দাবানলে জ্বলছে অস্ট্রেলিয়া। প্রযুক্তিগত সকল ব্যবস্থা নিয়েও কোনোভাবেই এই দুর্যোগ সামলাতে পারছে না দেশটির সরকার।নিরুপায় অস্ট্রেলিয়ার সবার যেন একটাই প্রার্থনা- অঝরে বৃষ্টি দাও বিধাতা।
অষ্ট্রেলিয়ার পুলিশ এবং জরুরী সেবা মন্ত্রনালয় থেকে বলা হয়েছে, একেকটি আগুনের শিখা প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এবং এই দাবানলটির ´গতি এবং ভয়াবহতা´ বিগত কয়েক দশকে পরিলক্ষিত হয়নি।
নিউ সাউথ ওয়েলসে এখনো ৮০ টি আগুনের শাখা রয়েছে। যার মধ্যে ২০ টি এখনওতাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে রয়েছে। প্রায় ১৯৩ টি বাড়ী ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০৯ টি বাড়ি।
পুলিশ এবং জরুরী সেবা মন্ত্রনালয় বিবৃতিতে আরও জানিয়েছে- এই আগুন বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানিয়েছে- এক একটি আগুনের শিখা প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত উচু এবং এটি সময় সময় কিলোমিটারের পর কিলোমিটার ছড়িয়ে পড়ছে।
সকলের মুখে এখন একটাই প্রার্থনা- অঝর বৃষ্টি। একমাত্র বৃষ্টি-ই পারে এই দাবানলকে থামাতে। বলতে গেলে –প্রকৃতির কাছে করজোর প্রার্থনায় আছে গোটা- অস্ট্রেলিয়াবাসী।
দুই মাসের বেশি ধরে চলা ভয়াবহ দাবানলে ৫০কোটি‘রও বেশী বন্যপ্রাণী মারা গেছে। ৬০ কোটিরও বেশী ঐতিহ্যমন্ডিত বিভিন্ন বস্তু ও নিদর্শণ ধ্বংস হয়েছে। এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩০ জন অস্ট্রেলিয়। ২৮ জন এখনও নিখোজ । হৃদয়বিদারক মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। ইতিমধ্যেই দেশটির ৬ রাজ্যের ৪ টিই দাবানলের কবলে পড়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে ৩৬ লাখ হেক্টর জমি পুড়ে গেছে। যা ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামের থেকেও বড়।
কুইন্সল্যান্ডে পুড়ে গেছে ২ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমি। এছাড়া ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যে ৮ লাখ ২০ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল পুড়ে গেছে।
সবচেয়ে বিপদে আছে -বনের বাসিন্দা-পশুরা। চারদিক থেকে আগুন তাদের এমনভাবে ঘিরে ধরছে যে, পালানোর সুযোগটাও নেই! অসংখ্য প্রাণী কোনোমতে পালিয়ে জনবসতিতে চলে এসেছে। ভয়াবহ দাবানলে, বিশ্ববাসী দূ:খভারাক্রান্ত মননিয়ে দেখছে- অস্টেলিয়ার মানুষের ‘মানবিকহৃদয়‘। মানুষ এই দূর্গত প্রাণীদের আশ্রয় দিয়েছে। তাদের চিকিৎসা এবং খাবারের ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেই ভয়ার্ত পশুগুলো মানুষ দেখলেই এখন জড়িয়ে ধরছে! তাদের চোখে ভয়। অনেকপুশুর শরীর- আগুনের তাপে জ্বলে গেছে। কেউ দুর্বল দেহে- তৃষ্ণায় কাতরাচ্ছে। অসহায় চোখে-মুখে শুধু- বাচার আর্তি।
দগ্ধ-অর্ধদগ্ধ প্রাণীগুলোর ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ব মিডিয়ায়। যেই দেখছে, তার চোখ বেয়ে নেমে আসছে জলের ধারা। প্রকৃতিকে ধ্বংসে মত্ত বিশ্বপ্রভূদের দিকে ক্ষোব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন- পরিবেশবাদী সহ সকল পর্যায়ের মানুষজন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে- হৃদয়বিদারক দাবানলের দৃশ্যগুলো দেখে গোটা বিশ্বে -অগণন মানুষের প্রতিবাদিকন্ঠ থেকে দাবী ওঠেছে- সবুজ প্রকৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাচিয়ে পৃথিবীকে চিরসবুজ ও দুষণমুক্ত রাখার দায়িত্বটা নিতে হবে প্রকৃতিধ্বংসে মত্ত বিশ্বমোড়লদেরকেই।
কণ্ঠ: সুমু মির্জা