প্রিয় বাংলাদেশি স্বজন,
জানি কেউ ভালো নেই। বিশ্ব এখন করোনায় আক্রান্ত। কোন দেশ মহামারি পথে। কোন দেশ মহামারিতে। দেশবিধাতাদের দাম্ভিকতা এখনও ঘুরে ফিরে আমরা দেখছি। এখনও অনেকে সৃষ্টিকর্তার অসীমতা বা নানা দৃষ্টান্তকে অস্বীকারের ব্যর্থ চেষ্টায় মত্ত বলা চলে।
প্রিয় বাংলাদেশ ভালো নেই। নিকট অতীতের গ্লোবাল ভিলেজ এর ডিজিটাল সংস্করণ- ড্রিপল ডাবলিউ (WWW) প্রবাস ও দেশ এর নটিক্যাল দূরত্বকে অন্তত মনের দিক দিয়ে কমিয়ে দিয়েছে।
ফলত দেশের খবর, দেশের প্রতিবেশী জানার আগে যেমন প্রবাসীরা হাজার মাইল দূরে বসে জানছে। তেমনি প্রবাসে ঘটে যাওয়া অনেক খবর পাশের ষ্ট্রিটের নেইভারের আগে দেশের আপন জনের কাছে প্রবাসীরা শেয়ার করছেন।
প্রযুক্তির এই কৃতিত্বকে পজিটিবভাবে দেখে বলা যায়- দেশ খুব বিপদে আছে। বিপদে আছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর, শ্রমিক, নিন্ম আয়ের মানুষ। মধ্যবিত্তরা আছেন আরও বিপদে- না পারছেন সইতে , না পারছেন কারো কাছে চাইতে’- এ অবস্থায় ।
তবুও দেড়কোটি প্রবাসী ভালো আছি….
দেড়কোটি প্রবাসীরা বলতে গেলে দ্বিগুণ ভালো নেই। ঘুম থেকে ওঠে বা ঘুমাতে যেতে তাদের নিত্যদিনের দুশ্চিন্তার সাথে আরেকটি বড় চিন্তা নিয়ে কাটাতে হয়, তা হলো- দেশের পরিবার, স্বজন পরিজন।
বলা হয়ে থাকে দেশের বড় শত্রু প্রবাসে হয়ে যায় পরম বন্ধু। এর একটাই কারণ মা-মাটির প্রতি নিখাদ ভালোবাসার টান।
মাতৃভুমিকে সামনে নিয়ে ভাবলে একটি বিষয় পৃথিবীর সব অনাবাসির কাছেই বলা যায় সত্য যে, প্রবাসীর তৃপ্তিবোধ ও সুখপাখিটা আসলে নিজ নিজ দেশের খাচায় বন্দি থাকে। পরিবেশ এবং অবস্থানগত কারণে প্রবাসীদের গায়ের চামড়া, পোশাকে, চলনে, বলনে পরিবর্তনটাকে নিজ দেশের মানুষ তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে নানা ভাবে দেখে থাকে। তবে প্রবাসীরা তাদের মন ও মগজে প্রকৃত পক্ষে তার মাতৃভুমিকে নিয়েই প্রবাসে থাকেন। ব্যক্তি ভেদে, নানা বাস্তবতায় যুক্তি, তর্কের বাটখারা উপর ,নিচু হতে পারে; তবে বিশ্বাস নিয়ে, হলফ করে বলতে পারি – বাটখারায় প্রবাসীদের ভালোবাসার পাল্লা অনেক বেশী ভারী ।
সেই যুক্তির ভিতরে থেকেই জানাচ্ছি- দেড় কোটি প্রবাসী আসলেই ভালো নেই। এখানেও আছে খাবার সংকট। থাকার সংকট। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার সংকট। আছে অর্থনৈতিক সংকট। এসব ছাপিয়ে বলতে গেলে বড় সংকট হয়ে দাড়াচ্ছে- প্রবাসীরা বাংলাদেশে পরিবার পরিজনদের অর্থ সহযোগিতা করতে পারছেন না । বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য সহ ইউরোপের আনডকুমেন্ট ইমিগ্রান্ট হয়ে থাকা প্রবাসীরা করোনা বিপর্যয়ে আছেন চরম অর্থাভাবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়ার্টসআপ, ইমো, ভাইভার, ফেইসবুকে প্রবাসীরা যখন নিজের ভিতরের পাহাড়সম কষ্ট লুকিয়ে কথা বলেন- তখন দেশ থেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অর্থ প্রেরণের কথা বলা হচ্ছে। সমাজের চৌদ্দগোষ্টির অনিয়ম দুর্নীতির নানা প্যাচাল বলেই আসছে আসল কথা- কীভাবে সংসার চলবে, আগামী দিন কীভাবে কাটাবেন- এইসব হজম করে ফোনেটিক কথোপকথন শেষ করছেন প্রবাসীরা। এই চরম ক্রান্তিকালে বাধ্য হয়ে বেকার ঘরে বসে এইসব অনাকাঙ্খিত পাওয়া কষ্টও- ভালো না থাকার অন্যতম কারণ।
এই মহামারি সময়ে মারা গেলে নিজের লাশটা কীভাবে দাফন হবে আমাদের জানা নেই। পশ্চিমাদের ‘রিফিউজি‘ অথবা মানবাধিকার সংগঠনদের দেয়া ‘আনডকুমেন্ট ইমিগ্রান্ট“ তসদিক নিয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ প্রবাসীরা এখন আরও একটি বড় সংকটে আছে ; প্রবাসে তাদের ‘আত্নপরিচয়‘ টা আসলে কী?
যাপিত জীবনে অক্টোপাশের মতো লেগে থাকা বহুমুখী কষ্ট, নি:সঙ্গতা এবং পাহাড় সমান হতাশা নিয়েও আমাদের মনে থাকে প্রিয় বাংলাদেশ । পরিবার , প্রিয়স্বজন, পরিজন, প্রতিবেশেীর ছবি- প্রতিচ্ছবি থাকে চোখের সামনে।
কোবিক- ১৯ পেনডামিক সময়ে এশিয়ায় গণমাধ্যম পর্যবেক্ষকরা বলছেন মাসাধিক দেরীতে হলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার করোনা প্রতিরোধমূলক যে সমন্ধিত ব্যবস্থা গ্রহন করেছে তা প্রসংশাযোগ্য। ব্যক্তিগত মতামত কে শ্রদ্ধা রেখেই বলা যায়- যে, যে দলেরই সমর্থক হোন না কেন- বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার রাস্ট্রনায়কোচিত সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানাতে হয়। একশ্রেণীর মানুষ আছেন, যারা সব সময় ‘নেই- নেই’, ‘আছে-তবুও‘ অথবা ‘কিন্তু…. এটাতো হলো না, ঐগুলো.. হচ্ছে না‘ বলে বেড়ান। তারা স্পষ্টতভাবে স্বীকার না করলেও অন্তত মৌন আছেন যে- বাংলাদেশ সরকার এই সংকটে.দুর্যোগে পাশে আছে। এটাই করোনাসময়ে রাষ্ট্রের সামাজিক কাঠামোবদ্ধ প্রতিচ্ছবি বলে বিশ্বাস করি।
আপনারা ভালো নিয়েই থাকেন…..
সুখের সময় আবেগি হওয়া বাঙালিদের একটি বড় দুর্বল দিক -যা বহু আগ থেকে উচ্চারিত। প্রবাসীদের রেমিটেন্সে যখন বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল হয়। দেশের রিজার্ভ ফান্ডের রেকর্ড পরিমাণ টাকা জমার তথ্য নিয়ে সংসদে এমপি মন্ত্রীরা চিড়াভিজানো কথামালায় গদ গদ করেন। তখনও সংখ্যাগরিষ্ট প্রবাসী নিরব থাকেন। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো- নিজের মেধা, শ্রমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটু সুভাষ ছড়ানোকে অনাবাসিরা তাদের পরম দায়িত্ব হিসাবেই দেখেন। মা- কী সন্তানকে সেবা করার দায়িত্বের কথা কাউকে ঘটা করে বলে? সুসন্তানরাই তো বড় হয়ে মা কে আগলে রাখে সবচে বেশী।
শ্রমে ,ঘামে লেপ্টে থাকা প্রবাসীরা তো বাংলা মায়ের বড় সন্তান। তারা পরিবারের বড় সন্তানের মতো সবকিছু বিলিয়ে দেয় সকলের সুখে। এসব আলোকিত খবরের পিছনের নায়করা আনন্দের সময়ও গদগদ করে না।
আসলেই আমরা অনেক কিছু করিনা ……
দেড় কোটির মতো প্রবাসীরা অনেক কিছু না করলেও আবার ছোট ছোট অনেক কাজ করেন। মধ্যপ্রাচ্যে কোন কণসার্টে যদি একজনও বাংলাদেশী শিল্পী অংশগ্রহন করে, শুধু তার জন্য সীমিত আয়ের শ্রমিকরা কষ্ট করে ছুটি নিয়ে সামনে বসে হাততালি দেয়। দলবেধে গ্যালারিতে বসে শুধু খেলা দেখে উৎসাহিত করে না। গালে লাল-সবুজ একে হাতে উচু করে রাখে বাংলাদেশের পতাকা। খরা, বন্যা, দুর্যোগে প্রবাসীরা কখনও একা, অথবা দলবদ্ধভাবে টাকা তুলে বাংলাদেশে পাঠায়। গণমাধ্যমে কোন মেধাবীর অর্থ কষ্টের কথা শুনলে চিন্তাহীন শিক্ষাজীবনের দায়িত্ব নেয় এই অনাবাসিরা। মহান মুক্তিযুদ্ধের তহবিল সংগ্রহ, আন্তর্জাতিকভাবে কুটনৈতিক চাপ সহ অস্থায়ি সরকার গঠনে প্রবাসীরাই অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছেন।
চেনা বামনের পৈতা লাগে না – বহুল প্রচারিত প্রবাদটি প্রবাসীরা অভিজ্ঞতায় ভালো বুঝেন এবং বিশ্বাস নিয়ে চর্চা করেন বলেই অনেক বিষয়ে নিজ দেশের নাগরিকদের কথায় ফুড়ন কাটেন না। এবং অথবা একটা বিশাল ভাসমান নৌকাতে সুই সমান কয়েকটি ফুটো দিলে কয়েক ফুটা পানি ঢুকলেও যেমন নৌকাটি পানিভর্তি হয়ে ডুবার সম্ভাবনা থাকে না।তেমনি নিজের দুর্যোগ বা দুর্দিনে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে যাওয়া বা অন্যের ভালো দেখলে নিজের অন্ধকারকে অসহনীয়, অসহ্য মনে করা সমাজের কিছু অমানবিকদের নিয়ে প্রবাসীদের মাথা ব্যাথা নেই বলেই প্রবাসীরা মনে করেন।
প্রিয় নেটিজেন, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
করোনা সময়ে বাংলাদেশে হঠাৎ করে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এভাবে যাওয়া ঠিক হয় নি। গেলেও করোনা বিপর্যয়ে সকলকে স্পষ্টতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা –হো ও বাংলাদেশ সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিটি প্রবাসীর মেনে চলা অবশ্যই উচিত। সিংগভাগ প্রবাসী মেনে চললেও এর ব্যত্যয় অবশ্যই ঘটেছে। এজন্য দেশের প্রচলিত আইন অমান্যকারীদের বিষয়ে সরকার প্রদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও সংবাদ পত্র ও গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
পাশাপাশি হোম কোরাইন্টেনে থাকাদের দেখতে বাংলাদেশীদের উৎসক জনতার ভীড় এবং সম্ভাব্য গণভীড় ঠেকাতে পুলিশের লাটিপেঠার খবরও এসেছে। প্রবাসী পরিবারকে হেনস্থা করা, আক্রোশে প্রবাসী পেঠানো, একঘরে করে রাখা, ফেইসবুক লাইভে এসে বাড়িঘর ভাঙ্গার দৃশ্য লাইক র্যিএক্ট কমেন্টস দিয়ে শেয়ার করে অন্যদের উৎসাহিত করার দৃশ্য ডিজিটাল বাংলাদেশসহ দেড়কোটি প্রবাসী দেখেছে।
দোকানে দোকানে- ‘প্রবাসীদের প্রবেশ নিষেধ‘ শতর্কীকরণ বার্তা লাগিয়ে বাংলাদেশকে করোনা ভাইরাস থেকে উদ্ধারে ঝাপিয়ে পড়া সচেতন বাংলাদেশীদেরও উৎসাহ উদ্দীপনাও ঈদের চাঁদ দেখার মতো দলবেধে ঘরে বসে প্রবাসীরা উপভোগ করেছেন।
কোন ভালো কাজ কারো জন্য থেমে থাকে না। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ‘বিনে পয়সায় লাইভে‘ এসে আপনারা শিকড়হীন, কিছুদিনের জন্য বেড়াতে আসা বাংলাদেশীদের নিয়ে অল্পসময়ের জন্য ‘ সিরিয়াস চিকিৎসাবিদ‘ হয়ে কনসার্ণ জানিয়েছেন। অনেকে ভিডিও করে , তড়িঘড়ি এডিট করে নিজের ইউটিউব চ্যানেলকে মনিটাইজেশন করতে ‘প্রবাসীদের কনটেন্ট’ করেছেন। প্রবাসীদের নিয়ে টিকটক করেছেন, ভিউয়ার বাড়িয়ে ‘ফেব টিটকটার‘ তকমা কামাই করেছেন। আপনাদের দৃষ্টিতে -অনাবাসিরা উদৃষ্ট, মাতৃভূমিতে অস্পৃশ্য, করোনাজীবাণুবাহি। এবং এই সুযোগে গোটা প্রবাসীদের গোষ্ঠি উদ্ধারের কাজটি বোধ হয়-বাংলাদেশ আপনাদের মতো কিছু প্রতিভাবান, সৃজনশীল নেটিজেনদের দায়িত্ব দিয়েছে।
প্রিয় নেটিজেন, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। বাংলাদেশের কোটি কোটি তারুণ্যের মাঝে লুকিয়ে থাকা, অথবা ‘কপি কেট‘ চিন্তাশীলতার জন্য আপনাকে অভিনন্দন।
নাথিং ইজ ফ্রি ইনক্লোডিং স্মাইল
নাথিং ইজ ফ্রি ইনক্লোডিং স্মাইল- ইউরোপে বহুল ব্যবহৃত এই মিথটিকে সামনে নিয়ে বলি- দেরীতে হলেও অনাবাসিরা আত্নসমালোচনার একটি ক্ষেত্র পেয়েছেন। আপনাদের এই প্রয়াস, ক্রোধ, অবহেলা, অপমাণ আমাদের জন্য বলতে গেলে একটি সচেতন বার্তাই দিয়েছে। বলা হয়ে থাকে- অবস্থানগত উচু থেকে নিচের অবস্থান সহজে যেমন দেখা যায়। তেমনি উপরে ওঠার কাল- টাকেও অনুধাবন করা যায়।
আপনাদের দৃষ্টিতে-অনাবাসিরা বুদ্ধিতে মাথামোটা, গায়ে গতরে খাটে বলে মধ্যপ্রাচ্যে কুচকুচে কালো। ইউরোপে ঠান্ডায় কামলা খাটে বলে দুধফাটা সাদা। কোনটাতেই বাংলাদেশী হাব-ভাব নেই।
একটি দিক আপনাদের জানা নেই। যা আপনাদের নেই , প্রবাসীদের বেলায় ধ্রুভ সত্য হয়েই আছে; নাথিং ইজ ফ্রি ইনক্লোডিং স্মাইল- এর মতো। তা হলো- রাত-দিন খেটে অর্থ উপার্জনের সময়ে প্রবাসীর ঘামগন্ধটার কাছে বিশ্বখ্যাত ইটারনিটি ব্রান্ড এর ফ্যাগনেন্স হার মানে শ্রদ্ধাবনত হয়ে। উন্নত দেশগুলো তাদের শ্রমেই হাসে। বাংলাদেশ ব্যাংক সুইচ ব্যাংকে মওজুদের অংক বাড়ায়। আমলা-এমপি, মন্ত্রি, জনপ্রতিনিধি, চোর -বাটফার খুশিদে গদ গদ করে।
করোনা নিয়ে আপনাদের যাপিতজীবনবোধ ও চিন্তা চেতনা নিয়েও আমাদের তেমন মাথা ব্যাথা সঙ্গত কারণেই নেই। আমাদের স্বজন, পরিজন, প্রিয়জন, নাড়িপোতাভূমির মায়া আমরা ছাড়ছি না। এটা ছাড়ার অধিকার মা-মাটি কাউকে দেয় নি।
স্বজনদের অন্তত মসজিদের পাশে কবর দিতে বাধা দিওনা
ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, আমেরিকায় মৃত্যূর মিছিল গণমাধ্যম ও স্যোসাল মিডিয়ায় সবাই জানছেন, চোখে দেখছেন। হাসপাতালে করোনায় মৃত্যুররণকারীদের লাশ রাখার স্থান নেই। গণকবর দিয়েও মৃত মানুষের দীর্ঘ লাইন কমানো যাচ্ছে না। স্বজনরা শেষবারের মতো মৃতব্যক্তির মুখটিও দেখতে পারছে না। জানাজায় শরীক হতে পারছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশকে হুশিয়ার করছে বার বার। সরকারও হার্ড লাইনে, বলছে -হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য। সেনাবাহিনী , পুলিশ জীবনের ঝুকি নিয়ে দেশের সেবায় রাস্তায় আছে রাত-দিন। লকডাউনে আপনারা থাকার অনুরোধ করার মতো মানষিক শিষ্টাচার সচেতনভাবেই করছি না। আমরা জানি অনাবাসির চেয়ে আপনারা অনেক জ্ঞানী, মানি এবং অনুভুতিপ্রবণ।
মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তি প্রজন্ম হিসাবে মৃত্যুর সারি সারি লাইন দেখিনি। ভয়াবহ বন্যায় ভেসে যাওয়া লাশের ছবি দেখিনি। কলেরায় মারা যাওয়া মানুষ দেখিনি। দুর্ভিক্ষে লন্ডভন্ড গোটা বাংলাদেশ দেখিনি। তবে ব্রিটেনে দশ বছরের স্যোসাল সার্ভিসে ফ্রন্টলাইনে লীডারশীপ জবের অভিজ্ঞতা নিয়েই আমি মাতৃভূমির আসন্ন মহামারি নিয়ে চরম দূশ্চিন্তায়। ওয়াল্ড হেলথ ওর্গানাইজেশন এর তথ্যমতে ( করোনা পেনডামিক বিষয়ে তাদের প্রতিটি দেশ নিয়ে তাদের প্রকাশিত তথ্য (শংকা, অশনি সংকেত) সত্যি প্রমাণিত হচ্ছে। হো- বলছে, এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশ মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হচ্ছে।
”…….অনাবাসি আমার চোখের সামনে ভাসছে আমার পরিবার,স্বজন, প্রিয়জন, পরিজনদের মুখ। চোখে ভাসছে প্রাইমারি স্কুলে ঝরে পড়া বন্ধুর মুখ, যে দিনমজুরের কাজ করে,পাশের বাড়ির প্রিয় চাচা যিনি স্টোক করে গৃহবন্ধি, প্রতিবেশী ফুফু- যার কোন সন্তান নেই বৃদ্ধ বয়সে একা থাকেন ঘরে, গ্রামের মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীর বাবা-মা, যাদের সাহায্য করার কেউ নেই। প্রতিবেশী বিধবা দিদির মুখ ভাসছে, ভাইরা সম্পত্তি দখল করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে অনেক আগে; যে এখন পরিচিত এক দিদির ঘরে থাকে। বাড়ির সামনের দোকানের প্রিয় চা স্টল এর ভাইটির মুখ, যে বাকীতে খাইয়ে ক্ষুধা মিটিয়েছে স্কুলজীবন,বাড়ির পাশের মুদি দোকানের চাচা- বাড়ি থেকে বিতাড়িত মানুষটির সারাটা সময় কাটে এই দোকানেই।
করোনা ভাইরাসে অথবা করোনা মহামারি সময়ে মারা গেলে তাদের দাফন- কাফন করবে কি কেউ?
ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে কোভিক-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সরকারি তথ্য মতে – মৃতের সংখ্যা একশ হয়নি। এরই মধ্যে লাশ নিয়ে শুরু হয়ে আতংক। মসজিদের সার্বজনীন লাশ বহনের খাটিয়া মিলছে না গরিবের জন্য বলে খবর ভাইরাল হয়েছে ইতিমধ্যে। চলছে আরও নানা বৈষম্য, কুসংস্কারের সামাজিক রীতিনীতির দোহাই।……আর দুসংবাদের শব্দমালা যোগ করছিনা সচেতনভাবেই।
প্রবাসীর লাশ প্রতিকী অর্থেই ভারী। …. মধ্যপ্রাচ্যের হীমাগারে পড়ে থাকা লাশ। চাদা তুলে সককিছু ঠিক করে দিলেও রয়েছে বিমানের লাশ বহনের বিড়ম্বনা। দেশে স্বজনদের লাশ গ্রহনে অনীহা ইত্যাদি অগুণতি সমস্যা, অবহেলা,বৈষম্য ও কষ্টের অভিজ্ঞতা এবং সংবাদ দেড়কোটি অনাবাসি ভালো করেই জানেন।
এসব বাস্তবতায় প্রবাসীর মৃতদেহ দেশে যাবার বা পাঠানোর চিন্তা যে অলিক তা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বুঝিয়ে দিচ্ছেও।
করোনা মহামারিতে একটাই মিনতি, আমাদের স্বজনদের জানাজায় শরিক না হয়ো না -কোন সমস্যা নেই। অন্তত মসজিদের পাশে কবর দিতে বাধা দিওনা।।
করোনায় ভালো থেকো বাংলাদেশ। নিরন্তর প্রার্থনা।
লেখক : আ নো য়া রু ল ই স লা ম অভি ; কবি, সাংবাদিক, লন্ডন।