বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমের  বিরুদ্ধে নীতিহীন কর্মকান্ডের অভিযোগ  » «   সাংবাদিক ক্যারলকে গ্লোবাল জালালাবাদ ফ্রান্সের বিশেষ সম্মাননা প্রদান  » «   গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক জালালাবাদ উৎসব প্যারিস অনুষ্ঠিত  » «    সাকিব : নক্ষত্রের কক্ষচ্যুতি  » «   লন্ডনে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী চাটগাঁয়ে মেজবান ৬ অক্টোবর রবিবার  » «   ১১তম মুসলিম চ্যারিটি রান ২০ অক্টোবর ভিক্টোরিয়া পার্কে  » «   ৭৫ শেফ এর অংশগ্রহণে বিসিএর শেফ অব দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত  » «   ৩০ বছরেও ধরা পড়েনি কোনো আসামী, বিচারের দাবীতে মেয়ের সংবাদ সম্মেলন  » «   ইস্টহ্যান্ডসের ফ্রি স্মার্ট ফোন পেলেন ৪০ জন  » «   সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্য পদক ২০২৪’পেলেন কবি, সাহিত্যিক ও সংগঠক ফারুক আহমেদ রনি  » «   টাওয়ার হ্যামলেটসে হোমলেসনেস-এর প্রস্তাবিত নতুন পলিসি সাসপেন্ড করেছেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর  » «   লন্ডনে বিসিএ এ্যাওয়ার্ডস ২৮ অক্টোবর থাকছে নানা চমকপ্রদ আয়োজন  » «   বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৩২নং বাসভবন ভস্মীভূত এবং ভাস্কর্য ভাংচুরের নিন্দা ও প্রতিবাদ  » «    অদ্ভুত দেশপ্রেম ও খাঁটি ব্যক্তিগত স্বার্থ  » «   বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরাবারে বঙ্গবন্ধু লেখক সাংবাদিক ফোরামের স্মারকলিপি প্রদান  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

করোনায় গতি আসছে বাংলাদেশও আলো দেখবে



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বাংলাদেশে এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায়ও করোনায় মৃত্যু পৃথিবীর অন্য দেশের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম। আর সেজন্যই হয়তো গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খুলে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কোনো পথও নেই। নিম্নবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্ত ছোট মাঝারি ব্যবসায়ীরও দীর্ঘমেয়াদি কোনো সহযোগিতা দিতে পারবে না দেশ। স্থবির হয়ে যাচ্ছে অর্থনীতি। এরকম অবস্থা এমনকি ব্রিটেনে। আগামী সপ্তাহে লকডাউন শিথিল হওয়ার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গত দুদিন আগে করোনা বিষয়ক ব্রিফিংয়ে। ইতালি-স্পেনে লকডাউন শিথিল হয়ে গেছে। আমেরিকার একটা প্রদেশে লকডাউন খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে নাগরিক। ভারতও বেশিদিন বন্ধ থাকবে না। সুতরাং এই জায়গায় বাংলাদেশও যদি লকডাউন শিথিল করে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।

মানুষ জীবিত থাকলে ক্ষুধা থাকবে, বেঁচে থাকার জন্য তাকে নির্ভর করতেই হবে আর্থিক সঙ্গতির ওপর। করোনা তো মানুষের ক্ষুধা নিষ্ক্রিয় করে তোলেনি। বরং সত্যি কথা বলতে কি মানুষের ক্ষুধা বাড়িয়েছে। ঘরে বসে থাকা, প্রহর গোনা, সারা পৃথিবীর মানুষের মাঝেই আগামী মুহূর্ত বেঁচে থাকা নিয়ে শঙ্কায় থাকার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মনস্তাত্তি¡কভাবেই মানুষ হতাশ হয়ে পড়ছে। এই হতাশার মাঝে যদি খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়, অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়, তাহলে ক্ষুধার প্রবৃত্তি আরো বাড়ে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই করোনা ভাইরাসের এ সংকটকালে লকডাউনে। পশ্চিমা দেশের সবক’টা দেশই তাদের জনসাধারণের সুরক্ষা দিতে একটা কাঠামোর মধ্যেই নিয়ে রেখেছে গোটা দেশের নাগরিকদের। একটা ড্যাটাবেজের মাঝেই সারাদেশ। সে হিসেবে পশ্চিমের অধিকাংশ দেশের আয়হীন কিংবা স্বল্প আয়ের নাগরিক সপ্তাহে কিংবা মাসে একটা অনুদান পেয়ে থাকে তাদের বেঁচে থাকার জন্য। সুতরাং সে অবকাঠামোর কারণেই দেশগুলোর নাগরিকের করোনায়ও খুব একটা অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হয়নি। বরং কিছু ক্ষেত্রে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে এ অনুদানের পরিমাণ।

খুব স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ এ অবস্থানে নেই। করোনা প্যান্ডামিক শুরু হওয়ার পর থেকেই সরকার তার গড়ে তোলা অবকাঠামো দিয়েই শুরু করেছে দেশটার মানুষ বাঁচানোর সংগ্রাম। দেশের সব মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই কিংবা প্রতি হাউসহোল্ডে অর্থ পৌঁছে দেয়ার প্রক্রিয়ার মাঝে নেই দেশটা। স্থানীয় প্রশাসন বিশেষত প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি কিংবা পৌর প্রশাসন ৯৫ শতাংশ মানুষদের মোটামুটি একটা চিত্র কিংবা প্রতিবেদন তাদের কাছে আছে বলেই আমরা মনে করতে পারি, কারণ স্থানীয় প্রশাসন এসব তো সংরক্ষণ রাখারই কথা। সে হিসেবে করোনা ভাইরাসে আটকে থাকা দেশের মানুষ যাতে অনাহারে-অর্ধাহারে না থাকে সেজন্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রণোদনা জনগণের জন্য একটা বড় ধরনের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা। এই সহযোগিতা স্থানীয় প্রশাসন সৎ কিংবা নিষ্ঠার মধ্য দিয়ে চালালে হাহাকার সৃষ্টির কোনো কারণই থাকতে পারে না। অর্থনৈতিক প্রণোদনা গেছে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, কৃষি, এমনকি কওমি মাদ্রাসায়ও প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। দেশের অভিজাত উকিলরাও সুদহীন ধারের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। বলা যায় সহযোগিতা যাচ্ছে সব জায়গায়ই।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রয়োজনীয় চাল-ডাল-তেলের জোগান কিংবা সহযোগিতা দিয়ে সরকার প্রমাণ করেছে সংকট সময়ে দেশের রিজার্ভে ঘাটতি নেই। এগুলো বণ্টন নিয়ে কোনো কোনো জায়গায় প্রশ্ন উঠেছে। রাজনীতির তথা দলীয় পরিচয় কোনো কোনো জায়গায় সমালোচনা সৃষ্টি করলেও তা ব্যাপক সমালোচিত হয়নি। কিছু কিছু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিকরা শ্রমিকদের বেতন দেননি, সেজন্য শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছে। করোনা প্যান্ডামিকে যেখানে লোকজনের জমায়েতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ এনেছে সরকার, সেখানে ওই অসৎ শিল্পপতিদের কারণে হাজারো শ্রমিক রাস্তায় নেমেছে। অথচ এই ফ্যাক্টরিগুলো শ্রমিকদের অমানবিক শ্রমের ওপর দিয়েই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

পৃথিবীব্যাপী করোনা যুদ্ধের সময়ে জাতীয় ধনিক শ্রেণি এগিয়ে এসেছে। আমাদের দেশে ধনিক শ্রেণির একটা বড় অংশ সেভাবে এগিয়ে আসেনি। গার্মেন্টস মালিকদের একটা অংশ বরং সরকারকে সমালোচিত করেছে। এ প্যান্ডামিকে ক্রীড়াবিদ মাশরাফি যেভাবে সত্যিকার জনপ্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন, সেরকম হয়ে ওঠার কথা ছিল সব জনপ্রতিনিধিকে। যেমন মানবিক হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের অগণিত পুলিশ কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা, সেরকমই হয়ে ওঠার কথা ছিল তাদের। কিন্তু তা না হয়ে কতিপয় মানুষ প্রধানমন্ত্রীর আদেশ-নির্দেশনাকে ফ্যাশন হিসেবে নিয়ে ধান কাটতে গেছেন বিভিন্ন ক্ষেতে। কোনো এমপিরা মূলত ধান কাটতে যাননি। তারা গেছেন ফটো সেশনে। একজন এমপি কৃষকের কাঁচা ধান কেটেছেন, মহিলা এমপি গেছেন সেই একইভাবে দলবল নিয়ে, জমির ধান মাড়িয়ে দিয়েছেন মাঠেই।

এগুলো ছিল অপ্রত্যাশিত। বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ এ মহামারির সময়ে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে। মানবতাবাদী মানুষ বিভিন্নভাবেই এগিয়ে এসেছে। ছাত্রলীগের কিছু কর্মী সত্যিকার অর্থে ধান কেটেছেন। কমিউনিস্ট পার্টি ধান খেতে যেমন থেকেছে, ঠিক তেমনি গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে দাবি আদায়ে ছিল সোচ্চার। করোনাকালে প্রবাসীরা দেশে উপেক্ষিত থাকলেও প্রবাসীদের উদ্যোগে ব্যাপক ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ব্রিটেনের দেশের বিভিন্ন এলাকার অভিবাসীরা এই করোনা সময়ে টেলিফোন ভিডিও আলাপ করে বড় ধরনের ফান্ড সংগ্রহ করেছে। যার অধিকাংশই যার যার এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। বিরোধী দল হিসেবে খ্যাত বিএনপির অভাবী মানুষের মাঝে সহযোগিতা ব্যাপক আলোচনায় আসেনি। এটাই এ দলটির বড় ধরনের ব্যর্থতা এ মহাদুর্যোগের সময়।

করোনা একটা ছোঁয়াচে রোগ, কিন্তু করোনা আতঙ্কটাকে বাংলাদেশে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে, সেখানে করোনা রোগীকে যেন পাপী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাকে দেখা হচ্ছে অস্পৃশ্য কোনো প্রাণী হিসেবে। স্বাস্থ্য বিভাগে কাজ করত যে মেয়েটি, সেই মেয়েটি ছুটিতে আসলে কিংবা আইসোলেশনেই পাঠানো হলে আওয়ামী লীগের নেতা তাকে বাড়ির বাইরে পাতা দিয়ে ঝুপড়ি বানিয়ে তাকে থাকতে বাধ্য করেন, অথচ তার পরিবার তো তার সঙ্গেই থাকতে চেয়েছে। সেল্ফ আইসোলেশনে পরিবার তো সহায়তা করতেই পারে। একজন ডাক্তারের পরিবারকে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য একটা বিরাট গ্রুপ দাঁড়িয়ে গেল। ভাগ্যিস, প্রশাসনের ত্বরিত পদক্ষেপ না থাকলে কি-ই না হতো। একজন হিন্দু বড় ব্যবসায়ী ফ্ল্যাটের সিঁড়িতে মরে পড়ে রইলেন। তার কোনো হিন্দু স্বজন কিংবা মুসলিম কারো কোনো আবেগ অনুভ‚তির সৃষ্টি হলো না সেসময়। তারপর স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতা এসে তার পরিবারের সম্মতি নিয়ে এমনকি মুখাগ্নিটা পর্যন্ত করলেন। সন্তান সম্ভবা নারীকে ফেলে চলে গেল তার স্বজন। পুলিশের বড় কর্তা এসে মেয়েটাকে উদ্ধার করলেন। এমনকি রক্তে ভিজে গেছে তার কাপড়। তবুও মানবিক আবেদনের কাছে হারেননি পুলিশ অফিসার। প্রথমে আমরা মনে করেছিলাম শুধু বিদেশিরাই এ ভাইরাস ছড়াচ্ছে, কিন্তু সময় তো বলে দিল এ মহামারি বিশ্বব্যাপী। ইতালি-ব্রিটেনের মানুষ দেশে গিয়ে অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা পায়নি অর্থ দিয়েও। ব্যবসায়ী চিকিৎসকরা দুর্নাম কুড়ালেও বহু চিকিৎসকের সেবায় প্রাণ পেয়েছে বাংলাদেশ।

অথচ বাংলাদেশে এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায়ও করোনায় মৃত্যু পৃথিবীর অন্য দেশের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম। আর সেজন্যই হয়তো গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খুলে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কোনো পথও নেই। নিম্নবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্ত ছোট মাঝারি ব্যবসায়ীরও দীর্ঘমেয়াদি কোনো সহযোগিতা দিতে পারবে না দেশ। স্থবির হয়ে যাচ্ছে অর্থনীতি। এরকম অবস্থা এমনকি ব্রিটেনে। আগামী সপ্তাহে লকডাউন শিথিল হওয়ার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গত দুদিন আগে করোনা বিষয়ক ব্রিফিংয়ে। ইতালি-স্পেনে লকডাউন শিথিল হয়ে গেছে। আমেরিকার একটা প্রদেশে লকডাউন খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে নাগরিক। ভারতও বেশিদিন বন্ধ থাকবে না। সুতরাং এই জায়গায় বাংলাদেশও যদি লকডাউন শিথিল করে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। তবে দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসতেই হবে। মাস্ক কিংবা গ্লাভসের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার বিকল্প নেই। পরিচ্ছন্নতা দেশের সব মানুষের প্র্যাকটিসের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। যতটুকু সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয়-সামাজিক সভা-সমাবেশে অবশ্যই নিষিদ্ধ রাখাটাই হবে এ সময়ে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। বাঁচতে হলে কিংবা দেশকে বাঁচাতে হলে সরকার কিংবা জনগণ সবাইকে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে।

ফারুক যোশী : কলাম লেখক, প্রধান সম্পাদক; ৫২বাংলাটিভি ডটকম


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক