প্রকৃতিতে শীতের আড়মোড়া ভেঙ্গে চলছে বসন্তের প্রাণ সঞ্চার আর জেগে ওঠার চাঞ্চল্যের আয়োজন। এ রকম এক দিনে পাথারিয়া পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে বেরিয়েছি। নুড়ি পাথর নিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ টলটলে স্রোতের ঝিরি পেরিয়ে ট্রেইল পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ওঠে গেছে। ওপরে ওঠার সময় চোখে পড়ে ঝিরির পাড় ঘেঁষে ওঠে যাওয়া পাহাড়ের খাড়া ঢালের গায়ে ঝুলে আছে লাল রঙের বর্ণিল ফুল।
এই ফুলের নাম কেওফুল। ফুলটির ইংরেজি নাম Malay Ginger বা Crepe Ginger। White Costus নামেও পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Cheilocostus Speciosus. Costus । গণভুক্ত উদ্ভিদ প্রজাতিটি দক্ষিণ এশিয়া ও এর আশপাশের অঞ্চলের আদি উদ্ভিদ। বাংলাদেশ, ভারত ও চীন থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত আদ্যিকাল থেকে এর রাজত্ব ছড়িয়ে আছে। কালের পরিক্রমায় কেওফুল ক্রমশ কোস্টারিকা, মরিশাস, ফিজি, হাওয়াই সহ ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। আদা গাছের সমগোত্রীয় এই উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধি মূলত ঘটে এর কন্দ থেকে। এর বাইরে পক্কীকূলের মাধ্যমেও এর বীজের বিস্তার ঘটে থাকে।
কেওফুলের ক্যাপসুল আকৃতির বীজ বা ফল পাখির প্রিয় খাদ্য। এর দারুণ ওষধি গুণাগুণ রয়েছে বলে ভেষজ উদ্ভিদরূপেও এর বেশ কদর রয়েছে। গাছের কন্দ বা মূল, পাতা ও বীজ গিঁটব্যথা, অজীর্ণ, পেটফাঁপার প্রতিষেধক হিসেবে কাজে লাগে। এসব প্রতিকারে এর কচিপাতা ও ডগা রান্না করে সবজি হিসেবে ভাতের সঙ্গে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এর বাইরে জ্বর, মাথাব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, প্রমেহ, কৃমি সমস্যা, অপুষ্টি ও চর্মরোগেও এ গাছের বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে।
কোন কোন দেশে এটি শৌখিন ফুল হিসেবে লাগানোও হয়। তবে সুনামের পাশাপাশি কোথাও আগ্রাসী উদ্ভিদ রুপে বদনামও কুড়িয়েছে। পাহাড়ী ঝিরি, খাল ও নদীর ধারে এবং জঙ্গলের ভেজা মাটি কেওফুলের উর্বর জন্মভূমি।
সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল এবং লাল মাটির শালবনে ভাল জন্মে। এর গাছে বর্ষার শেষদিকে শরতের শুরুতে ফুল আসে, থাকে শীত অবধি। টকটকে লাল পুষ্পমঞ্জুরীর উপর ফুটে থাকে সফেদ সাদা ফুল। বিরুৎ শ্রেণীভুক্ত এই উদ্ভিদ উচ্চতায় তিন মিটার পর্যন্ত বেড়ে থাকে।
অঞ্চল ভেদে একে কেওফুল, কেওমূল, বনডুগি, কেমুক, বন্দুই, কুস্তা ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। ভাল থাকুক আমাদের পাহাড় টিলাঞ্চলের আদি বাসিন্দা বর্ণিল রুপসী কেওফুল।
লেখক : ভ্রমণ ও প্রকৃতি বিষয়ক লেখক এবং ব্যাংক কর্মকর্তা।