সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন
করোনাভাইরাস মহামারিতে রুপ নেয়ার খবরটি মোটামোটি সব রাষ্ট্র আন্দাজ করেছে। যদিও পৃথিবীর অনেক দেশ এর ভয়াবহতা নিয়ে নিজ দেশের নাগরিকদের কাছে তাদের করণীয় বা সেইফগার্ড বিষয়ে কোন প্রদক্ষেপ নিতে গড়িমসির খবরও গণমাধ্যমে প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডুবে থাকা সিংহভাগ ‘ভোতাঅনুভূতির জেনারেশন’ এর-ও সচেতনতায় জেগে ওঠার কোন আলামত নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-হো, তাদের নিয়মিত ব্রিফিং এ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় সকল তথ্য- গোটা বিশ্বে নিজ নিজ ভাষায় অনুদিত হয়ে ছড়িয়ে আছে; অন্তত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দৃশ্যত তা-ই বলছে।
সম্রাট আকবর এর শাসন আমল সময়ে বিখ্যাত মিথ ‘রোগীর চেয়ে ডাক্তার বেশী’ বলতে গেলে করোনাভাইরাস আতণ্কের এইসময়ে ধ্রুবসত্য হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। ফলত ইউটিউব মৌলানার স্বপ্নে পাওয়া 1.Q7+6=13 করোনার ঔষধ তথ্য এবং পরে তা আবিস্কার হওয়ার পরেও তাদের আবিস্কৃত পথ্যে করনোভাইরাসে জনিত কোন রোগীর ভালো না হওয়ার চরম হতাশা। ভারতে গো মুত্র পান ও গোসল রেমিডি পালন করে অসুস্থ হয়ে স্বয়ং ভারতীয় এক ধর্মগুরুর হাসপাতালে ভর্তি ইত্যাদি। মূলত এইসব নগ্নবোধ ও চিন্তার মানুষের যারা অনুগত, তাদের নেংটা করে, গালে সজরে অসংখ্য চপেটাঘাত করার বিকল্প নেই মনে করেই হয়তো বিষয়টিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের অতিবোদ্ধা বলে পরিচিতরা এগুলোকে এখন আর ‘ভাইরাল কনটেন্টে’ রাখছেন না।
তবে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে সবচেয়ে মনখারাপের খবর হলো- প্রবীনদের নিয়ে। ব্রিটেনের মূলধারার কয়েকটি সংবাদ পত্রে প্রকাশ পেয়েছে করোনা মহামারির দৃশ্যের ভিতরের কয়েকটি খবর। গার্ডিয়ান প্রথম খবরটি ছাপলেও ব্রিটেনের প্রখ্যাত প্রায় সবগুলো সংবাদপত্র একই তথ্যকে সামনে নিয়ে তাদের সম্পাদকীয় নীতিতে সংবাদ প্রকাশ করেছে। সংবাদের যার সারকথা হলো- করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যায় সবচেয়ে বেশী হলেন ৬০ বছর উর্ধ্ব মানুষ। এবং এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যায়ও এই বয়স্করা বেশী। সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যায় প্রবীদের সংখ্যা হাতে গোনা । হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনেও প্রবীনদের সংখ্যা বেশী।
ভয়াবহ তথ্যটির বিস্তারিত প্রথম প্রকাশিত হয় ইতালীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চলমান ইনসিডেন্ট থেকে। তথ্য বলছে , ইতালীর একটি সরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথম জানিয়েছে , করোনাভাইরাস দিন দিন যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ,তাতে করে নিকট সময়ে অসুস্থ বয়স্কদের হয়তো হাসপাতালে ভর্তি করা না-ও হতে পারে। অপেক্ষাকৃত কম বয়সী; যাদের হিষ্ট্রিগত বড় কোন ধরণের রোগবালাই নেই, তাদের সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশী বিধায় প্রবীনদের হাসপাতালে ভর্তি না করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে ! অর্থাৎ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রবীনরা ফাস্ট প্রায়োরিটিতে আর নেই।
কভিক ১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী দেশ এর তালিকায় প্রথমে উঠে এসেছে ইতালীর নাম। সেখানে মৃত্যবরণকারীদের তথ্য বলছে- সিংহভাগই বয়স্ক,যারা বিভিন্ন ব্যধিতে পূর্বে থেকে ভূগছিলেন। ইতালীতে করোনায় মৃত্যুর মিছিলের সংখ্যাতত্বে রাখা হয়নি দেশটির কেয়ার ও নার্সিং হোমে মৃত্যু বরণকারী স্পেশাল নিডেডদের তথ্য। যেটি প্রকাশিত হলে সন্দেহাতীতভাবে বেরিয়ে আসবে গা শিউরে ওঠার মতো তথ্য।
বলা হয়ে থাকে -দুর্যোগ মহামারিতে মানুষের মানবিকবোধ কমে যায়। বিশেষ করে তা যদি হয়- প্রাণঘাতি কোন কিছু। ব্রিটেনে স্যোসাল হেলথ কেয়ার সার্ভিস এবং হেলথ এন্ড সেফটি নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের অভিজ্ঞতা হলো- কঠিন পরিস্থিতিতে যে কোন বয়সের ভ্যোনারেবল মানুষরা সবচেয়ে বিপদের সম্মুখী হয়ে থাকেন। এবং এরকম পরিস্থিতিতে তাদের মৃত্যুর হারও সবচেয়ে বেশী।
ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের তথ্যমতে- ব্রিটেনে উইন্টারে প্রবীনদের মৃত্যুর হার ৬৫ভাগেরও উপরে। এবং এই সময়ে করোনামহামারিতে তাদের আক্রান্তের ঝুকি খুবই প্রকট বলে এনএইচএস থেকে সতর্কবার্তায় প্রতিটি হেলথ সার্ভিসকে জানানো হয়েছে। স্পেশাল নিডেড ও বিশেষ করে ৬০ উর্ধ্ব বয়স্কদের বিশেষ যত্ন নেবার জন্য হেথল প্র্যাকটিকশনারও সকলকে বিশেষ করণীয় নির্দেশনা ও পরামর্শগুলো ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে।
বলা হচ্ছে ২২মার্চ রবিবার মাদার্স ডে টি হবে এযাবতকালের সবচেয়ে বেদনাবহ দিন। ব্রিটেন জুড়ে অসংখ্য বৃদ্ধ বাবা -মা আছেন, যারা স্বাস্থ্যগত অথবা বার্ধক্যজনিত কারণে নিজেদের দৈনন্দিন কাজ করতে অক্ষম বিধায় রেসিডেন্সিয়াল কেয়ার হোম ও নাসিং হোমে থাকেন। মাদার্স ডে,ফাদার্স ডে, ক্রিসমাস ডে-এইসব বিশেষ দিনগুলোর জন্য প্রায় প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকেন তাদের সন্তান-স্বজনদের সাথে কিছু সময় কাটানোর জন্য করোনাভাইরাস আতন্ক স্পষ্টত তাদের মনে দূ:খ,বেদনা জাগিয়েছে। সচেতনভাবেই দুপক্ষই এই সময়ে মিলিত হবার সাহস পাচ্ছেন না।
মাদার্স ডে- তে পাবিবারিক সম্মিলনের ব্রিটিশ সংস্কৃতির চিরায়ত দিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে তাকেও আবেগঘন হতে দেখেছেন গোটা ব্রিটেনবাসী। করোনা মহামারির শংকায় বরিস জনসন তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় এটি এড়িয়ে গেছেন। এবং আবেগঘণ মূহুর্তে এসম্পকে কোন সম্পূরক প্রশ্নও কেউ মন খারাপ নিয়ে করেননি।
সব তথ্য-উপাত্ত স্পষ্টত বলছে – করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সবচেয়ে বেশী ঝুকিতে আছেন বয়স্করা। এতথ্যটি ওয়াল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হো) ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে সকল দেশে-ও। ফলত শুধু শুধু ব্রিটেন নয়, সকল দেশের করোনাভাইরাস আক্রান্তে আমাদের প্রবীনরাই মোটাদাগে স্বাস্থ্যঝুকিতে আছেন।
বলা হয়ে থাকে- মানবিকবোধ ধারণ এবং চরিতজীবনে তা চর্চা- মুখে বলা সহজ হলেও বাস্তবতা হলো- এটি অত্যন্ত কঠিন কাজ। বিশেষ করে দুর্যোগ ও আতন্কিত সময়ে। তারপরও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে আমাদের কাছে কিছু সুনিদৃষ্ট কাজ করা এবং অন্যকেও মানবিক কাজে অনুপ্রাণীত করা কঠিন নয়।
আমরা কেউ-ই বাবা-মা বিহীন নয়। পার্থক্য হয়তো কারো বাবা- মা এই পৃথিবীতে নেই। অথবা তাদের থেকে নানা কারণে অবস্থানগত দূরে আছি। বেশীরভাগের পাশে আছেন তাদের প্রিয় সন্তান-পরিবার-পরিজন-প্রতিবেশী। আছেন যুদ্ধবিধ্বস্থ রিফিউজি, হোমলেসরাও।
করোনা প্রসঙ্গে মহামারি, দুর্যোগ ও আতন্কের কথা আমরা সবাই যুক্তিসঙ্গতকারণেই বলছি। এইসব কিছুতেই আমাদের প্রবীন, শিশু, তরুণ, যুবা আছেন। বাবা-মা,সন্তান, পরিবার, পরিজন, স্বজন,বন্ধু,প্রতিবেশী ; এরাই আমাদের প্রাণ । এই দুর্যোগে বিশেষজ্ঞদের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তাদের পাশে যার যার অবস্থান থেকে দাড়ানোর মতো মহৎ, মানবিক কাজ দ্বিতীয়টি নি:সন্দেহে নেই বলে বিশ্বাস করি।
বিশেষ করে, প্রবীনদের প্রতি দ্বিগুন যত্নবান হই। ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক মুহুর্তের ভাবনায়, আমরা সন্তানরা- আমাদের বাবা-মাদের জন্য করোনামহামারি সময়ে ‘প্রতিকী বাবা-মা‘ হয়ে দায়িত্ব নেয়া খুব সহজ । হলফ করে বলতে পারি- একটি হবে আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠতম কাজ। পৃথিবীর সকল মানুষ ভালো থাকুন। সন্তানের কোলে- দুধে -ভাতে থাকুক আমাদের বাবা-মা।
লন্ডন, একুশ মার্চ, দুই হাজার বিশ
আ নো য়া রু ল ই স লা ম অ ভি; কবি, সাংবাদিক
আরও পড়ুন:
আমাদের ভোটে আফসানাও পার্লামেন্টে ছড়াবেন বাঙালির আলোর স্ফোরণ !
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন