‘করোনা ভাইরাস’ অতি সাম্প্রতিককালে মানবসৃষ্ট একটি ভাইরাস! অভিযোগ অনুযায়ী, চিনের গবেষণাগারে এই ভয়ানক মারণরোগের ভাইরাসের সৃষ্টি! ইতিপূর্বে যোদ্ধাস্ত্র হিসেবে বিভিন্ন মারণাস্ত্রর নাম শুনে থাকলেও হাল-আমলের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে নিতান্তই অজ্ঞ ছিলাম আমরা! বিভিন্ন সিনেমায় ইতিপূর্বে দেখানো হয়েছে, গবেষণাগারে সৃষ্ট ভাইরাস জীব-জন্তুর মাধ্যমে সংক্রমণের দ্বারা শত্রু রাষ্ট্রকে কীভাবে কাবু করা যায়!
সাম্প্রতিককালে ইরাক ও সিরিয়া যুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ও জৈব অস্ত্র ব্যবহারের পরস্পরবিরোধী অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ সংবাদ মাধ্যমে জেনেছিলাম। ইরাকের মতো একটি সুপ্রাচীন সভ্যতাকে ধ্বংস করা হয়েছিল ইরাকে রাসায়নিক অস্ত্র মজুদ আছে, এই অভিযোগে! অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো ইরাক ধ্বংস করল বটে, তবে রাসায়নিক অস্ত্রের নাম-গন্ধও পেল না! উল্টো, গায়ে পড়ে ইরাক যুদ্ধ করার খেসারত হিসেবে সেই অন্যায় যুদ্ধ অর্থনৈতিকভাবে সে-সকল রাষ্ট্রকে প্রায় দেউলিয়া করে ছাড়ল! যুদ্ধ শেষে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রগুলো হাতে পেন্সিল ছাড়া আর কিছুই পেল না! সেই ইরাক যুদ্ধেই ন্যাটো দেশগুলো প্রথম রাসায়নিক ও জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল বলে অভিযোগ ছিল।
সাম্রাজ্যবাদের আসলে নানা রূপ! একবার সর্প হয়ে দংশন করে, আবার ওঝা হয়ে সেই দংশন হওয়া ক্ষত স্থানে প্রলেপও দেয়! সাম্রাজ্যবাদের লক্ষ্য-ই হল, যেন-তেন-প্রকারেণ ধনী ও সমৃদ্ধ দেশগুলোকে নিজেদের অধীনে নিয়ে আসা! সে-ক্ষেত্রে বাঘ ও হরিণ ছানার গল্পটি বেশ প্রণিধানযোগ্য! হরিণ ছানাকে ছলে-বলে-কলে-কৌশলে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করে তার ঘাড় মটকে দেয়াটাই বাঘের উদ্দেশ্য! হরিণ ছানার ‘জল ঘোলা’ করার অজুহাতটি কেবল নিজের অন্যায়কে যৌক্তিক করে তোলা!
আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা তথা নিন্দারও শেষ নেই! আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ছাড়াও স্থানীয়ভাবেও বিভিন্ন সংগঠন, বিশেষত বামপন্থী সংগঠনগুলো আমেরিকার বিরুদ্ধাচরণ করে। পথসভা, মিছিল, সেমিনার, বক্তৃতার মাধ্যমে আমেরিকার যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রপতির মুণ্ডপাত করা ছাড়াও কুশপুতুলও দাহ করে প্রতিবাদ সাব্যস্থ করে থাকে! এতদ্দেশে বসে আমেরিকার বিরুদ্ধাচরণ করা তুলনামূলক সহজই বটে! কারণ, সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর ওপার থেকে আমেরিকা অসম বা পশ্চিমবঙ্গে শুধু শুধু বোমা ফেলতে আসবে না; তা এক প্রকার নিশ্চিত করেই বলা যায়! তাই, আমেরিকার রাষ্ট্রপতির কুশপুত্তলিকার গলায় দড়ি বেঁধে রাস্থায় টানলেও যেমন কারও কিছু যায় আসে না, তেমনই, নিজেদের পরিচিত মহলে আমেরিকার রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধাচরণ করে জ্বালাময়ী ভাষণ দেয়ার ফলে বাহবা পাওয়ারও একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়!
পক্ষান্তরে, নিকট-প্রতিবেশী রাষ্ট্র দুর্ধর্ষ চিনের বিরুদ্ধে রা কাড়ার মতো লোক নেই বললেই চলে! কারণ সহজেই বোধগম্য! চিনের মতো আনাড়ি রাষ্ট্রর তুলনা একমাত্র উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে করা যেতে পারে! চিন কিছু দিন পর পরই তাদের সৈন্য অরুণাচল কিংবা ভারতের অন্য কোনও সীমান্তে পাঠিয়ে তাদের তৎপরতা দেখায়! বিনা প্ররোচনায় ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ঘরদোর, রাস্তাঘাট পর্যন্ত তৈরি করে ফেলে! এর পরও কোথাও চিনের বিরুদ্ধে কাউকে বা কোনও সংগঠনকে সোচ্চার হতে দেখা যায় না! অথচ, ভারতের জন্য আমেরিকার চেয়ে চিন শতগুণ বেশি ভয়ঙ্কর! আমেরিকা ভারতে আক্রমণ করতে হলে ভারতের প্রতিবেশী কোনও রাষ্ট্রকে আগে তাদের পক্ষে নিতে হবে! কিন্তু চিনের ক্ষেত্রে সে-সবের কোনও দরকারই নেই! চিন বার বার সীমা লঙ্ঘন করে ভারতের ভূমি জবর দখল করে রেখেছে। এর পরও চিন সম্পর্কে প্রায় সকলেই নির্বিকার! কারণ, চিন হচ্ছে ভারতের নিকট-প্রতিবেশী। আর দ্বিতীয় হচ্ছে, চিন একটি আনাড়ি রাষ্ট্র! তারা ‘গণতন্ত্র’-এর ধার ধারে না! ‘মানবাধিকার’ বলে চিনে কিছু নেই! এখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, চিন এই ভয়ানক ‘করোনা ভাইরাস’ কেন সৃষ্টি করল? তাদের লক্ষ কী?
প্রতিপক্ষ ভারতে তা সংক্রমণের মাধ্যমে ভারতবর্ষকে পর্যুদস্ত করা! নাকি ভারতে তা সংক্রামিত করে সংক্রমণের ওষুধ আবিষ্কারের মাধ্যমে অসদুপায়ে অর্থ উপার্জন! অর্থাৎ বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল রাষ্ট্র ভারতবর্ষের বাজার দখল করা! বলার অপেক্ষা রাখে না, বৈরিতা সত্ত্বেও ভারতবর্ষ চিনের এক বিশাল ‘বাজার’! ভারতবর্ষে বিভিন্ন চিনা সামগ্রী সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়! করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মাধ্যমে নতুন টিকা আবিষ্কারের পথ সুগম করে তা ভারতের মতো জনবহুল দেশকে ‘বাজার’-এ পরিণত করা! কারণ, আমরা জানি, জর্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে যুদ্ধে ফ্রান্স যতটুকু আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, কেবল ফরাসি বিজ্ঞানী লুই পাস্তুরের ‘জলাতঙ্ক’ রোগের টিকা আবিষ্কারের ফলে সেই বিরাট আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছিল ফ্রান্স! কিন্তু চিন তো নিজেরাই আক্রান্ত! প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার হয়নি! পরের জন্য গর্ত খুঁড়ে নিজেরাই কি না ফেঁসে গেল! চিন তো রীতিমতো খোদার উপর খোদগিরি শুরু করে দিয়েছিল! দেশের উইঘুরদের নির্বিচারে হত্যা করতে, তাঁদের যাবতীয় মানবিক অধিকার কেড়ে নিতে চিন যত না নির্বিকার, এক করোনা ভাইরাস তাদের সেই ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে প্রত্যাহ্বান জানিয়ে তাদের হতবিহ্বল করে দিয়েছে! দৃশ্যমান বস্তু বা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সহজ। কিন্তু অদৃশ্য বস্তু বা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কত কঠিন, তার প্রমাণ ‘করোনা ভাইরাস’!
ফলে, চিন এখন তার ছায়ার বিরুদ্ধে অসম যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে! মিত্র দেশগুলোও আজ চিনের সঙ্গে জল-স্থল-আকাশ পথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে! কার্যত, চিন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও আজ বড়োই একা! ভারতের একাধিক ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে খবরে প্রকাশ। মহামারি হিসেবে দেখা দেয়ার আগে তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত আমাদের। এদিকে, উল্টো ভারত যদি সিনেমার স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী ভয়ানক করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়, তাহলে তা হবে চিনের জন্য আত্মঘাতী! চিনের বিশাল বাজার চলে আসবে ভারতের নিয়ন্ত্রণে! বছরের পর বছর ধরে চিন যেভাবে ভারতের ভূৃমি বেদখল করে আধিপত্য দেখাচ্ছে, করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে ভারত সক্ষম হলে অতীতের সব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হবে। যেভাবে পুষিয়ে নিয়েছিল লুই পাস্তুরের ফ্রান্স! জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কারের মাধ্যমে।