অর্থনৈতিক দূরাবস্তা ও কর্মহীনতায় ও কর্মহীনতায় ফের উত্তাল লেবাননের রাজপথ। আন্দোলন হয় দেশটির বেশ কয়েকটি মূল শহরে। গত দুই সপ্তাহে ডলারের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে দেশটিতে। বৈশ্বিক এই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস “কোভিট-১৯” এর প্রাদূর্ভাবের কারণে লকডাউন থাকার পরও শনিবার (৬ জুন) আবারো রাজপথে নেমে এসে বিক্ষোভ করেন লেবাননের সাধারণ জনগণ। বিক্ষোভে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে, এই বিক্ষোভে প্রায় ৫০ জন আহত হন। শনিবার (৬ জুন) মধ্যরাত থেকেই আন্দোলনে রাস্তায় নেমে আসে হাজারো লেবানিজ। এ সময় বিক্ষোভ কারীরা বিভিন্ন রাস্তার টায়ারের আগুন জ্বালিয়ে ও ময়লা ড্রাম ফেলে বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এ সময়, আন্দোলনরত অনেকেই বিভিন্ন মিডিয়াতে বক্তব্যে তারা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ইতি মধ্যে চার গুন বৃদ্ধি হয়। কিন্তু, অর্থনৈতিক সঙ্কটে ও করোনাভাইরাস এর সংক্রমনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় শত শত কোম্পানী, কর্মহীন হয়ে পরে হাজারোও লেবানিজ নাগরিক। এই কর্মহীন লেবানীজের অনেকের ঘরেই এখন খাবার না থাকায় বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন। লেবাননের উত্তরাঞ্চল ত্রিপলিতে (তারাব্লুজ) গত সপ্তাহ জুড়ে ব্যপক হারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ভাঙ্গচুর ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বর ২০১৯-এর মাঝামাঝি সময়ে অর্থনৈতিক সংকট ও সরকারের দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনা ইস্যূ নিয়ে বিক্ষোভে রাস্তায় নামে লাখো লেবানিজ। এর জবাবে গেল অক্টোবরের শেষ দিকে -(২০১৯ সালে) দেশটির তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি পদত্যাগ করেন। এরপর প্রায় তিন মাস অপেক্ষার পর লেবাননে প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী হাসান ডিয়াবের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন করা হলেও তা প্রত্যাখান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন সাধারণ জনগণ।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইরান থেকে আসা এক লেবানিজ নারী শরীরের সর্বপ্রথম কোভিট-১৯ করোনাভাইরাসে সনাক্ত হয় দেশটিতে। তার পর থেকে, কিছুটা স্থিতিশীল হয় আন্দোলন। ধীরে ধীরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে লকডাউনের কবলে পড়ে আন্দোলন। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে ডলারের চরমভাবে সঙ্কটের কারনে নিত্যপ্রয়োজনিয় জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন ভাবে বৃদ্ধি পায়, নতুন করে শনিবার (৬ই জুন) আবার রাস্তায় নেমে আসে হাজারো লেবানিজ নাগরিক।
এদিকে দেশটিতে ডলারের সঙ্কট ও করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের ফলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ ব্যাংক ও বিভিন্ন কোম্পানী বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি বর্তমানে কর্মহীন হয়ে বেকারত্ব জীবন যাপন করছে। অল্প কিছু সংখ্যক কয়েকজন কাজ থাকলেও লেবানিজ পাউনে (LBP) বেতন পরিশোধ করছে মালিক পক্ষ। যার ফলশ্রুতিতে তারাও রয়েছেন বিপাকে পাঠাতে পারছেন না রেমিট্যন্স্। গত দুই সপ্তাহে ডলারের সঙ্কটে তীব্র আকারে ধারণ করেছে, যা আগের চেয়ে তিন গুনেরও বেশি। সেই সাথে রয়েছে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবও হয়েছে প্রচন্ডভাবে, শনিবার (৫ই জুন) নতুন করে আক্রান্ত হয়। ৮ জন সহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৩২০ জন। ঘোষণা করা হয় ৭ম ধাপে লগডাউন যা বহাল থাকবে আগামী ৫ জুলাই পর্যন্ত।
বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যে নতুন করে এই সহিংসতার কারণে এখন যারা কর্মস্হলে আছেন তাদেরকেও নতুন করে কর্ম হারানোর দুশ্চিন্তায় ভুগছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অনেকটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে লেবানন প্রবাসী বাংলাদেশিদের।
দেশটিতে দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অস্থরিতা ও করোনাভাইরাস এর কারণে লেবাননে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মহীন হয়ে হয়ে পড়ে। দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভোগ, খাদ্য সঙ্কট, বৃদ্ধি পেয়েছে বাসা ভাড়া সহ আরো নানান সমস্যা। ইতি মধ্যে এই অসহায় প্রবাসীদের খাদ্য সহায়তায় এগিয়ে এসেছে, বাংলাদেশ দূতাবাস সহ বাংলাদেশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় দেশে ফিরতে পারছেনা কর্মহীন প্রবাসীরা, বৈধ কাগজপত্র বিহীন প্রায় সাড়ে সাত হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে ফেরার জন্য নাম নিবন্ধন করিয়েছেন বৈরুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে।
জানা যায়, সপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার (৭ জুন) আবার রাজপথে নামতে পারে আন্দলনকারীরা। তাই সকল প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা সহ নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করতে ও খুব বেশি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে না যাবার পরামর্শ ও আহবান করছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) জনাব আব্দুলাহ্ আল-মামুন।