খুতবা ছাড়াই ঘরে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা যাবে বলে ফতোয়া দিয়েছেন আন্তর্জাতিক আলেমগণ । উপমহাদেশের প্রখ্যাত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দও ঈদের নামাজ ঘরে পড়ার বিষয়ে ফতোয়া জারি করেছে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ ঘরে পড়ার জন্য নির্দেশনা জারি করেছে। এ বিষয়ে সহি হাদিসের রেফারেন্স উল্লেখ করেছেন তারা । করোনা পরিস্থিতিতে ঘরে যারা ঈদের নামাজ আদায় করবেন, তারা খুতবা দেবেন কিনা তা নিয়ে আরব বিশ্বের ওলামায়ে কেরাম জানিয়েছেন, ঘরে ঈদের নামাজ আদায়কারীদের জন্য ঈদের নামাজে খুতবা দেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে নামাজের নিয়ম মোতাবেক নামাজের শুরু শেষে অতিরিক্ত তাকবিরের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে হবে।
কিন্তু বাংলাদেশে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে সরকার । এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি পালন করার জন্য মসজিদ কমিটি ও মুসুল্লীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে ।
দেওবন্দের ফতোয়া : প্রাণঘাতি করোনা মহামারীর কারণে আসন্ন ঈদুল ফিতরের নামাজ ঘরে পড়ার বিষয়ে ফতোয়া দিয়েছে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ।
দেওবন্দ মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষকদের স্বাক্ষরিত ফতোয়াটিতে বলা হয়, করোনা মহামারির কারণে জুমার নামাজের পরিবর্তে যেমন জোহর পড়ার অবকাশ ছিল, তেমন অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঈদের নামাজ ঘরেও পড়া যাবে।ফতোয়াটিতে আরও বলা হয়, জুমার নামাজের জন্য যেসব শর্ত রয়েছে, ঈদের নামাজের জন্য ঠিক সেই শর্তগুলোই প্রযোজ্য। পার্থক্য শুধু এতোটুকুই জুমার নামাজের খুৎবা ওয়াজিব এবং নামাজের আগে দিতে হয়, আর ঈদের নামাজের খুৎবা সুন্নত এবং নামাজের পরে দিতে হয়।তাই, অবস্থা যদি এমনই থাকে এবং দেশে আরোপিত লকডাউন কার্যকর থাকে তাহলে মুসল্লিরা ঈদের নামাজ নিজের ঘরেই পড়ে নিবেন। গ্রহণযোগ্য কোনো কারণে যারা নিজের ঘরেও পড়তে পারবেন না, আশা করা যায় আল্লাহতায়ালা তাদের ক্ষমা করে দিবেন।
ফতোয়াটিতে স্বাক্ষর করেছেন দেওবন্দ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবুল কাসেম নোমানি, সিনিয়র শিক্ষক মুফতি হাবিবুর রহমান খায়রাবাদি, মুফতি মাহমুদ হাসান বুলন্দশহরি, মুফতি যাইনুল ইসলাম, মুফতি ওয়াক্কার আলি এবং মুফতি নোমান সিতাপুরী।
প্রসঙ্গত, মসজিদে গিয়ে জামায়াতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।তুরস্ক, সৌদি আরব, সিরিয়া, ইরাক, আলজেরিয়া ও মিসরে ঈদের জামাতে ব্যাপক লোকসমাগমের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
ঘরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
বছরে দুই বার ঈদের নামাজ আদায় করার কারণে স্বাভাবিকভাবেই অনেকে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ভুলে যায়। সে কারণে ঈদের নামাজের নিয়ম জেনে নেয়া জরুরি।
আর তাহলো-প্রথম রাকাআত- প্রথমে (সাধারণ নামাজের) তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে হাত বাঁধা।- ছানা পড়া- অতপর হানাফি মাজহাবের অনুসারিরা অতিরিক্ত ৩ তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলা। প্রত্যেক তাকবিরে হাত উঠিয়ে তৃতীয় তাকবিরের পর বাঁধা। তবে অন্য মাজহাব ও ওলামায়ে কেরাম ৬ তাকবির দেয়ার কথাও বলেন। উচ্চস্বরে সুরা ফাতেহা পড়া এবং অন্য যে কোনো সুরা মেলানো। রুকু সেজদা দেয়ার মাধ্যমে প্রথম রাকাআত আদায় করা।
দ্বিতীয় রাকাআত- দ্বিতীয় রাকাআতে দাঁড়িয়ে প্রথমেই সুরা ফাতেহা পড়ে অন্য সুরা মিলাতে হবে।- সুরা মিলানোর পর হানাফি মাজহাবের অনুসারিরা অতিরক্তি তিন তাকবির দিবে। ৪র্থ তাকবির দেয়ার পর রুকুতে যাবে। (আর অন্যান্য ওলামায়ে কেরামের মতে দ্বিতীয় রাকাআতে অতিরিক্ত তাকবিরের সংখ্যা ৫টি হবে। ষষ্ঠ তাকবির দিয়ে রুকুতে চলে যাবে) অতিরিক্ত তাকবিরের সংখ্যা ৩ এবং ৬/৫ উভয় মতই বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এটি নিয়ে মতপার্থক্যের কোনো কারণ নেই।
নামাজ শেষে ঈদের খুতবা দেয়ানামাজ শেষে সবাই ইমামের খুতবা শুনবেন। খুতবা দেয়া প্রসঙ্গেও মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ এটি মনোযোগের সঙ্গে শোনাকে সুন্নাতে মোয়াক্কাদা মনে করেন। তবে সব ওলামায়ে কেরামের মতে ঈদের নামাজের পর খুতবা শোনা সুন্নাত।
তাই যদি কেউ উল্লেখিত নিয়মে ঈদের নামাজ আদায় করার পর খুতবা দিতে নাও পারেন তবে তাদের ঈদের নামাজ হয়ে যাবে। খুতবা ছাড়া নামাজ হবে কিনা এ নিয়ে চিন্তা বা সন্দেহের কোনো কারণ নেই।তবে খুতবা ও অতিরিক্ত তাকবির নিয়ে যে যার যার অনুসরণ অনুযায়ী আমল করবে। এ নিয়মে যার যার অবস্থান থেকে জুমআর শর্ত মোতাবেক পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা যাবে।
তবে ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ঈদের জামাআত না পেয়ে ঘরে পরিবারের সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহির এ পদ্ধতি অনুসরণ করেও নামাজ আদায় করা যেতে পারে। বুখারি ও মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বার বর্ণনায় এসেছে-
হজরত ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি একবার জামাআতে ঈদের নামাজ পড়তে পারেননি। তিনি বাসায় এসে তার পরিবারের লোকজন যারা ছিলেন, তাদের নিয়ে জামাআতে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং নামাজ পড়েছেন। সে হাদিসের আলোকে করোনা পরিস্থিতিতেও এভাবে বাসায়, মহল্লায়, মসজিদে নিরাপত্তার সঙ্গে নামাজ আদায় করা যাবে।
করোনা পরিস্থিতিতে ঘরে যারা ঈদের নামাজ আদায় করবেন, তারা খুতবা দেবেন কিনা তা নিয়ে আরব বিশ্বের ওলামায়ে কেরাম জানিয়েছেন, ঘরে ঈদের নামাজ আদায়কারীদের জন্য ঈদের নামাজে খুতবা দেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে নামাজের নিয়ম মোতাবেক নামাজের শুরু শেষে অতিরিক্ত তাকবিরের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে হবে।
উন্মুক্ত স্থানে ঈদের নামাজ আদায় একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ওলামায়ে কেরাম যথাসম্ভব উন্মুক্ত স্থানে নামাজ আদায় করতে বলেছেন। সে আলোকে যার অবস্থানে থেকে সম্ভব হলে বাড়ির আঙিনায় কিংবা যে কোনো উন্মুক্ত স্থানে নামাজ আদায়ের সুযোগ থাকলে তা আদায় করা।