দিল্লির সত্তর সদস্যবিশিষ্ট বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল গত কাল অর্থাৎ শনিবার। দেশবাসীর চোখ ছিল দিল্লির নির্বাচনের দিকে। একদিকে উন্নয়ন আর অপর দিকে উগ্র ‘হিন্দুত্ব’-এর সুড়সুড়ি! একদিকে, মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল; তো অপর দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার গণ্যমান্য মন্ত্রীগণ! ভোটারদের প্রতি কেজরিওয়ালের আবেদন ছিল বাস্তবানুগ। কাজের নিরিখে ভোট চেয়েছেন তিনি। কোথাও কোনও প্ররোচনার ফাঁদে পা দেননি তিনি বা তাঁর মনোনীত প্রার্থীগণ।
অপর পক্ষে, শাহিনবাগকে কেন্দ্র করে প্রবল প্রতিপক্ষ বিজেপি হিন্দুত্বের হয়ে গলা ফাটাতে কসুর করেনি! এমনকী, শাহিনবাগে যে লোকটি নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের লক্ষ করে গুলি ছুঁড়েছিল, সেই দুষ্কৃতিটি কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টির বলে দাবি করেছিল! কিন্তু ধুপে টেকেনি সেই দাবি! বিজেপি যত-ই প্রচারে শাহিনবাগকে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিল, কেজরিওয়ালের দল ততই শাহিনবাগ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছে। তা ছাড়া, শাহিনবাগের আন্দোলন যে কেবল একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আন্দোলন নয়, আন্দোলনটি সর্বসাধারণের; তা ইতিপূর্বে প্রমাণিত হয়ে গেছে! তাই, শাহিনবাগের আন্দোলনকে আম আদমি পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার কৌশল বলতে গেলে মাঠে মারা গেছে বিজেপির! আর শতাব্দীপ্রাচীন কংগ্রেস তো দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে কোনও ছাপই রাখতে পারেনি! প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে সরাসরি। আম আদমি পার্টি বনাম বিজেপি! উন্নয়ন বনাম উগ্র হিন্দুত্ব! শিক্ষিত বনাম অর্ধ-শিক্ষিতদের মধ্যে!
ভোট-ফেরত সমীক্ষা থেকে একটি কথা স্পষ্ট হয়েছে, দিল্লির ভোটারগণ এবারও তাঁদের বিবেক ভোট প্রয়োগ করেছেন। কিন্তু সংশয় দেখা দিয়েছে অন্যত্র! ভোট গ্রহণের চব্বিশ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হলেও কত শতাংশ ভোট প্রয়োগ হয়েছে, সেই হিসেবটি এখনও পেশ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন! আর এখানেই অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, গুড়ে বালির! নির্বাচন কমিশনের ওপর অনেকেই আস্থা রাখতে পারছেন না! ভোট-ফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী আম আদমি পার্টি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার দাবিদার হলেও ফলাফল নিয়ে অনেকেই আশঙ্কিত! নির্বাচন কমিশনও এব্যাপারে ঝেড়ে কাশছে না!
তবে, ফলাফল যা-ই হোক, দিল্লিতে ভোট প্রয়োগের হার যে আশাব্যঞ্জক নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভোট প্রদানে ভোটারদের এই অনীহা সুষ্ঠু গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত! ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন অর্থাৎ ইভিএম এ-ক্ষেত্রে ভোটারদের মনে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, সেই নেতিবাচক প্রভাব থেকে ভোটারদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দেয়া দরকার। ইভিএম সম্পর্কে নানা মুনির নানা মত বাজারে প্রচলিত। তাই, সত্য-মিথ্যা যাচাই না-করেই বিভিন্ন ব্যক্তি ইভিএম সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে থাকেন। আর সেই নেতিবাচক ধারণা থেকেই ভোটারদের মনে ভোট প্রদানে অনীহার সৃষ্টি হয়। ব্যালট পেপার সেই অহেতুক আশঙ্কাকে দূর করতে অনেকটা কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। দিল্লির নির্বাচনি ফলাফল শাসক দলের নিকট যেমন বাঁচা-মরার লড়াই, তেমনই আম আদমি পার্টির জন্যও মর্যাদার লড়াই! ইভিএমে কোনও কারচুপি না-হলে ফলাফল যে উন্নয়নের পক্ষেই আসবে, তা ভোট-ফেরত সমীক্ষা থেকে স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাস্টিং ভোট নিয়ে নীরবতা অনেকের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে!