প্রবাসী মানেই করোনা ভাইরাস এই আতংক ছড়িয়ে মানুষকে আতংকিত করবেন না। যেহেতু বাংলাদেশে জন্ম এবং পরিবার পরিজনকে সুখে রাখার জন্যই বেশিরভাগ প্রবাসে থাকেন তাই তারা দেশে আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রবাসীদের নিয়ে একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন, সত্যিই কী বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার জন্য প্রবাসীরা দায়ী নাকি দায় আমাদের সবার। প্রবাসে যারা আছেন, তাদের চেয়ে বড় দেশপ্রেমিক আর কেউ হতে পারেনা। দেশে থাকা পরিবার পরিজন নিয়ে সবচেয়ে বেশী চিন্তিত প্রবাসীরাই। দেশকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রবাসীদের সব থেকে বেশী ভূমিকা রাখেন।
কথায় আছে, প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই যেমন ভাল দিক আছে ঠিক তেমনি উল্টো দিকও আছে। প্রবাসীদের মধ্যে অনেকেই আছেন দেশের সুনাম ক্ষুন্ন করছেন। দেশকে ভুলে তারা নিজেদের নিয়ে বেশী চিন্তিত আছেন। আবার অনেকে বিভিন্ন দেশে গিয়ে নাগরিকত্ব লাভ করেছেন এবং দেশকে কথায় কথায় তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছেন। বর্তমানে অনেক প্রবাসীই করোনা ভাইরাসের ভয়ে দেশে গিয়ে কাপুরুষের পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া ব্যাপক হারে বিশ্বে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত দেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন।
করোনা ভাইরাসের প্রস্তুতি হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সহ সরকারের বিভিন্ন নিতীনির্ধারকরা বার বার বলেছেন, বাংলাদেশ করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুত আছে। এছাড়া অনেক মন্ত্রী কথায় কথায় বলেন আমরা সিঙ্গাপুর আর কানাডার মত উন্নত দেশে পরিনত হয়েছি। কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারেই বিপরীত। সব দিক দিয়ে না গিয়েই আসুন স্বাস্থ্য বা চিকিৎসার দিকে একটু নজর দেই।
আমরা যদি করোনা মোকাবেলায় সম্পূর্ন প্রস্তুত ছিলাম তাহলে নিচের প্রশ্নের উত্তরগুলো একটু জানতে চাইব-
১। এয়ারপোর্টে করোনা ভাইরাস সনাক্ত করণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন?
২। বাংলাদেশের তিনটি এয়ারপোর্টে চারটা স্ক্যানিং মেশিনের তিনটে তখন নষ্ট ছিল কেন?
৩। এয়ারপোর্টে প্রবাসীদের ভাল ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে বাড়িতে পাঠিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন কেন?
৪। করোনা সনাক্তকরনের কীট মাত্র ২ হাজার কেন?
৫। করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দিবেন ডাক্তারদের নিরাপদ পোষাক নেই কেন?
৬। কেন ঢাকা ছাড়া দেশের আর কোথায়ও করোনা ভাইরাস পরীক্ষার সরঞ্জাম নেই?
৭। প্রবাসীরা যদি দেশে আসে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা আগে করা হয়নি কেন?
-
এতো বললাম আগের যা করনীয় ছিল তা না করে বড় বড় কথা বলা এবং সম্পূর্ণ ব্যার্থ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের কথা কিন্তু তবুও অনেক আমলাই এখনো বলছেন আমরা করোনা মোকাবেলায় সম্পূর্ন প্রস্তুত আছি। আর তার নমুনা উপরেই বললাম। এখানেই শেষ নেই। স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের হাসপাতাল গুলোতে বালিশ, পর্দা সহ বিভিন্ন কান্ডে কোটি কোটি টাকা লোপাট করার ইতিহাস সবাই জানেন, সেটা নাই বা বললাম।
এবার আসি হোম কোয়ারেন্টাইন বা কোয়ারেন্টাইন প্রসঙ্গে, কোয়ারেন্টাইন কি সেটা নিয়ে রয়েছে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক। তাই অনেকেই কোয়ারেন্টাইনে থাকতে চান না। কোয়ারেন্টাইন অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পৃথক থাকা। তবে কোয়ারেন্টাইন মানে এই নয় যে, আপনাকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেয়া হলো। যদি কোনো ব্যক্তির করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে তাকে জনবহুল এলাকা থেকে দূরে রাখতে এবং ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কিছুদিন আলাদা থাকতে বলা হয়।
ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার পর থেকে রোগের পূর্ণ প্রকাশ হতে ১৪ দিন সময় লাগে। সে জন্য হোম কোয়ারেন্টাইন করতে বলা হয়েছে ১৪ দিনের জন্য। এই ১৪ দিনের মধ্যে যদি কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না হন তাহলে তিনি স্বাভাবিক ভাবেই চলাফেরা করতে পারবেন।
হোম কোয়ারেন্টাইন মানে আপনি থাকবেন নিজের বাড়িতে। হোম কোয়ারেন্টাইনে আপনি যা করবেন-
১। নিজের বেডরুমে একা থাকুন।
২। সম্ভব হলে নিজের আলাদা টয়লেট ব্যবহার করুন।
৩। নিজের বিছানা, তোয়ালে, গামছা, আলাদা ব্যবহার করুন।
৪। যথাসম্ভব সাক্ষাৎ এড়িয়ে চলুন, এমনকি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও।
৫। যে কারও সামনে মাস্ক পরে থাকুন।
৬। অন্যের সঙ্গে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখুন।
৭। ঘন ঘন হাত ধুয়ে ফেলুন। যেসব জায়গায় বারবার স্পর্শের সম্ভাবনা আছে, সেগুলো দিনশেষে ভালো করে জীবাণুনাশক দিয়ে মুছে ফেলুন। যেমন দরজার হাতল, কম্পিউটার, ফোন, টয়লেট ইত্যাদি।
কিন্তু আমরা কাজের কাজ কিছুই করছি না বরং তেল মারতে ব্যস্থ আছি। আমাদের আগেই উচিত ছিল নিচের ব্যবস্থা নেওয়া তা না করে আমরা সাধু সাজার চেষ্টা করছি।
১। হোম কোয়ারেন্টাইন মানে কি সেটা প্রবাসীদের বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া।
২। যারা হোম কোয়ারেন্টাইন বুঝেন না তাদের এয়ারপোর্ট থেকেই নির্ধারিত কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে রাখা।
৩। ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর উক্ত ব্যাক্তি যদি করোনা আক্রান্ত না হন তিনি নিরাপদ এটা সবাইকে বুঝিয়ে বলা।
৪। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যাক্তিদের স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বিষয়টা তদারকী করা।
এছাড়া দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সতর্কতা অবলম্বন না করে এত মানুষ নিয়ে প্রেসব্রিফিং করাটা বোকামী ছাড়া কিছুই না। অপরদিকে করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরণে সেতুমন্ত্রী এত মানুষের জনসমাগম করিয়ে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশংকা সৃষ্টি করেছিলেন। প্রবাস থেকে সরকারে বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা বিদেশ সফর শেষে যারা মার্চে দেশে ফিরেছেন তাদের অবাধে ঘুরতে দেওয়া এবং শুধু মাত্র প্রবাসী নামক পরিবারের চাহিদা পূরনে দেশে যাওয়া সৈনিকদের হেনস্তা করার নাম করোনা মোকাবেলায় সম্পূর্ন প্রস্তুতি বলা যায় না।
-
এই প্রবাসীদের উপর রাগ দেখাচ্ছেন কেউ কেউ। কেন? করোনার সময় দেশে ফিরেছে বলে? কিন্তু পৃথিবীর কোন দেশের মানুষ এটা করেনি, সব দেশে এটা হয়েছে। যে কোন সময় যে কোন পরিস্থিতিতে নিজের দেশে ফেরা মানুষের মৌলিক অধিকার। পৃথিবীর কোন দেশ এটা থেকে তার নাগরিকদের বঞ্চিত করতে পারেনা। করোনার এ দু:সময়ে প্রবাসীদের মধ্যে বড়জোর ৫ শতাংশ দেশে ফিরেছেন। দেশে তারা ফিরেছেন রোগ সংক্রমনের উদ্দেশ্য নিয়ে না। তাদের অনেকের অসচেতনা ছিল হয়তো কিন্তু তবু করোনার সংক্রমনের জন্য তারা দায়ী না।
আর যদি বলেন প্রবাসীরা দোষী তাহলে আমি বলব, প্রবাসীরা যতোটুকু দোষী, ততোটুকু আমরা সবাইও দোষী।
আমরা কি জনসমাগমের নিয়ম মানি?
আমরা কি করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানি?
আমরা কি বাজার থেকে সীমিত জিনিষ কেনার নিয়ম মানি?
আমার কি আমাদের পরিবারের একজনও আক্রান্ত হলে বাকীদের প্রতি দায়িত্ব সচেতন থাকি।
পারলে উপযুক্ত জায়গায় ক্ষোভ দেখান। এয়ারপোর্টে সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা না দেখে প্রবাসীরাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিনে। প্রতিবাদ করুন সঠিক জায়গামত এতে প্রবাসীরাও আপনাদের পাশে থাকবে।
পরিশেষে এটাই বলব, প্রবাসীদের ভালোবাসুন, একজন আরেকজনের সাথে বিবাদে জড়াবেন না। এই প্রবাসীদের মধ্যেই আপনার অনেক আত্বীয় স্বজন আছেন। এই প্রবাসীরাই সবার আগে পরিবার সহ আপনাদের পাশে দাঁড়াবে। এখন মাত্র শুরু, হয়ত এমন আরো অনেক খারাপ দিন আসছে আমাদের সামনে। এছাড়া উপরে আছেন মহান আল্লাহ্, তিনিই সব বিপদ মুক্ত করার মালিক।
- আমিনুল হক: আরব আমিরাত ব্যুরো, ৫২ বাংলা টিভি