ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া টাঙ্গাইলের বাউলশিল্পী শরিয়ত বয়াতির মুক্তির দাবিতে সিলেটে প্রতিবাদী ‘গানমিছিল’ করেছে নাট্যসংগঠন নগরনাট।
১৫ জানুয়ারী বুধবার বিকেলে সিলেট নগরীতে গানে গানে বাউল শরিয়ত বয়াতিকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানানো হয়। বাঙালির লোকসংস্কৃতি আর মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর বাধার প্রতিবাদ হিসাবে ‘গানমিছিল’ নামে এই প্রতিবাদী কর্মসূচীর আয়োজন করে নগরনাট।
বিকেল সাড়ে ৪টায় সিলেট নগরীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে এ ‘গানমিছিল’ শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।
এসময় নগরনাটের কর্মীরা গানে গানে বাউলশিল্পী শরিয়ত বয়াতির মুক্তির দাবি এবং তাকে অযৌক্তিক মামলায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের প্রতিবাদ জানান। এতে নগরনাটের সদস্যরা ছাড়াও সিলেটের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য ও মুক্তচিন্তার মানুষেরা অংশ নেন। গান গেয়ে সড়কে ঘুরে বেড়ানো এই ব্যতিক্রমী মিছিলটি দৃষ্টি কাড়ে সিলেট নগরবাসীর।
‘গানমিছিলে’ অংশনেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমেদ মিশু, সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত, তথ্যচিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে যাদু, পরিবেশকর্মী আশরাফুল কবির, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবু ও সংগঠক রাজীব রাসেল প্রমুখ।
।প্রসঙ্গত, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আগধল্লা গ্রামের বাউল শরিয়ত বয়াতি (৩৫) গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার একটি বাউলে গানের আসরে যান। সেখানে পালা গানে তিনি বলেন, ‘গান বাজনা হারাম কোরআনে কোথাও এ কথা বলা নাই। কেউ যদি হারাম প্রমাণ দিতে পারেন তবে তাকে ৫০ লাখ টাকার চ্যালেঞ্জ দিলাম।’
ইউটিউবে শরিয়তের এই বক্তব্য তার নিজ গ্রামের কিছু মানুষ দেখে। এরপর তারা অভিযোগ আনেন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন শরিয়ত। তার বিচারের দাবিতে এলাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেন তারা।
গত ৯ জানুয়ারি আগধল্লা গ্রামের মাওলানা মো. ফরিদুল ইসলাম বাদী হয়ে শরিয়তের বিরুদ্ধে মির্জাপুর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন।মাওলানা মো. ফরিদুল ইসলাম এর দায়ের করা ওই মামলায় শরিয়তে বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাতের অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়।
গত ১১ জানুয়ারি শনিবার শরিয়তকে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওইদিনই তাকে টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিন দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার দুপুরে শরিয়ত বয়াতিকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।