বই নিয়ে কথিত লেখিকার লজ্জাহীন সেলফি
লেখা একজনের কিন্তু বই প্রকাশ ফেলেছেন আরেকজন। এমনটা কি ঘটে? কিন্তু বাস্তবেই এমন ঘটেছে। তবে একবার নয় এই ঘটনা দুই দুই বার ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখিকা জাহান রিমা অনেকদিন ধরেই লেখেন। সেই লেখা বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকা ও ফেসবুকে প্রকাশ হয়। আর সেসব লেখায় যোগাড় করে নিজের নামে বই করে ফেলেছেন ফারজানা হোসেন নামের এক তরুণী। তবে প্রকাশক এই অভিযোগ আমলে নিয়ে ফারজানার সকল বই মেলা থেকে তুলে নিয়েছেন।
জাহান রিমা বলছেন, বিষয়টা খুব সিরিয়াস। অ্যালার্মিং। গতবছরও বিষয়টি সামনে এনেছিলাম। সেটা ছিল আমার লেখা অনুকাব্য সিরিজ দিয়ে ফারজানা হোসেন নামের এক মেয়ে বই প্রকাশ করেছে কলম প্রকাশনী থেকে। বইয়ের নাম: মেঘেদের উড়ো চিঠি। সংকলন। সেই তখনই একই প্রকাশনী থেকে স্বনামধন্য লেখক সেলিনা হোসেনেরও বই আসে। মাথায় আমার আগুন ধরে তখনই। মেজাজ উঠে সপ্তরাগে। প্রতিবাদ এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেবার সক্রিয়তা দেখে তারা তৎক্ষণাৎ ‘মেঘেদের উড়ো চিঠি’ নামক বইটি দ্রুত মেলা থেকে সরিয়ে ফেলে। এজন্য এই মেয়ে ক্ষমা চায় আমার কাছে। কলম প্রকাশনীও ক্ষমা চায়।
জাহান রিমা দ্বিতীয় অভিযোগ এনে বলেন, আমি আমার প্রতিনিধি মেলায় পাঠিয়েও বইটির একটি কপিও উদ্ধার করতে পারিনি; আইনগত ব্যবস্থা নেবার জন্য। তো সেই তখনই বইমেলা থেকে এই ফারজানা হোসেনের ‘পেনড্রাইভ’ নামের আরেকটা বই নিয়ে আসে আমার এক ভাই। হাসান পাশা তার নাম। এবার বাংলাদেশে গেলে হাসান আমাকে বলেন: ‘’আপনার ওই বই ওরা সরিয়ে ফেলেছে। তাই কী আর করা; ঐ লেখা চুন্নির আরেকটা বই পেলাম সেটাই নিয়ে আসলাম।’’ কথা এটুক পর্যন্ত শেষ হলে কথা ছিল। কিন্তু শেষে এ কী হলো? এই বই খুলে আমি চূড়ান্তভাবে দিশাহীন। রাগে কাঁপছি কেবল।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী রিমা বলেন, এই মেয়ের দ্বিতীয় এই বইটিও আমার লেখা দিয়ে শুরু। অর্থাৎ দুইটি বইয়ের কথা জানতে পেরেছি; দুইটি বই-ই আমার লেখা গদ্য-পদ্য দিয়ে করা। প্রথম আলো পত্রিকাসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের লেখা দিয়ে করা। এই মেয়ে বছরের পর বছর বই প্রকাশ করছে সম্পূর্ণ আমার লেখা দিয়ে। যা আমি জানতামই না। ফারজানা হোসাইন ২০১৬ থেকে ২০২০ আমার লেখাকে তার লেখা বলে যাচ্ছেন। এমনই দুঃসাহস। এবং সে চুরির লেখা বই লিখে রীতিমত সাহিত্য বোদ্ধা!! সমাদৃত!! তিনি রাফা রাইটার্স ফাউন্ডেশনেরও সদস্য; চুরিকৃত লেখা দিয়ে। এই মহা চোর আমার প্রতিটা একেবারে প্রতিটা লেখা অক্ষরে অক্ষরে চুরি করে। এমনকি ফেইসবুকে দেয়া আমার প্রতিটা মন্তব্যও সে চুরি করে। আরো শুনবেন? এমনকি আমাকে নিয়ে লেখা আমার প্রিয়জনদের ট্যাগ করা লেখাও তিনি নাম বদলে তার প্রিয়জনদের জন্মদিন টন্মদিনে উপহার দেন আরকি! এই তথ্য পাই নিউইয়র্কের স্বনামধন্য একজন জার্নালিস্টের মাধ্যমে; যিনি আমার প্রিয় একজন বন্ধু। এই প্রিয় বন্ধুর আমাকে নিয়ে লিখেছিলেন। এমনকি সেই লেখাটিও তিনি সামান্য নাম বদলে জন্মদিনে শব্দের-উপহার দিয়েছিলেন এক দারুণ পরিচিত পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদককে।
এ প্রসঙ্গে কলম প্রকাশনীর প্রকাশক মানিক মোহাম্মদ ওমর বলেন, আসলে ফারজানা হোসেনের বিরুদ্ধে যখন প্রথম অভিযোগ আসে তখন আমরা বইটি প্রত্যাহার করে নিয়েছি। কিন্তু পেন্ড্রাইভ নামে বইটিও যে চুরি করে লেখা সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। অথচ এটার পাণ্ডুলিপি আমাদের নিকট আরো পূর্বে ছিল। এবার অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা দ্রুত বইটি প্রত্যাহার করে নেই। ফারজানা হোসেনের কাছে আমরা জানতে চাই তিনি কেন এমনটা করেছেন- তিনি অনুতপ্ত হয়েছেন। তার আরেকটি অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি রয়েছে সেটাও আমরা আর প্রকাশ করছি না।
সূত্র: কালের কন্ঠ