বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
সাংবাদিক আব্দুল বাছিত রফির পিতা হাজী মো: আব্দুল হান্নান এর মৃত্যুতে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দের শোক  » «   বাংলাদেশে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের সম্পদ সুরক্ষায় অন্তবর্তীকালীন সরকারকে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে  » «   ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটির উদ্যোগে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং কর্মশালায় বিভিন্ন পেশার মানুষের অংশগ্রহণ  » «   হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমের  বিরুদ্ধে নীতিহীন কর্মকান্ডের অভিযোগ  » «   সাংবাদিক ক্যারলকে গ্লোবাল জালালাবাদ ফ্রান্সের বিশেষ সম্মাননা প্রদান  » «   গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক জালালাবাদ উৎসব প্যারিস অনুষ্ঠিত  » «    সাকিব : নক্ষত্রের কক্ষচ্যুতি  » «   লন্ডনে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী চাটগাঁয়ে মেজবান ৬ অক্টোবর রবিবার  » «   ১১তম মুসলিম চ্যারিটি রান ২০ অক্টোবর ভিক্টোরিয়া পার্কে  » «   ৭৫ শেফ এর অংশগ্রহণে বিসিএর শেফ অব দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত  » «   ৩০ বছরেও ধরা পড়েনি কোনো আসামী, বিচারের দাবীতে মেয়ের সংবাদ সম্মেলন  » «   ইস্টহ্যান্ডসের ফ্রি স্মার্ট ফোন পেলেন ৪০ জন  » «   সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্য পদক ২০২৪’পেলেন কবি, সাহিত্যিক ও সংগঠক ফারুক আহমেদ রনি  » «   টাওয়ার হ্যামলেটসে হোমলেসনেস-এর প্রস্তাবিত নতুন পলিসি সাসপেন্ড করেছেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর  » «   লন্ডনে বিসিএ এ্যাওয়ার্ডস ২৮ অক্টোবর থাকছে নানা চমকপ্রদ আয়োজন  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

বিমান বন্দরে তথাকথিত ভিআইপি ও দলিত লজ্জা  



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিগত কয়েক বছর থেকে থেকে সিলেট বিমান বন্দরে তথাকথিত   ভিআইপিদের আনাগোনা দেখে মনে হয়- কিয়ামত খুব  সন্নিকটে । কিয়ামতের কিছু লক্ষণের মধ্যে একটি লক্ষণ  হলো- পৃথিবীতে এমন একসময়  আসবে যখন, সমাজের অপদার্থদের কারণে গুণীজনরা আত্নমর্যাদা রক্ষার্থে নিজ স্থান বা অবস্থান ত্যাগ করে পালিয়ে বেড়াবে এবং অপদার্থরা গুণীজনের স্থান দখল করে বসবে।

বিমান বন্দরের ভিআইপি প্রোটোকল রাষ্ট্র অতি গুরুত্বপূর্ণ ও বিদেশী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পাওয়ার কথা থাকলেও বিগত কয়েক বছর থেকে ভিআইপি প্রোটোকল পাচ্ছেন- রিক্সার ড্রাইভার, ঠেলাগাড়ির ড্রাইভার, তান্দুরী শেফ, বোচার ও বিদেশে থাকা তথাকথিত বাটপাররাজনৈতিকনেতারা। বিমান বন্দরের নীতি অনুসারে উল্লেখিত শ্রেণির লোক ভিআইপি প্রোটোকলের আওতায় না পড়লেও তাদেরকে ভিআইপি’র সকল  ধরনের সুবিধা পাইয়ে দেয় -বাংলাদেশে থাকা কিছু সুবিধাভোগী চরিত্রহীন  তথাকথিত রাজনৈতিক নেতা নামক দালাল ।

জানা যায় উল্লেখিত শ্রেণির লোকেরা যখন বিদেশ থেকে দেশে যাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন, নিজেকে একজন গুরুত্বপূর্ণ  ব্যক্তি হিসাবে সমাজে  প্রকাশ করতে প্রাথমিক প্রদক্ষেপ হিসেবে বিমান বন্দরে ভিআইপি প্রোটোকল নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়! আর এই মনোবাসনা পূর্ণ করতে যোগাযোগ করতে হয় দেশে অবস্থানরত সুবিধাভোগী বাটপার, তথাকথিত রাজনৈতিক নেতাদের সাথে । দেশে অবস্থানরত দালালদের জন্য দামী উপঢৌকন অথবা নির্দৃষ্ট পরিমাণ অর্থের প্রতিশ্রুতি হলে ব্যবস্থা হয়ে যায় ভিআইপি প্রোটোকল । এই অবস্থায় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা  আত্নমর্যাদা রক্ষার্থে  সিলেট বিমান বন্দরে দীর্ঘ দিন থেকে ভিআইপি প্রোটোকল নেয়াকে সঙ্কোচ বোধ করছেন । যেখানে গুরুত্বপূর্ণ মানুষের গুরুত্ব পাওয়ার কথা সেখানে, তারা গুরুত্ব পাচ্ছে  না ।

কথায় আছে যে সমাজে গুণীজনের  সম্মান নেই সেই সমাজে গুণীজন জন্মায় না । বিমান বন্দরে এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য এক অশনি সংকেত বয়ে আনবে । এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা সিলেটের সচেতন জনগণের ।

নিরুপায় জনগণ  দীর্ঘদিন হতাশার সাগরে ভাসলেও  কিছুটা আশার সঞ্চার করেছিল হাইকোর্টের  একটি রায় । গত  কয়েকমাস পূর্বে একজন যুগ্ম -সচিবের জন্য মাদারিপুর কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে তিন ঘণ্টা দেরিতে ফেরি ছাড়ার কারণে মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়া নড়াইলের কালিয়া পৌর এলাকার একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষ  ( এগারো ) মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যায় । এর পরিপ্রেক্ষিতে  মানবাধিকার সংগঠন- লিগ্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড পিপলস রাইটসের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জহিরুদ্দিন মিলন  মৃত তিতাসের ক্ষতি পূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।  বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি  কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিট শুনানি হয় । রিট শুনানির পর হাইকোর্ট বলেছেন- এখন থেকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ ভিআইপি নয় ।

এই রায়ের পর মাসখানেক সিলেট বিমান বন্দরে ভুয়া  ভিআইপিদের আনাগোনা কমলেও  প্রথম আইনকে অবজ্ঞা করে ভিআইপি সুবিধা ভোগ করেন  ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়  সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। বিমান বন্দরে তার উপস্থিতিতে তার কর্মী সমর্থকরা  বিমান বন্দরের সকল নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে বিমানের পাশে গিয়ে তাকে স্বাগত জানায় । এই সংবাদটি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী মাননীয়  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কানে পৌঁছালে তিনি ক্ষোব্ধ হোন। ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের  অন্যান্য অনৈতিক কর্মকান্ড সহ সিলেট বিমান বন্দরে ভিআইপি সুবিধা ভোগের কারণে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়  সভাপতির পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেন। এই ঘটনার পরও থামেনি বিমান বন্দরে ভুয়া ভিআইপিদের সুবিধা ভোগ । আর এই কাজটি করে যাচ্ছে বিমান বন্দরের কিছু অসাধু  কর্মচারী  ও তথাকথিত  রাজনৈতিক নেতারা ।

এই  সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক নেতিত্রীবৃন্দের সচেতনতার। আইন সবার জন্য সমান- এই কথাটি জনগণকে সবচেয়ে বেশী বলেও বেড়ান বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা। আইন প্রথমে নেতাকে মানতে হবে । তারপর তা অনুসরণ করবে তার অনুসারী কর্মী ও জনগণ ।

বিমান বন্দরে অনৈতিক ভিআইপি সুবিধা ব্যবহারের ক্ষেত্রে দিন দিন মানুষের যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে ,সেখানে মানুষের মনে আশার সঞ্চার ঘটালেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক  শফিউল আলম চৌধুরী  নাদেল । সম্প্রতি  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর ঢাকায় অবস্থানরত নাদেল যখন ঘোষণা দিলেন  তিনি -ত্রিশ ডিসেম্বর বিমান যোগে সিলেট আসছেন। তার এই শুভ আগমনের বার্তায় আনন্দিত সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতা-কর্মী তাকে পূণ্যভূমি সিলেটে স্বাগত জানতে সিলেট বিমান বন্দরের  ভিআইপি লাউঞ্জে অবস্থান করছিলেন ।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক  শফিউল আলম চৌধুরী  নাদেল নির্ধারিত ফ্লাইটে  নির্ধারিত সময়ে সিলেট বিমান বন্দরে পৌছালেও তিনি ভিআইপি লাউঞ্জে অপেক্ষারত নেতৃবৃন্দের দিকে না গিয়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সাধারণ যাত্রীদের পথ অনুসরণ করে বিমান বন্দর থেকে বেরিয়ে আসেন । এতে বিস্মিত হয়েছেন- ভিআইপি লাউঞ্জে অপেক্ষারত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্খিরা । সকলের মনে একটি প্রশ্ন ছিল যে,  পাতিনেতারা  ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করলেও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল কে নয়! বর্তমান এই হযবরল পরিস্থিতিতে জনাব নাদেল ভিআইপি  কৌটায় না পড়লেও তিনি ইচ্ছা করলে ভিআইপি সুবিধা ভোগ করতে পারতেন । কিন্তু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার না করে সাধারণ যাত্রীদের সাথে বেরিয়ে তিনি একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন । যা  বর্তমান বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক । এই উদাহরণ জনাব নাদেলকে সম্মানের আরো উচ্চ আসনে নিয়ে গেছে বলে  অগণিত মানুষ মনে করে।

বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ সহ সর্ব ক্ষেত্রে নেতারা যদি এভাবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন তাহলে, নেতার যেমন জনগণের কাছে  শ্রদ্ধাশীল হবেন তেমনি সর্বক্ষেত্রে  তাদের অনুসারী ও জনগণ আইন মানতে উৎসাহিত হবেন ।

লন্ডন,জানুয়ারি,দুই হাজার বিশ।

ছরওয়ার আহমদ: স্যোসাল এক্টিভিস্ট, সাবেক ভিপি ; বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ।


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক