এ সময়ে বিশ্ব কাঁপিয়ে তোলা একজন যুদ্ধ নায়কের নাম হল ব্রিটেনের ক্যাপ্টন মুর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ছিলেন সম্মুখ সমরের যোদ্ধা। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়ার সময় ছিলেন ক্যাপ্টেন। ১৯৪৫ সালে শেষ হওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক যোদ্ধাই তো পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। অনেক বড় বড় জেনারেল পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন বহু আগে। কিন্তু কাপ্টেন টম মুর দিব্যি বেঁচে আছেন এখনও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তি হয়তো খুঁজলে আরও কয়েকজন পাওয়া যাবে।
কিন্তু নিজের জন্মশতবর্ষের আগে এসে যে অসাধারণ কাজ করে বসলেন ক্যাপ্টেন টম মুর, তা অবিশ্বাস্যই নয় শুধু অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো সরা পৃথিবীর জন্য। যে ব্যক্তি ঘরে বসে নিজের মৃত্যুর প্রহর গোনার কথা, তিনিই করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময়ে ঘরে বসে থাকতে পারলেন না।
ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের কর্মীদের জন্য ফান্ড সংগ্রহের উদ্যোগ নেন এই শতবর্ষী। এ জন্য তিনি ঘোষণা দেন, বেলফোর্ডশায়ারের মারস্টন মোরেটাইনে তার বাড়িতে ১০০বার প্রদক্ষিণ করবেন তিনি।১০০তম জন্মদিনকে সামনে রেখে ক্যাপ্টেন টম মুর তার বাসস্থানের পেছনের গার্ডেনে ১০ দিনে তার ওয়াকিং ফ্রেইম দিয়েই ১০০ বার ঘুরবেন এই প্রত্যয়ের কথা জানিয়ে তিনি জাস্টগিভিং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটা ফান্ড রেইজের কথা প্রচার করেছিলেন। বলেছিলেন মাত্র এক হাজার পাউন্ড তিনি সংগ্রহ করে এগুলো দিয়ে দেবেন তাদের, যারা প্রাণান্ত পরিশ্রমে ব্রিটেনকে বাঁচাতে চাচ্ছে। ব্রিটেনের সবচেয়ে আলোচিত এই সেক্টর হলো এখন তাদের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (এনএইচএস)। এই স্বাস্থ্যসেবা ব্রিটেনে গর্বের একটা জায়গা। আবার এই সেক্টরই অর্থনৈতিক সংকটে ছিল বিধ্বস্ত। রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত জায়গা ছিল এটি। উল্লেখ্য, এই জায়গাটা এক নতুন চিত্র পেয়েছে পৃথিবীর বর্তমান মহাদুর্যোগে। এই দুর্যোগকালীন এরাই হয়ে উঠেছে ব্রিটেনের সবচেয়ে নির্ভরতার স্থান।
অবিশ্বাস্য সাড়া পড়ে তার আবেদনে। তাঁর জন্মদিন পর্যন্ত মাত্র তিন সপ্তাহে ৩০ মিলিয়ন পাউন্ড (৩০০ কোটিরও বেশি টাকা) জমা হয়েছে তার করোনাভাইরাস ফান্ডে। ইংল্যান্ডজুড়ে নতুন ‘নায়কে’র মর্যাদা পাচ্ছেন ক্যাপ্টেন টম মুর। মোড়ে মোড়ে তার নামে বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে ব্রিটেনে করোনায় বিধ্বস্ত মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে। বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী মাইকেল বাল তার নামে গান রচনা করেছেন, ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন…।’
সেই করোনাযোদ্ধা টম মুরের জন্মশত বার্ষিকী পালিত হল কাল (৩০এপ্রিল) ব্রিটেনে। এক অভুতপূর্ব দৃশ্য ছিল তাঁর জন্মদিন ঘিরে । সেনাবহিনীরা তাঁকে দিয়েছে বিশেষ মর্যাদা। মুরের জন্য দেড় লাখের উপর শুভেচ্ছা কার্ড এসেছে সারা ব্রিটেন থেকে। ব্রিটেনের রাণীও পাঠিয়েছেন জন্মদিনের শুভেচ্ছা কার্ড। ১৯২০ সালের ঠিক এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ব্রিটেনের সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। শততম জন্মদিনের আগে যে কাজ করে দেখালেন তিনি, তাতে জাতীয় নায়কে পরিণত হয়ে গেছেন।