গত ৭ ফেব্রুয়ারি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার রাজাপুর নিবাসী, আহমদ জায়গীরদারের দ্বিতীয় ছেলে এনামুল এহসান জায়গীরদার ফয়ছল (বোয়ালজুড় বাজারের সাবেক ব্যবসায়ী) তুরস্ক থেকে গ্রিস যাওয়ার পথে ইন্তেকাল করেছেন শিরোনামে নিউজ ৫২বাংলাসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও ফেসবুকে ব্যাপক প্রচার হয়।
ফয়সালের সাথে থাকা নিকট আত্মীয় ফয়েজ বলেন তারা তুরস্ক বর্ডার অতিক্রম করে গ্রীস বর্ডারে প্রবেশ করলে বরফের মধ্যে ফয়ছল অজ্ঞান হয়ে যায়। এক পর্যায়ে তাঁর জ্ঞান ফিরে আসে এবং খাবার চায় তার পরে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।তারা দালালের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এনামুলের মৃতদেহের বেশ কয়েকটি ছবি তুলেন। দালাল তাদেরকে হুমকি-ধামকি দিয়ে লাশটি ফেলে দিয়ে তাদেরকে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে আসে।
উল্লেখ্য যে ‘এনামুলের লাশ পাওয়া যাচ্ছে না’ শিরোনামে ১৩ ফেব্রুয়ারী ৫২বাংলায় একটা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
এ নিয়ে এ প্রতিনিধিসহ ইউরো বাংলা প্রেসক্লাবের প্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস এর কাউন্সিলর ড. সৈয়দা ফারহানা নূর চৌধুরীর সাথে বেশ কয়বার মতবিনিময় করা হয় । দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূত প্রবাসবন্ধু মো.জসিম উদ্দিন এনডিসি গ্রীস প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছিলেন । তারই ধারাবাহিকতায় গ্রীস প্রশাসন সর্বাত্মক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলেকজান্ডার পলি বর্ডার এরিয়া থেকে হেলিকপ্টারযোগে এনামুলের মৃতদেহ উদ্ধার করে আলেকজান্ডার পলি নামক হসপিটালে হস্তান্তর করে।
জালালাবাদ এসোসিয়েশন গ্রীস, ইউরো-বাংলা প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ এনামুলের পরিবারের সাথে ও লন্ডনে তাঁর নিকট আত্মীয় আব্দুস সামাদ জায়গীরদার, কবির আহমদ জায়গীরদার এর সাথে যোগাযোগ করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ দূতাবাসের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দূতাবাসের মাধ্যমে সেলুনিকা এয়ারপোর্ট হয়ে এথেন্স বিমানবন্দর থেকে কাতার ট্রানজিট শেষে বাংলাদেশে ১মার্চ বিকাল ৪ ঘটিকার সময় শাহজালাল বিমানবন্দরে এনামুলের লাশ পৌঁছে।
জালালাবাদ এসোসিয়েশন ঢাকার পক্ষে মৃতদেহ গ্রহণ করেন এসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সজল, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার শিব্বির আহমদ ও জুনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার সামিউল ইসলাম সোহান। মৃতদেহ গ্রহনের পর এনামুল এহসান জায়গীরদার এর পরিবারের পক্ষে মামাত ভাই নজমুল জায়গীরদার ও চাচাত ভাই রিদওয়ান রহমান এর কাছে লাশ হস্থান্তর করা হয়।
এসময় জালালাবাদের কর্মকর্তাদের এর মাধ্যমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড এ কে আব্দুল মোমেন ও তার বড় ভাই জালালাবাদ এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডক্টর এ কে আব্দুল মুবিন, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জসিম উদ্দিন, এনামুলের মৃতদেহের সার্বিক খোঁজখবর নেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে তার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস প্রদান করেন। তাঁহার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
দূতাবাসের কাউন্সিলর ডক্টর সৈয়দা ফারহানা নুর চৌধুরী মরহুমের রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বলেন ”এনামুলের মত অবৈধ পথে আর যেন কোন বাংলাদেশী ইউরোপে পাড়ি না জমায়। বর্তমান সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউরোপের শ্রমবাজার চালু করার। আমরা আশাবাদী খুব শীঘ্রই ইউরোপের শ্রমবাজার চালু হবে। দালালদের খপ্পরে পড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর কোনো যুবক প্রাণ হারায় সরকার তাহা চায় না।”
দূতাবাসের প্রথম সচিব ও কাউন্সিলর লেখক সুজন দেবনাথ বলেন ”পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড এ কে আব্দুল মোমিনের নির্দেশে, মান্যবর রাষ্ট্রদূত প্রবাসবন্ধু মো.জসীম উদ্দিন এনডিসির দিকনির্দেশনায় গ্রিস প্রশাসন ও দূতাবাস এর সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় এনামুলের লাশ পেতে আমরা সক্ষম হয়েছি।দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাংবাদিকবৃন্দ তাদের লেখনীর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।”
পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আজ ২ ফেব্রুয়ারী সোমবার জোহরের নামাজের পর বালাগঞ্জ উপজেলার গোয়ালজুর ঈদগাহ মাঠে্এনামুলের জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন তাঁকে করা হবে।