দুর্নীতিবাজদের দখলে দেশের রাজনীতি ও প্রশাসন। দেশের শিক্ষা, চাকুরী, চিকিৎসা, বিচারব্যবস্থা, উন্নয়ন- সবই দুর্নীতিবাজদের দখলে। মসজিদের ইমামকে থেকে মন্দিরের পুরোহিত-সেখানেও দুর্নীতি। দেশে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোন কাজই যেন দুর্লভ। যখন দেশের আটান্নব্বই ভাগ কাজে দুর্নীতি জড়িত, তখন, গোটা জাতির আঠারো কোটি মানুষই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দুর্নীতিবাজ।
আজ জাতিগত মানসিকতার নিম্নতম পর্যায়ে বাঙালির অবস্থান-প্রতিবাদ ছাড়াই ঘুষ দেয় দেশের ৭৫শতাংশ মানুষ। এই ৭৫শতাংশ কারা? উত্তর-আমরা। হ্যাঁ, আমরা বাধ্য হচ্ছি। এ দুর্গতি কার জন্য? এ দুর্নাম কার জন্য? এ দু:সহ যন্ত্রণা কোন জানোয়ারদের জন্য? উত্তর, ওই জানোয়াররা আমাদের নেতাদের কেউ, কিংবা প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তারা আমাদের ‘ভাই’ বা ‘স্যার’।
তবে কি আমাদের পকেট কেটে তারা বিত্তশালী হতেই থাকবে? তাদের সন্তানদের পড়াবে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে? আর আমরা দিনে দিনে হবো আরো দরিদ্র? পথের ভিখারি? তারা বানাবে বিত্তের পাহাড় আর স্বর্ণালী সুউচ্চ অট্টালিকা, আর আমরা পাবোনা বাসস্থানের মৌলিক অধিকার? আমাদের সন্তানরা মৌলিক শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবে ? আমরা ও আমাদের সন্তানরা হবো তাদের দাস? বাবার চুরির টাকায় বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে চুরের ছেলে ডাকাত হয়ে বসছে আমাদের উপর। ঐ ডাকাতরাই অভিশাপ- আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাঁধে! এটা চলতে পারে না। হতে দেওয়া যাবে না। আসুন, জাগ্রত হই এই জানোয়ারদের বিরুদ্ধে।
যখন একজন দুর্নীতিবাজ ,সে হোক নেতা বা অফিসার, কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করে ; সে টাকা আপনার, আমার, জনগণের। এদেরকে রুখতে হবে। এখানে দলীয় প্রশ্ন নেই। দলীয় আনুগত্য দেখানো চরম অন্যায়। আজ দুর্নীতিবাজদের উন্মত্ত উত্থানে দলে ও রাষ্ট্রে সৎ ও ত্যাগীরা কোনঠাসা। আমি মনে করি, বাংলাদেশের প্রগতির পথে এখন প্রধান সমস্যা দুর্নীতি । জনসংখ্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা নয়। আসুন, গোটা জাতির জন্য মরণব্যাধিসম এ সমস্যা নির্মূলে সকলে দলমতের উর্ধ্বে উঠি।
দুর্নীতিবাজদের প্রশ্নে দলীয় আনুগত্যের সংস্কৃতির মতো জঘন্য প্রথা চরম অন্যায়। দুর্নীতি নির্মূলের জন্য দলীয় দোষারোপ বন্ধ করতে হবে। এটা দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা নিশ্চিত করছে।
প্রতিটি দলে দুর্নীতিবাজ। প্রতিটি সরকারে দুর্নীতিবাজ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি সকল সরকারেই দুর্নীতিবাজ ছিলো। আজো আছে। রাতের আধারে দুর্নীতিবাজরা মাসতুতো ভাই। তারা দলবাজি বাদ দিয়ে ব্যবসায়িক পার্টনার হচ্ছে। দল কেবল তাদের অস্ত্র! অথচ, আমরা তাদের ভক্ত। তারা আমাদের পিতৃতুল্য নেতা। আজ দেশের প্রয়োজনে সকলস্তরের মানুষের দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের প্রতি ঘৃণার উচ্ছসিত প্রকাশ জরুরি।
যারা নেতা হয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্নসাৎ করে বিদেশে বিত্ত গড়ছে ওরা জানোয়ার। যারা এমন এমপি-মন্ত্রী হয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্নসাৎ করে বিত্তের পাহাড় গড়ছে, ওরাই জানোয়ার। যারা প্রশাসনের কর্মকর্তা হয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্নসাৎ করছে তারাও জানোয়ার। যে সন্তান জ্ঞাতসারে দুর্নীতিবাজ পিতার রাষ্ট্রীয় লুন্ঠনের টাকায় উচ্চ শিক্ষিত হচ্ছে সে হচ্ছে জানোয়ারের বাচ্চা জানোয়ার। যে মা দুর্নীতি করছে, সন্তানকে দুর্নীতিবাজ শিক্ষা দিচ্ছে- সে নিকৃষ্টতম মা। যে স্ত্রী স্বামীকে দুর্নীতি করতে প্ররোচিত করছে- সে নিকৃষ্টতম স্ত্রী। ওরা টয়লেটের কীট। ওরা পাষণ্ড বর্বর। ওরাই প্রকৃত মীর জাফর, রাজাকারের বংশধর। কোন দলের সেটা মুখ্য নয়।
আমি আমার কন্ঠকে এসকল জানোয়ারদের বিরুদ্ধে শানিত করেছি। চালিয়ে যাবো। কলমকে শানিত করেছি। লিখে যাবো। সাথে প্রশ্ন রাখি- আপনি কী ভাবছেন, দাড়াবেন দুর্নীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে।
আসুন, জাতীয় স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে মানবিক হই,গর্জে উঠি। ঐ জানোয়ারদের বিরুদ্ধে জাগ্রত হই। মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে নতুন শ্লোগান তুলি, ‘তুই দুর্নীতিবাজ, নিপাত যা। ‘তুই দুর্নীতিবাজ, তুই জানোয়ার।’
লেখার শেষে স্বাধীন বাংলার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করছি, আমৃত্যু যিনি দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন।
লেখক: ছরওয়ার হোসেন, নিউইয়র্ক প্রতিনিধি, স্যোসাল এক্টিভিস্ট, নিউইয়র্ক প্রবাসী।