মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
Sex Cams
সর্বশেষ সংবাদ
যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজাবাসীদের সাহায্যার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের অনুদান  » «   বড়লেখায় পাহাড়ি রাস্তা সম্প্রসারণে বেরিয়ে এলো শিলাখণ্ড  » «   মাইল এন্ড পার্কে ট্রিস ফর সিটিস এর কমিউনিটি বৃক্ষরোপণ  » «   রয়েল টাইগার্স স্পোর্টস ক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন  » «   গোলাপগঞ্জ স্যোশাল এন্ড কালচারাল ট্রাস্ট ইউকে’র সাধারণ সভা ও নির্বাচন সম্পন্ন  » «   যুক্তরাজ্যবাসি  সাংবা‌দিক সাইদুল ইসলামের পিতা আব্দুল ওয়াহিদের ইন্তেকাল  » «   ইউকে বাংলা রিপোটার্স ইউনিটি‘র নতুন কার্যকরী কমিটির অভিষেক  » «   রোটারিয়ান মোহাম্মদ খতিবুর রহমান বার্লিন যাচ্ছেন  » «   টাওয়ার হ্যামলেটসের নতুন বাজেটে হাউজিং, শিক্ষা, অপরাধ দমন, তরুণ, বয়স্ক ও মহিলাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচিতে বিপুল বিনিয়োগ প্রস্তাব  » «   আজীবন সম্মাননা পেলেন সৈয়দ আফসার উদ্দিন এমবিই  » «   লন্ডন বাংলা স্কুলের আয়োজনে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত  » «   লন্ডনবাসী প্রবীণ মুরব্বী জমির উদ্দিন( টেনাই মিয়া)র ইন্তেকাল  » «   কবি সংগঠক ফারুক আহমেদ রনির পিতা মুমিন উদ্দীনের ইন্তেকাল  » «   একসেস ট্যু জাস্টিস নিশ্চিত করা আইনের শাসনের প্রধান স্তম্ভ  » «   বৃহত্তর সিলেট এডুকেশন ট্রাস্টের নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বনাম ‘ভূমিপুত্র’ ইস্যু



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

১৯৮৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও ছাত্র সংগঠন আসু(সারা অসম ছাত্র সংস্থা)-এর মধ্যে সম্পাদিত অসম চুক্তির বিতর্কিত ছয় নম্বর দফা নিয়ে বরাক উপত্যকায় ‘যৌথ’ আন্দোলনের অবকাশ কোথায়! Citizenship Amendment Bill (CAB)-এর পক্ষে ৩১৭টি স্মারকপত্র যাঁরা Joint Parliamentary Committee-এর নিকট প্রদান করেছিলেন, তখন তাঁদের অমৃত বাণী ও শারীরিক বিভঙ্গ বলে দিয়েছিল, তাঁরা “পৃথক”! বিশেষ একটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তখন যাঁরা এককাট্টা হয়েছিলেন, তাঁদের সেই ‘শক্তি’ এখন কোথায়! এবার “খিলঞ্জিয়া” ইস্যুতেও তাঁরা স্মারকপত্র দেবেন, পথে নামবেন, এই আশা করেন রাজ্যের তাবৎ বাঙালি। বরাক উপত্যকার প্রায় অর্ধেকসংখ্যক জনগণ, যাঁরা ১৯৭১-এর ২৪ মার্চের পর বাংলাদেশ থেকে আগত অসংখ্য বাঙালি হিন্দুকে ভারতবর্ষের ‘নাগরিকত্ব'(ক্ষুদ্র অর্থে অসমের নাগরিকত্ব!) প্রদানের দাবিতে CAB আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেই বহু প্রত্যাশিত, বহু প্রতিক্ষিত CAB অর্থাৎ Citizenship Amendment Bill আইনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু উক্ত ‘কালো কানুন’-এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ প্রতিবাদ করছেন। পথে নেমেছেন।

বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পর দেশব্যাপী যখন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন অসাংবিধানিক, বিভাজনমূলক (সাম্প্রদায়িক) তথা অগণতান্ত্রিক আইনটি বাতিলের লক্ষ্যে; তখনও, এই ক্রান্তিলগ্নেও যাঁরা Citizenship Amendment Act (CAA)-কে নিরবচ্ছিন্নভাবে সমর্থন করে যাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে বাকিদের অর্থাৎ বিল-বিরোধীদের “যৌথভাবে” আন্দোলন করার পরিসর কোথায়? CAA অর্থাৎ নাগরিকত্ব সংশোধন আইন(Citizenship Amendment Act) সমর্থন করার অর্থই হচ্ছে, নিজেরা অসম তথা ভারতবর্ষের “ভূমিপুত্র” নন, তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা! লিখিতভাবে সরকার প্রদত্ত প্র-পত্র পূরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ/পাকিস্তান/ আফগানিস্তানের সঙ্গে তাঁদের লিগ্যাসির সম্পর্ক বিদ্যমান বলে স্বীকার করে নেয়া! এমতাবস্থায়, বরাক উপত্যকার যে-সকল বাংলাভাষী নাগরিক অসম তথা ভারতবর্ষের ভূমিপুত্র, দীর্ঘ দিনের পুরনো ভারতীয় লিগ্যাসি দিয়েই যাঁদের নাম National Register of Citizens (NRC) তে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, অসম চুক্তির ছয় নম্বর ধারা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ-এর ভিত্তিবর্ষ মেনে তাঁদের “খিলঞ্জিয়া” বা “ভূমিপুত্র” বলে সরকারকে স্বীকার করে নিতে হবে। এই মর্মে ‘খিলঞ্জিয়া’ বা ‘ভূমিপুত্র’র ‘সংজ্ঞা’ নির্ধারণ করতে হবে।

ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন-এর তীব্র প্রতিবাদ সমগ্র দেশ জুড়ে ধ্বনিত হচ্ছে! বরাক উপত্যকাও যেহেতু অসম তথা ভারতবর্ষের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেই হিসেবে বরাক উপত্যকায়ও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে নতুন আইনের বিরুদ্ধাচরণ করা সময়ের দাবি হলেও বাংলাদেশ থেকে আগত অবৈধ হিন্দু নাগরিকদের অনৈতিক সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে বরাক উপত্যকার সিংহ ভাগ নাগরিক, মূলত হিন্দুরা, আজ হয় সংশোধিত আইনের সমর্থন করে যাচ্ছেন অথবা মৌনতা অবলম্বন করছেন। কিন্তু এই মৌনতা অবলম্বন পক্ষান্তরে বরাক উপত্যকাবাসীর সমূহ ক্ষতি সাধন করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় নতুন আইন বিরোধী বিক্ষুব্ধ অসমিয়া জনগণকে প্রবোধ দেয়া হচ্ছে, “খিলঞ্জিয়া” ইস্যুটির সম্মুখায়ন ঘটিয়ে! অর্থাৎ অসম চুক্তির ছয় নম্বর ধারা অনুযায়ী যারা অসমের ‘খিলঞ্জিয়া’ অর্থাৎ ‘ভূমিপুত্র’ নন, তাঁরা অসমের জমি-মাটি ক্রয় করতে পারবেন না। সরকারি, আধা-সরকারি চাকরি পাবেন না। জনপ্রতিনিধি হতে পারবেন না ইত্যাদি। এই যখন পরিস্থিতি, তখন বাংলাদেশি জনগণের জন্য ‘সুবিধা’ আদায় করতে গিয়ে বরাক উপত্যকার “ভূমিপুত্র” দের অস্থিত্বকে বিপন্ন করা হচ্ছে! বরাক উপত্যকায় যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যাঁরা বসবাস করছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে সমর্থন করার মাধ্যমে তাঁদেরও, নতুন করে “নাগরিকত্ব”পেতে চলা বাংলাদেশিদের সঙ্গে একই পংক্তিতে ফেলার প্রয়াস চলছে! বরাক উপত্যকার আদি বাসিন্দারা যে অসমের “খিলঞ্জিয়া” বা “ভূমিপুত্র”, এই পার্থক্যটা রাখা উচিত বৈকি।

“খিলঞ্জিয়া” বা “ভূমিপুত্র” র সংজ্ঞা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চকে ভিত্তিবর্ষ ধরে নির্ধারণের পক্ষে সওয়াল করতে না-পারলে আখেরে বরাক উপত্যকাবাসীকে এর মূল্য চুকাতে হবে। কেননা, নতুন সংশোধিত আইনে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে যে-সকল সংখ্যালঘু অর্থাৎ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন ও পার্শিক ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ পর্যন্ত ভারতবর্ষে অনুপ্রবেশ করেছেন, তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অসম চুক্তি ২৪ মার্চ, ১৯৭১ সালকেই ‘বিদেশি’ শনাক্তকরণের ভিত্তিবর্ষ হিসেবে মান্যতা দিয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী ভাষা-ধর্ম নির্বিশেষে ১৯৭১সালের ২৪ মার্চের পর অসমে আগত সকলেই ‘অনুপ্রবেশকারী’! ‘বিদেশি’! কিন্তু নতুন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালকে মান্যতা দিয়েছে। ফলে, অসমিয়া জনগোষ্ঠী স্বভাবতই ক্ষুব্ধ। সরকার এক দিকে আইন সংশোধন করে ৩১ডিসেম্বর, ২০১৪ কে সংশ্লিষ্ট বিদেশি নাগরিকদের নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলেছে; অপর দিকে, বিক্ষুব্ধ অসমিয়া জনগোষ্ঠীর সামনে ‘খিলঞ্জিয়া’ ইস্যুটি তুলে ধরে অসম চুক্তির ছয় নম্বর ধারাটি বাস্তবায়নের ললিপপ ঝুলিয়ে দিয়েছে!
তাই, অসমিয়া জনগোষ্ঠীর একটি অংশও দ্বিধান্বিত! কোনটি তাঁদের জন্য বেশি লাভজনক, এই হিসেব-নিকেশে ব্যস্ত!

উল্লেখ্য, কেবল ‘নাগরিকত্ব’ সংশোধনী আইনটি ছাড়া বিজেপি কিন্ত বৃহত্তর অসমিয়া জনগোষ্ঠীর নিকট দুয়োরানি নয়! বিজেপিকে নিরঙ্কুশভাবে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছেন বরাক উপত্যকার হিন্দুদের পাশাপাশি অসমিয়া জনগণও! নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি যেমন অসমে বাঙালি হিন্দুর জন্য ‘রক্ষাকবচ’! তেমনই, অসম চুক্তির ছয় নম্বর ধারাটি ‘বৃহত্তর অসমিয়া জনগোষ্ঠীর’ ‘রক্ষাকবচ’! উভয়টি যদিও অসমের বাঙালি মুসলিমদের জন্য অশনি সংকেত! কিন্তু ‘ভূমিপুত্র’ ইস্যুটি বরাক উপত্যকার বাঙালি হিন্দুদের জন্য আরও বেশি উদ্বেগজনক! কারণ, উক্ত সংশোধিত আইন হাল আমলে বাংলাদেশ থেকে অসমে আগত হিন্দুদের জন্য বিশেষ বার্তাবহ হলেও অসমের বাঙালি হিন্দু ‘ভূমিপুত্র’দের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক! কিন্তু, বাংলাদেশ থেকে আগত পরিবার-পরিজনদের কথা বিবেচনা করে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছেন না! আর এই বলতে না-পারার দরুন দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ‘ভূমিপুত্র’ বলে দাবি করার দৌড়ে অসমের আদি বাঙালি হিন্দুরা আক্ষরিক অর্থেই পিছিয়ে আছেন! কারণ, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষে তাঁরা-ই বেশি গলা ফাটিয়েছেন! গোপনে ও প্রকাশ্যে সংসদীয় যৌথ কমিটির নিকট তাঁরা-ই ৩১৭টি স্মারকপত্র দিয়ে CAB-এর পক্ষে জনমত গঠন করেছিলেন! এসব তৎপরতা কিন্তু ‘গোপন’ থাকেনি! ফলে, ‘খিলঞ্জিয়া’ বা ‘ভূমিপুত্র’র সংজ্ঞা নির্ধারণে অসমিয়াদের নিকট বাঙালি হিন্দু রীতিমতো ‘দুয়োরানি’! যাঁরা বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের সমর্থক, আবার নিজেদের অসমের “ভূমিপুত্র” বলে দাবি করতে ইচ্ছুক, তাঁদের সঙ্গে অন্তত এই ইস্যুতে বাকিদের কোনও “ঐক্য” এক কথায় অসম্ভব।

“অজগরের ঐক্যে” কোনও ভরসা নেই! গাছেরও খাব, নীচেরও কুড়াব, এমন ধারণা নিজেদের পায়ে কুড়োল মারার শামিল! যাঁরা নাগরিকত্ব আইনও চান, আবার “খিলঞ্জিয়া” বলে দাবি করতে চান, তাঁদের দুই নৌকোয় পা রাখার দিন শেষ! “খিলঞ্জিয়া” বলে দাবি করার আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মোহ ত্যাগ করতে হবে। পরস্পরবিরোধী দ্বৈত ভূমিকা কোনও অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নাগরিকত্বের লোভ দেখিয়ে অসমের বাঙালিদের যাবতীয় “অধিকার” কেড়ে নেয়ার এই কুৎসিত চক্রব্যুহ থেকে বরাক উপত্যকাবাসীকে উত্তরণের পথ বেছে নিতে হবে। এখনই। এক্ষেত্রে কোনও ঢিলেমি চলবে না। অন্যতায়, বরাক উপত্যকার ভূমিপুত্রদের পরিণতিও হবে না-ঘর কা, না-ঘাট কা! ‘নাগরিকত্ব’ থাকবে, অথচ চাকরিবাকরি, জনপ্রতিনিধিত্ব, জমি ক্রয়সহ যাবতীয় “অধিকার” কে জলাঞ্জলি দিতে হবে! এমনকি, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভাষা বাংলার অধিকার ছাড়তে হতে পারে হয় তো! নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে বাংলাদেশি স্বজাতিদের স্বার্থ সুরক্ষা করা আর গাছের ডালে বসে নিজের ডালটি কাটা সমার্থক বটে!


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন