স্পেনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার এক লাফে বেড়েছে ৮০ শতাংশ। এরপর প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আরও মানুষের সংক্রমণ ঠেকাতে সোমবার থেকে দেশটির সব স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরআগে খবর পাওয়া যায় স্পেনের রানি লেতিজিয়া করোনভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। স্পেন সরকারের এক মন্ত্রীও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে ওই মন্ত্রীর সংস্পর্শে এসেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন রানি।গেল শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানে স্পেনের মন্ত্রী আইরিন মনতেরোর সঙ্গে করমর্দন করেছিলেন রানি লেতিজিয়া।
কাতালোনিয়া এবং গ্যালিসিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শনিবার থেকে বন্ধ হচ্ছে। বাকিগুলো বন্ধ হবে সোমবার থেকে। আর মাদ্রিদ ও লা রিওজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্তত দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে বন্ধের এ মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে।
এরমধ্যে বৃহস্পতিবার স্পেনের ৪টি শহর অবরুদ্ধ করা হয়েছে। স্পেনে এটিই প্রথম এ ধরনের পদক্ষেপ। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের কারণে সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেয়া হবে সে বিষয় দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। সাম্প্রতিক এ পরিস্থিতিকে সুনামি আখ্যা দিয়েছেন দেশটির হোটেল ব্যবসায়ীরা। এ ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে যেভাবে চারটি শহর অবরুদ্ধ করেছে স্পেন, এরআগে ইতালিও একই ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছিল। আপাতত ওই চার শহরে বাইরের কেউ ঢুকতে পারছেন না, আবার ভেতর থেকে কেউ বের হতে পারছেন না। অবশ্য বিশেষ ক্ষেত্রে পুলিশের অনুমতি নিয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত শহর থেকে বের হওয়া যাবে। এ চার শহরই বার্সেলোনা প্রদেশের ভেতর পড়ে। শহর চারটিতে প্রায় ৭৬ হাজার মানুষের বাস।
স্পেনে প্রথম যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেল তখন ওই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। তবে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ার ফলে কর্মপদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে। ইতালি থেকে বিমানে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, একইসঙ্গে দেশের ভেতর ও বাইরে যেকোনো ধরনের ভ্রমণেই সতর্ক করা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দু’সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং কারাগারগুলোতে পরিদর্শন বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে স্পেনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আট বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে তারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। তারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। বাড়ি ঢাকায়।
আটজনের মধ্যে তিনজন সিলেটের, ঢাকার দুইজন (স্বামী-স্ত্রী), যশোরের একজন বলে জানা গেছে। অপরজনের ঠিকানা জানা যায়নি। আটজনই বর্তমানে হাসপাতালে আছেন। ঢাকার দুইজনকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে।
দেশটির কেন্দ্রীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ওষুধ ও মেডিকেল ইকুইপমেন্টের দাম বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পর্যটন খাতের জন্যও বিশেষ আর্থিক সহায়তা রাখা হচ্ছে।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানশেজ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সময়টা খুব খারাপ, তবে আমরা অবশ্যই এ বিপদ কাটিয়ে উঠবো। দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সবাই এক হয়ে কাজ করে এ বিপদ কাটিয়ে উঠবো আমরা।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্পেনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইউরোপে এ ভাইরাস আক্রান্তের দিক দিয়ে স্পেনের অবস্থান দ্বিতীয়, প্রথম ইতালি।