লন্ডনে কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস বন্ধের প্রতিবাদে বাংলাদেশ টিচার্স এসোসিয়েশন ইউকে (বিটিএ) ও অন্যান্য সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।শনিবার (২৫শে জানুয়ারী) স্থানীয় লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমিতে এ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় এবং রিজিওনাল প্রায় চল্লিশটির ও বেশি সংগঠন কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস বন্ধের প্রতিবাদে সমাবেশে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
এখানে উল্লেখ্য যে গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ সালে টাওয়ারের ক্যাবিনেট মিটিংয়ে কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
বিটিএ সভাপতি মোহাম্মদ আবু হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল বাসিত চৌধুরী ও যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ডক্টর রোয়াব উদ্দিনের শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর সমাবেশে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবু হোসেন কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিসের অতীত এবং বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর আগামী ১৯শে ফেব্রুয়ারীর বাজেট অধিবেশনে বন্ধ হতে যাচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রাদায়ের বাচ্চাদের মাতৃভাষা শিক্ষায় এই সার্ভিসটি ছিলো একটি সফল প্রজেক্ট এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রজেক্টটি বন্ধ করে কাউন্সিল সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন করছে।
সমাবেশের ঘোষণায় বলা হয়, ১১ টি ভাষার সমন্বয়ে কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস বা সিএলএস প্রায় ৪২ টি অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে পনেরশো শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করে আসছিলো। শুধু এটিই বন্ধ নয়, টাওয়ার হামলেটস কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে বাজেট কর্তনের মাধ্যমে জি এস সি এবং এ লেভেলেও মাতৃভাষা শিক্ষার সুযোগ তুলে নিয়েছে যা kS1 থেকে KS4 লেখাপড়ার উন্নতি কল্পে ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছিলো। ঘোষনায় জানানো হয় ৮0 জন শিক্ষক-শিক্ষিকা সিএলএস সার্ভিসের আওতায় কাজ করে থাকেন।
সমাবেশের ঘোষনায় হতাশা ব্যক্ত করে বলা হয়, গত ১৮ ডিসেম্বর মেয়রের নেতৃত্বে কাউন্সিলের কেবিনেট মিটিংয়ে ৩ জন বাঙালি কেবিনেট মেম্বার ও একজন ডেপুটি মেয়র থাকা সত্ত্বেও কমিউনিটি সার্ভিস বন্ধের বিপক্ষে তারা কোনো কথা বলেননি, যা দুঃখজনক। এটি আরও দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, প্রায় ২১ জন বাঙালি কাউন্সিলর থাকা সত্ত্বেও কেবিনেটে ওঠার আগেই লেবার দলীয় গ্রুপে কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বক্তারা তাদের বক্তৃতায় এই ঘৃণিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, এটা ইনস্টিটিউশনাল রেসিজমের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন। এটা কোনভাবে মেনে নেয়া যায়না। কাউন্সিলররা আমাদের ভোটে নির্বাচিত। কিন্তু তারা কমিউনিটির স্বার্থের পরিপন্থী কাজে ব্যস্ত।তারা আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে মাতৃভাষা ছিনিয়ে নিতে চান, লেখাপড়ায় উন্নতির গতি থামিয়ে দিতে চান। এটি টাওয়ার হামলেটস থেকে বাঙালি খেদাও ষড়যন্ত্রের একটি পরিকল্পিত অংশ বলেই কমিউনিটি মনে করে।
বক্তারা বলেন, আমরা যদি সকলে একাত্মবোধ হয়ে এই কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস প্রচলিত না রাখতে পারি তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র গুলো একের পর এক বাস্তবায়িত হবে।
সমাবেশের ঘোষনায় বলা হয়, যদি কমিউনিটি সার্ভিস পুনর্বহাল না হয় তাহলে ১.আগামী একুশে ফেব্রুয়ারি মেয়র এবং কাউন্সিলরদের শহীদ মিনারে স্বাগত জানানো হবে না। ২. মেয়র ও ডেপুটি মেয়রসহ সকল বাঙালি ক্যাবিনেট মেম্বারদের সামাজিকভাবে বর্জন করা হবে। ৩. সমগ্র সংগঠনগুলো মিলে অচিরেই আলতাব আলী পার্কে গণসমাবেশ হবে। ৪. আগামী ১৯শে ফেব্রুয়ারি মালবারি প্যালেসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে।
এছাড়াও সিএলসি রক্ষার দাবিতে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ অচিরেই মেয়র এবং কাউন্সিলরদের সঙ্গে একটা বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এ সমাবেশে ।
গণ সমাবেশে অতিথি হিসেবে মধ্যে বক্তব্য রাখেন, চ্যানেল এস চেয়ারম্যান আহমাদুস সামাদ চৌধুরী, গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের পেট্রন ড.হাসনাত এম হোসেন এমবিই, টাওয়ার হামলেটস প্যারেন্টস সেন্টারের ডাইরেক্টর ডক্টর আবদুল হান্নান, বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রধান উপদেষ্টা শাহগির বক্ত ফারুক, কাউন্সিল অফ মস্ক এর চেয়ারম্যান মাওলানা শামসুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই সিনিয়র সভাপতি দেওয়ান গৌস সুলতান, লেবার দলীয় বিএএমই’র সভাপতি জুনেদ আহমেদ সুন্দর, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরী, গ্রেটার সিলেট এর সভাপতি বারিস্টার আতাউর রহমান, আল হুদা মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল কাদের সালেহ ও ভয়েস অফ জাস্টিসের সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট সাংবাদিক কে এম আবু তাহের চৌধুরী।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, টাওয়ার হামলেটস ‘stand-up to racism’ এর পক্ষে শিলা মেক রগর, কাউন্সিলর রুবিনা খান, কাউন্সিলর গাব্রিয়েলা সালভা মেক কালান, সাবেক কাউন্সিলর ওহিদ আহমেদ, কমিউনিটি নেতা সৈয়দ নুরুল ইসলাম , সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল আসাদ, সাবেক কাউন্সিলর আমিনুর রহমান খান, ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই সাধারণ সম্পাদক, একাউন্টেন্ট আব্দুর রকিব, টাওয়ার হামলেটস কলেজের সাবেক লেকচারার রেহানা রহমান, চাইনিজ স্কুলের হেড টিচার ম্যাগি জুই, বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের আনসারুল হক, সুনামগঞ্জ সমিতি ও এমসি কলেজ পুনর্মিলনীর পক্ষে ইকবাল হোসেন, কমিউনিটি নেতা আহাদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ইয়ুথ মুভমেন্ট এর পক্ষে নুরুল ইসলাম, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আনোয়ার খান, মাসিক দর্পণ সম্পাদক রহমত আলী, ওয়াপিং বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের পক্ষে আতিকুর রহমান, সলিসিটর ফাহিম রহমান, টাওয়ার হামলেট উইমেন গ্রুপের পক্ষে হাসনা রহমান, বাংলাদেশী টিচার্স এসোসিয়েশন ইউকের পক্ষে মাহবুব হোসেন, মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, এডভোকেট শাহ ফারুক আহমেদ, জামাল উদ্দিন আহমেদ, শফি আহমেদ, মোস্তফা কামাল মিলন, মজিবুল হক মনি, মোস্তাক চৌধুরী, অধ্যাপক শাহজাহান, রুশনারা গনি, শেফা বেগম, পপলার বাংলাদেশ সেন্টার এর পক্ষে ময়ূর মিয়া, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট রুবিনা হক, পপলার কমিউনিটি স্কুলের চেয়ারম্যান হাফেজ চৌধুরী, সৈয়দপুর শামসিয়া সমিতির পক্ষে আহমেদ কুতুব, থ্যামস বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন এর পক্ষে সুলতানা বেগম ও আতিয়া খান, পূর্ব লন্ডন জিএসসি’র আব্দুল গফুর, ভয়েস অফ জাষ্টিস প্রেসিডেন্ট রফিক আহমেদ, সাউথ ইষ্ট জিএসসির সভাপতি ইসবাহ উদ্দিন, ট্যবিয়োট ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, কমিউনিটি নেতা জাহেদ আহমদ ও সোমালিয়ান শিক্ষকা আয়েশা আলী প্রমুখ।