সিলভিয়া রোমানো কেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে ধর্মান্তরিত হয়েছেন তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে ইতালীয়ান ম্যাজিস্ট্রেটদের তিনি আরও বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। কেনিয়াতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কল্যাণমূলক প্রজেক্টে কাজ করার সময় দেড় বছর আগে অপহৃতা হন তিনি। পরে প্রতিবেশী দেশ সোমালিয়ায় স্থানীয় জেহাদি গ্রুপ আল শাবাবের কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় মানসিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে তাঁকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করা হয়েছে কি-না কিংবা জানে বাঁচাতে কোথাও কোন অংকের বিশেষ মুক্তিপণ দিতে হয়েছে কি-না সবই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
রোমে আধা সামরিক বাহিনী ‘ক্যারাবিনিয়েরি’র সেনানিবাসে চার ঘন্টার ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সিলভিয়া জানান,”আমাকে খুন করা হবে না এমন নিশ্চয়তা দেয়া হয়। দেড় বছরের বন্দি জীবনের মাঝামাঝি আমি নিজের মধ্যে বেশ পরিবর্তন অনুভব করি। কারারক্ষীরা তাঁদের কৃষ্টি সংস্কৃতি আমাকে জানায়। আমি পবিত্র কোরআন পড়ে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করলে আমার জন্য ইতালিয়ান ভাষার একটি কপি এনে দেয়া হয় কারাগারে। হঠাৎ করে কিছুই হয়নি। মাসের পর মাস বুঝে শুনে ধীরেসুস্থে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি”।
সিলভিয়া বলেন,”কেউ আমাকে বিন্দুমাত্র চাপ দেয়নি কোন কিছু করতে বা যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে। আরবি ভাষা কিছুটা আমি আয়ত্ত করতে পারি এরই মধ্যে। বন্দিজীবনের পুরো সময়ে বিবাহ তো দূরের কথা, কোথাও কারো সাথে আমার কোন প্রকার শারীরিক সম্পর্কও হয়নি। অন্তত চারবার আমার বন্দিশালা পরিবর্তন করা হয়। গ্রামের গহীনে এসব বন্দিশালায় কেউ কখনো আমার সাথে খারাপ আচরণ করেনি। সশস্ত্র কারারক্ষীরা আমাকে আলোবাতাসে ঘোরাফেরার সুযোগ দিয়েছে কারাগারের ভেতরেই”।
এর আগে ১০মে রবিবার রোমের চাম্পিনো বিমানবন্দরে নেমে সিলভিয়া রোমানো প্রথমেই শুভেচ্ছা বিনিময় ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিমানবন্দরে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর জুসেপ্পে কন্তে ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইজি দি মাইও সহ প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের নিকট। জুলিয়া তাঁদের জানান,”শারীরিক ও মানসিক সবদিক দিয়েই আমি পুরোপুরি সুস্থ আছি। আজ আমার জীবনের সবচাইতে আনন্দের দিন। এখন আমি শুধু আমার পরিবারের সাথে সময় কাটাতে চাই”।
এদিকে কেনিয়াতে বসবাসরত ইতালীয়ান নাগরিকদের অনলাইন পোর্টাল মালিন্দি কেনিয়া ডট নেটের পরিচালক ফ্রেদ্দিয়ে দেল কুরাতোলো জানিয়েছেন,”সিলভিয়া যে পোশাক পরিহিত অবস্থায় রোমে গিয়েছেন তার নাম মূলত ‘যিলবাব’, যা কেনিয়া সহ আফ্রিকার বেশ কিছু অঞ্চলে প্রচলিত পোশাক। এই যিলবাব কোনভাবেই কট্টরপন্থী ধর্মীয় পোশাক নয়। তবে মুসলিম মহিলাদের যিলবাব পরিধান করতে দেখা যায়। বিশেষ করে কেনিয়া-সোমালিয়া সীমান্তবর্তী এলাকায় বিভিন্ন গোত্রের লোকদের মাঝে এই পোশাক বেশ জনপ্রিয়”।
সিলভিয়ার যিলবাব পরিধান নিয়ে কথা বলেছেন সমগ্র ইতালির শীর্ষ ইসলামী ব্যক্তিত্ব ড. হামজা পিক্কার্দো, যিনি পবিত্র কোরআনের অফিসিয়াল ইতালিয়ান অনুবাদের জন্য বিখ্যাত। তিনি বলেন,”আমরা দেখবো সিলভিয়া ঠিক এরকম পোশাকই ধরে রাখে নাকি একজন ইতালিয়ান মুসলমান হিসেবে সাধারণ পোশাক বেছে নেয়। পবিত্র কোরআনকে সম্মান করে যে কোন মুসলিম নারীকে ঢিলেঢালা ও বড়সড় পোশাক পরিধান করতে হয়, যিলবাব ঠিক তেমনটাই। ইসলামে পর্দার পরিভাষা হচ্ছে হিজাব, যার মাধ্যমে ঢেকে রাখা কিংবা অদৃশ্য করে রাখা বোঝায়”।