করা প্রয়োজন। বিশেষ করে অপ্রয়োজনে যারা ঘোরাফেরা করে এবং মাস্ক পরে না ও জটলা বেঁধে থাকে, তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনলে এই ভাইরাসের বিস্তার অনেকটা কমে আসবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে এবং আক্রান্তদের সেবা দিতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার, নার্স এবং বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীবৃন্দ। বিশেষ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ডা. মনিসর চৌধুরী, আবাসিক মেডিকেল অফিসার- ডা. মো. শাহীনূর ইসলাম, মেডিকেল অফিসার (ডিজিজ কন্ট্রোল) ডা. শাহনেওয়াজ- সহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারী বৃন্দ।
ইতিমধ্যে গোলাপগঞ্জে করোনা ভাইরাসে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ২৮ জন ও মৃত্যুবরণ করেছেন ১জন। ১০ জুনগোলাপগঞ্জে কাউন্সিলরসহ নতুন করে আরো ১৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহিনুর ইসলাম শাহিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ডা. শাহিনুর ইসলাম শাহিন জানান, করোনা শনাক্ত হওয়া এই ১৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে কয়েকদিন আগে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল । আজ তাদের রিপোর্ট পজেটিভ আসে। আক্রান্তদের মধ্যে পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এম ফজলুল আলম ও তার ছেলে শিহাব আলম, পৌরসভার লুকমান টাওয়ারের রুবি বেগম, কদমতলী এলাকার এনামুল হক ও গোলাপগঞ্জ সোনালী ব্যাংক শাখায় কর্মরত এরশাদ মিয়া।
আক্রান্ত আরো তিনজন মহিলা বাঘা ইউপি’র নুলিয়া গ্রামের রাহেলা,রেজিয়া, রুমি। আক্রান্ত অপর দুইজন লক্ষনাবন্দ ইউপি’র আলী মিয়া, মুকিতলার গ্রামের ফরিদা ইয়াছমিন। আক্রান্ত অন্য তিনজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আনা মিয়া,শেফালীও খালেদা। আক্রান্তদের বাড়িগুলা লকডাউন করা হবে এবং তাদের সংস্পর্সে আসা সবার নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
এভাবে দিনের পর দিন গোলাপগঞ্জে করোনা রুগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখনই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে মহামারী আকার ধারন করবে বলে জানান, ঢাকাদক্ষিন এলাকার তরুন সমাজ সেবক ছাত্রলীগ নেতা হোসেন আহমদ।