অদৃশ্য শত্রু নভেল করোনা জীবাণুটি চিনের উহান থেকে আমেরিকা, ইউরোপ দাপিয়ে বেড়ালেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ‘সাত বোন’ -এর মধ্যে পাঁচটি রাজ্য যথাক্রমে অসম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা এখনও মারণব্যাধী করোণা ভাইরাস থেকে মুক্ত আছে। সেভেন সিস্টারস-এর অন্যতম অন্য দুটি রাজ্য যথাক্রমে মণিপুর ও মিজোরামে একজন করে করোণা সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।
গত ২২মার্চ, রবিবার সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টা প্রথম সমগ্র দেশব্যাপী ‘জনতা-কার্ফু’ পালিত হয়। ২৪ মার্চ, মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে সমগ্র দেশব্যাপী ২১ দিনের লক-ডাউন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশের অন্যান্য রাজ্যে করোনা তার দৌরাত্ম্য দেখালেও অসমসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের পাঁচটি রাজ্যে করোনা সংক্রমণের কোনও কেস এখনও ধরা পড়েনি। ফলে, জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যদিও গত শুক্রবারের জুমার নামাজ বড়ো জামাত ছাড়া-ই তিন/চার জন করে মুসল্লির উপস্থিতিতে আদায় করা হয়েছে সরকারি নির্দেশ মেনে। শহর ও শহরতলিতে লক-ডাউন পুরোপুরি মানা হলেও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সেই লক-ডাউন পুরোপুরিভাবে মানা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
এদিকে, রাজ্যের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিত্ত ও পিডব্লুডি মন্ত্রী ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা তাঁর কর্মতৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। রাজ্যের রাজধানীশহর গুয়াহাটির দুটি স্টেডিয়ামকে করোনা আক্রান্তদের সেবা দানের লক্ষ্যে অস্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তরিত করেন। রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে শুধু করোনা আক্রান্তদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়ার পাশাপাশি মেডিক্যাল কলেজে পাঠরত শেষ সেমিস্টারের পড়ুয়াদের করোনা মোকাবেলার জন্য তৈরি থাকতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসারত রোগীদের নিকটবর্তী বেসরকারি হাসপাতাল ও সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন।
সপ্তাহান্তে দরিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী রোগীদের চিকিৎসা বাবদ বেসরকারি হাসপাতালের যাবতীয় বিল সরকারের পক্ষ থেকে মিটিয়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন। শিলচরের মেডিক্যাল কলেজে শিশু ও প্রসূতি বিভাগ ও বার্ন ইউনিট ছাড়া সমগ্র কলেজ সম্ভাব্য করোনা আক্রান্তদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, শিলচরে আরও তিনশত শয্যাবিশিষ্ট অস্থায়ী হাসপাতাল শীঘ্রই নির্মাণ করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে টেন্ডার ডাকা হয়েছে বলেও তিনি জানান। তবে সর্বাবস্থায় লক-ডাউনের দিনগুলোতে নিয়ম মেনে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করার জন্য জনগণের প্রতি আবেদন জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত অসমে যদি কেউ করোনায় আক্রান্ত না-হন, তবে স্বস্তি! কেননা, বহির্দেশ থেকে যাঁরা ইতিপূর্বে রাজ্যে এসেছেন, তাঁদের ১৪ দিন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, করোনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে, সামাজিক মেলামেশা থেকে বিরত থাকা। কিন্তু যদি কোনওক্রমে অসমে তা ছড়িয়ে পড়ে, তা কন্ট্রোলে আনা দুঃসাধ্য ব্যাপার বলে তিনি বার বার সতর্ক করে দেন।
এদিকে, জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রীমতি নির্মলা সীতারমন আজ সোমবার থেকে সরকারি ও বসরকারি ব্যাঙ্কগুলো খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এটিএম কাউন্টারগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থ রাখতেও অর্থমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।