আবহমান বাংলার কৃষিশিল্প হালের কর্পোরেট সমাজে যতটা উচ্চারিত এবং প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল-তার সিকিভাগও হয়নি বলে মনে করা হয়।
আমাদের চরিতজীবনে কৃষক ও কৃষি জমজ ভাইবোনের মতো। বাঙালির চিরায়ত উৎসব,পার্বণে- কৃষক ও কৃষি বিষয়ক ঐতিহ্যের প্রকাশ আমাদের গোলাভরা সংস্কৃতির দিকগুলোই আলোকিতভাবে তুলে ধরে।
কৃষিনির্ভর অর্থনীতির বাংলাদেশে সারা বছর কৃষিপণ্য সংবাদে নানাভাবে শিরোনামে থাকে। পাশাপাশি এর নেপথ্যের কারিগর-কৃষকরাও সংবাদে শিরোনাম হয়। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে বেদনার, মনখারাপের বিষয় নিয়ে তারা খবরের শিরোনাম হয়।
সম্প্রতি এর ব্যতিক্রম খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অগণন দর্শকদের মন জয় করেছে। ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার খালবলা, আঠারবাড়ী‘র কৃষক আব্দুল কাদির কৃষি জমিতে সবজিচাষে ফুটিয়ে তুলেছেন তার সৃজনশীলতা। কৃষক আব্দুল কাদির (৪০) তার মননশীল ভাবনা আর ভালোবাসার নিদর্শনের রূপ মাঠে ফুটিয়ে তুলেছেন আপন নৈপুন্যতায়।
৩৫ শতক জমিতে সবজি বাগানের নৈপুণ্যতা মুগ্ধ করেছে অন্যান্য কৃষক সহ গোটা এলাকার মানুষদের। প্রতিদিন অনেক মানুষ কৃষক কাদিরের ক্ষেত দেখতে ভিড় করছেন।
ক্ষেতে নানা সৃজনশীল কারুকাজ এবং বিশেষ করে চার কোণে ও মাঝখানটায় ভালোবাসাচিহ্ন আঁকার বিষয়টি স্মিত হেসে বলেছেন,‘এর পেছনে একটি মজার গল্প রয়েছে। গল্পটি হলো- কিশোর বয়সে উপজেলার সোহাগী গ্রামের এক কিশোরীর প্রেমে পড়েছিলাম।তখন সেই প্রেমের সেতু বন্ধন রচিত হয়েছিল চিঠির মাধ্যমে। প্রেমিকা আমাকে যখন চিঠি লিখতো তখন, চিঠির চার কোণে চারটি এবং মাঝখানে একটি বড় লাভচিহ্ন এঁকে দিতো। লাভচিহ্নের ভেতরে লেখা থাকতো আমার প্রেমিকা ও আমার নাম। কিশোর বয়সের সেই লাভচিহ্নকে ফসলের জমিতে ফুঁটিয়ে তুলে ভালোবাসার প্রতি সম্মান দেখালাম। আমার প্রেমিকার নাম মকসুদা বেগম । ভালোবেসে তাকে বিয়ে করে সুখে সংসার করছি। আমাদের সংসারে এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। মাকসুদা আমার কাছে মমতাজের মতো। সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রীর ভালোবাসার নিদর্শন স্বরুপ তাজমহল তৈরী করেছিলেন। আমি গরীব, আমার সামর্থ্য নেই, কিন্তু আমার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার কমতি নেই। তাই তাজমহল বানাতে না পারলেও জমিতে সেই লাভ চিহ্নের নকশা এঁকে প্রেমের নিদর্শন হিসেবে প্রেয়সীকে লেখা চিঠির মতোই নিজের জমিতে প্রেমপত্র এঁকেছি।’
অভিনন্দন কৃষক আব্দুল কাদির। আপনাকে আমাদের ভালোবাসা ও শুভকামনা।
তথ্য: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে।