করোনার টিকা সারা বিশ্বে একযোগে পৌঁছে দেওয়ার কথা জানিয়েছে ফ্রান্সের ফার্মাসিটিক্যালস কম্পানি সানোফি।বৃহস্পতিবার এ কথা জানান সানোফির সিইও পল হাডসন। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস নিয়ে সার্বিক তথ্য সরবরাহ করা ওয়ার্ল্ডোমিটারে এ তথ্য জানা যায়। ওয়ার্ল্ডোমিটার জানায়, বিশ্বে তিন লাখ তিন হাজার ৪১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিড-১৯ এ। একইসঙ্গে আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা হয়েছে ৪৫ লাখেরও বেশি মানুষ। আর ১৭ লাখেরও বেশি মানুষ সুস্থ হয়েছেন।
করোনার টিকা কোন দেশে আগে বা কোন দেশে পরে দেওয়া হবে না।সানোফির চেয়ারম্যান জানান, আমাদের বেশ কয়েকটি উৎপাদনশীল সংগঠন রয়েছে।এর মধ্যে কয়েকটা যুক্তরাষ্ট্রেও রয়েছে।৩২ টি দেশে ৭৩ টি শিল্প পরিচালনা করে সানোফি।
এর আগে কম্পানিটির প্রধান নির্বাহি পল হাডসন জানান, যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।তিনি বলেন, টিকার গবেষণায় অর্থ বিনিয়োগ করার ঝুঁকি নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফলে তারাই পাবে সবার আগে।তার এই মন্তব্যের পর ফ্রান্স সরকারের সমালোচনা ও চাপের মুখে পড়ে ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।ফরাসী প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্ড ফিলিপ জানান, সবার টিকার প্রাপ্তি বিষয়টি নিয়ে কোনও আলোচনা হতে পারে না।এরপরই সানোফির চেয়ারম্যান সবার জন্য টিকার সমান প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছেন।
বিশ্বজুড়ে অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত করোনার কোন ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি।এদিকে এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে, করোনা নিয়ে গবেষণার জন্য ৮০০ কোটি ডলারের তহবিল গড়ে তোলা হবে।
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম ঘটনা শনাক্ত হয়। তার প্রায় এক মাস পর প্রথম মৃত্যুটি চীনে ঘটেছিল ১১ই জানুয়ারি।
বিশ্বব্যাপি মৃতের সংখ্যা হাজার ছুঁয়েছিল ১০ই ফেব্রুয়ারিতে। অর্থাৎ প্রথম মৃত্যুর পর মৃতের সংখ্যা ১ হাজারে পৌঁছতে লেগেছিল ঠিক এক মাস। এরপর মৃতের সংখ্যা দুই হাজারে যেতে সময় লাগে ৮ দিন।
তার এক মাস পর ১৯শে মার্চ মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ায়। এরপর ইউরোপে কাবু হয়ে যাওয়ায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে মৃত্যু। প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার মৃত্যু ঘটতে থাকে। ইউরোপের পর আমেরিকায় বিপর্যয় নামিয়ে আনে করোনাভাইরাস।
উহানে প্রাদুর্ভাবের ৯০ দিন পর গত ১০ এপ্রিল কোভিড-১৯ মহামারিতে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা লক্ষ ছুঁয়েছিল। তার আট দিন পর ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু এই সংখ্যাকে দেড় লাখ ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। তার পরের ৫০ হাজারের মৃত্যু ঘটতে সময় লেগেছিল সাত দিন। মৃতের সংখ্যা আড়াই লাখে পৌছতে আরও আট দিন লেগেছিল। তার ১০ দিন পর মৃতের সংখ্যা আরও ৫০ হাজার বাড়ল।
মৃতের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে ৮৬ হাজার ৯১২ জন মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পরের অবস্থানে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৬১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৩৩ হাজার ১৫১ জন। মৃত্যুর তালিকার তৃতীয় অবস্থায় রয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩১ হাজার ৩৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ২৩ হাজার ৯৬ জন। এরপরের অবস্থানেই রয়েছে স্পেন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৩২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে অবশ্য ২য় অবস্থানে রয়েছে এ দেশটি। এখানে ২ লাখ ৭২ হাজার ৬৪৬ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এদিকে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে রাশিয়ায়। আক্রান্তের হিসাবে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে দেশটি। এখানে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৪৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৩০৫ জনের।