প্রচলিত কিছু শব্দ, কিছু ধ্যান ধারনা আমাদেরকে ধ্বংস করছে কি না তাহা আজ ভাব বার সময় এসেছে।
সম্প্রতি ফোনে হ্যালো না বলার জন্য, ফেইসবুক সব বিভিন্ন এপস্ এর গ্রুপে অনেকে পোস্ট করেন, এবং শেয়ার করতে বলেন।
তাঁদের এই পোস্ট টি আমি ঠিক হুবুহু তুলে ধরলাম ….
“সৌদিআরবের ৭০ জন আলেম ফোনে হ্যালো বলা হারাম করে দিয়েছেন। কারণ হেল অর্থ জাহান্নাম আর হ্যালো অর্থ জাহান্নামী। যদিও ইংরেজরা নিজে ফোন করে হাই এবং পিক করে ইয়েস বলে।তাই সব সময় ফোনে বলুন আসসালামুআলাইকুম। অনুগ্রহ করে সকল মুসলিমকে শেয়ার করুন। হতে পারে আপনার শেয়ার করার কারনে সে হয়ত হ্যালো বলার পরিবর্তে আসসালামুআলাইকুম বলবে। নেকির দাওয়াত দেওয়ায়, নেকি কারীর সমান সওয়াব হয়।”
এখন এই পোষ্ট প্রসংগে সাধারন জ্ঞ্যান এবং আমার লেখার কারন তুলে ধরছি।
টেলিফোন আবিষ্কারের কথা অনেকেরই জানা আছে। এটি একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার। বিভিন্ন পথপরিক্রমায় আজকের মোবাইল ফোন। আর এর পথপ্রদর্শক হচ্ছে টেলিফোন।
আমাদের অনেকেরই আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল এর নাম জানা আছে। যার জন্ম স্কটলেন্ড এর এডেনবার্গে ১৮৪৭ সালের ৩ মার্চ। জীবদ্দশায় তিনি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তার প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। যা মানব কল্যাণের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার বিভিন্ন আবিস্কারের মধ্যে টেলিফোন আবিস্কার হচ্ছে অন্যতম।
গ্রাহাম বেলের মা এবং স্ত্রী দু’জনেই ছিলেন বধির।তাদের এবং বধির জন গুষ্টির জন্য কিছু করার প্রত্যয়ে, তিনি শ্রবণশক্তি সম্পর্কিত ডিভাইস নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি টেলিফোন অবিষ্কার করেন।
আমরা ফোনের রিসিভার তুলেই ‘হ্যালো’ বলে সম্বোধন করি এবং অপরপ্রান্ত থেকেও হ্যালো বলে উত্তর দেওয়া হয়। এই ‘হ্যালো’ শব্দটি কেন বলি বা এর উৎপত্তি কোথায় বা কখন থেকে কীভাবে হ্যালো বলা শুরু তাও হয়তো আমাদের অনেকেরই জানা ।
Margarat hello bell. ‘হ্যালো’ একজন নারীর নাম। পুরো নাম মার্গারেট হ্যালো (Margaret Hello)। তিনি ছিলেন আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের (Alaxander Graham Bell) গার্লফ্রেন্ড।পরবর্তিতে স্ত্রী। গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করে আবেগের বশবর্তী হয়ে প্রথম যে কথাটি উচ্চারন করেন, তা হলো ‘হ্যালো’।গ্রাহাম বেল ফোনের একপ্রান্তে আর অপর প্রান্তে তাহার স্ত্রী মারগারেট হ্যালো।অর্থাৎ গ্রাহাম বেল তাহার স্ত্রীর নাম ধরে ডাকলেন।সেই থেকে হ্যালো শব্দটির উৎপত্তি।এবং আজ পর্যন্ত টেলিফোন ব্যবহার কারিদের কাছে একটি প্রিয় শব্দ।
এখন প্রশ্ন হলো এখানে ধর্মের সাথে “হ্যালো” শব্দটির সম্পর্ক কোথায়? আমরা যদি আরবি অভিধানের দিকে তাকাই, তা হলে দেখব হ্যালো শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে“ مَرْحَباً মারহাবান”(according to Arabic dictionary). আর ইংরেজী শব্দ Hell এর বাংলা এবং আরবী অর্থ হচ্ছে জাহান্নাম।এখানে খুবই স্পষ্ট ভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, আবিস্কারকের হ্যালো শব্দের অর্থের সাথে তথাকতিত যে যুক্তি , “হ্যালো বলা হারাম” এর কোন সম্পর্ক নেই। আর এখানে যে ৭০ জন আলেমের কথা বলা হয়েছে, তাঁদের কারো নাম বা পরিচিতি উল্লেখ করা হয় নি এবং তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও দেওয়া হয়নি। সুতরাং যে বা যারা এই ধরনের পোস্ট বানিয়েছেন, এটা একেবারেই তাদের মন গড়া বলে আমার বিশ্বাস।
একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানের সাথে দেখা অথবা কথা হলে, অবশ্যই আসসালামুআলাইকুম বলে সম্মোধন করে এবং করা উচিত।এখানে হ্যালো এর সাথে, আসসালামুআলাইকুম এর যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে, তাহা কতটুকু গ্রহন যোগ্য হলো, এটা পাঠকের উপরেই ছেড়ে দিলাম।
মানুষের সব থেকে দূর্বল জায়গা হচ্ছে, তার ধর্ম। আর এই দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের সমাজ, আলেম উলামায়েদেরকে এক সম্মানিত স্হানে অধিষ্টিত করে রেখেছে। আর এই সম্মানিত আলেম উলামায়েদের উদাহারন দিয়ে কিছু গুমরা জন গোস্টি সাধারন মানুষের দূর্বলতাকে পুজি করে, আমাদের পবিত্র ধর্ম কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাহা একবার ভেবে দেখুন।
লেখক:সমাজকর্মী, মিশিগান স্টেট, যুক্তরাষ্ট্র।