আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এ এক দশকেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছি। জাতির পিতা যে স্বল্পোন্নত দেশ রেখে গিয়েছিলেন, আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। এটা ধরে রাখতে হবে। আমাদের লক্ষ্য, আরও সামনে এগিয়ে যাওয়া।’
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২১তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, মানুষকে কিছু দিয়েছে। অসহায় মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বঙ্গবন্ধু কাজ করে গেছেন। এ দেশের মানুষ ছিল দারিদ্র্য সীমার নিচে। তারা এক বেলা খেতে পেত না। গৃহহারা ছিল। শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ছিল শোষিত-বঞ্চিত। তাদের কীভাবে মুক্তি দেবেন? এটাই ছিল জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য। এ জন্য তিনি দেশ স্বাধীন করেছিলেন। মানুষ তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাদের শ্রদ্ধা করি। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের জন্ম। এ দল ক্ষমতার আলিঙ্গন থেকে প্রতিষ্ঠিত কোনো দল নয়, জনগণের ভেতর থেকে প্রতিষ্ঠিত দল।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগই এ দেশের মানুষকে কিছু দিতে পেরেছে। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যারা অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব, এটাই আমাদের লক্ষ্য। আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত এসেছে বারবার। জাতির পিতাকেও কতবার হয়রানি করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা হয়েছে, ফাঁসির আদেশ হয়েছে। তারপরও তিনি সততার সঙ্গে এগিয়ে গিয়েছিলেন বলেই বাঙালি একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে শেষ করার অনেক চেষ্টা হয়েছে। যখনই আঘাত এসেছে, সবার আগে এসেছে আওয়ামী লীগের ওপরই। কিন্তু জাতির পিতার হাতে গড়া এ সংগঠন ধ্বংস করতে পারেনি কেউই।’
তিনি বলেন, ‘যিনি ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন, তিনি সফল হবেন। আর এ কাজটা আওয়ামী লীগই সবচেয়ে বেশি করেছে। এর জন্যই জনগণ কিছু পেয়েছে। কাউন্সিলের মধ্য দিয়েই সংগঠন চাঙা হয়, শক্তিশালী হয়। আমরা সেভাবেই দলকে গড়ে তুলতে চাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু দেশের নাম, জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সঙ্গীত ঠিক করে রেখেছিলেন। আওয়ামী লীগকে শেষ করার জন্য আইয়ুব, ইয়াহিয়া, জিয়া, এরশাদ ও খালেদা সবাই চেষ্টা করেছে। নেতাকর্মীদের ঐক্যের কারণেই আওয়ামী লীগকে শেষ করা সম্ভব হয়নি।’
সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করেন ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- সম্মেলনের অভ্যর্থনা উপ-কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ নাসিম।
মূল অনুষ্ঠানের শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
বাংলাদেশ সৃষ্টির আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বশেষ শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩টা ৫ মিনিটে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। গাড়ি থেকে নেমেই তিনি পতাকা মঞ্চের দিকে হেঁটে যান। সেখানে দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি তুলে ধরে প্রায় ২৫ মিনিট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।