সম্প্রতি রাজাকারের তালিকা প্রনয়ণ করেছে সরকার। কিন্তু বাংলাদেশের জেলায়-উপজেলায় এ নিয়ে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। অসংখ্য ভুল তথ্যে ভরা এ তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছেন রাজাকার। আবার কোন জায়গায় রাজাকার হয়ে গেছেন মুক্তিযোদ্ধা।এ নিয়ে চলছে প্রতিবাদ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ষড়যন্ত্র করেই কোন কোন মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকারের তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর বরিশাল জেলা সদস্য সচিব ডা: মনিষা চক্রবর্তীর বাবা মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তপন চক্রবর্তী এবং ঠাকুর মা(দাদি) শহীদ জায়া উষা চক্রবর্তীর নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভূক্তি করার প্রতিবাদে বরিশালে সাংবাদ সম্মেলন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাসদ। সমাবেশ শেষে সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় অগ্নিসংযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধা তপন চক্রবর্তী।
মঙ্গলবার(১৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় জেলা বাসদ এর ফকিরবাড়ি রোডস্থ্য কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ডা: মনিষা চক্রবর্তী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ জায়ার নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা শুধু একটি মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবারের সাথেই নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল মানুষের জন্য লজ্জাজনক ঘটনা।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরও বলা হয়, যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয় তপন চক্রবর্তীকে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে অন্তর্ভূক্ত করেছে সেই একই মন্ত্রনালয় তাকে রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছে। তপন চক্রবর্তীর মা, শহীদ সুধীর চক্রবর্তীর সহধর্মীনি প্রয়াত উষা চক্রবর্তীকেও একই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। অথচ তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী প্রগতিশীল নারী হিসেবে সর্বমহলে সুপরিচিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে ডা: মনিষা চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, বরিশালে ক্ষমতাসীন দলের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাসদ একমাত্র সোচ্চার কন্ঠ হওয়ায় আমাদের ওপর দমন নিপিড়ন চালানোর চেস্টা চলছে। আমরা মনে করি মনীষা চক্রবর্তীর পরিবারের সদস্যদের অন্তর্ভূক্তির বিষয়টি বাসদ এর কন্ঠ রোধ করার নগ্ন ও ন্যাক্কাজনক রুপ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মুক্তিযদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য রাজাকারের তালিকা করা জরুরী। কিন্তু মহান বিজয় দিবসে রাজাকারের যে তালিকা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয় প্রকাশ করেছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। একজন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাকে কোন রকম যাচাই বাছাই ছাড়াই রাজাকার বানিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়ার তদন্ত দাবি করা হয় সাংবাদিক সম্মেলনে। একই সঙ্গে এই রাষ্ট্রীয় অপমানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরও শাস্তি দাবি করে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের বুলি আউরিয়ে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এধরনের চক্রান্ত করা হয়েছে। বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবেলা করা হবে।
সাংবাদিক সম্মেলন শেষে দলীয় কার্যালয় থেকে বাসদ এর বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে অশ্বীনি কুমার হলের সামনে সমাবেশ করে। সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তপন চক্রবর্তী, বাসদ এর জেলা আহবায়ক ইমরান হাবিব রুমন, ডা: মনীষা চক্রবর্তী প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
অ্যাডভোকেট তপন চক্রবর্তী তার বক্তব্যে বলেন, বিজয়ের ৪৮ বছর পর রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছি। এখন আর বেঁচে থেকে লাভ কি? এ তালিকা বাতিল করে রাস্ট্রকে ক্ষমা চাইতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাজাকারের তালিকায় আমি ও আমার মায়ের নাম অন্তর্ভূক্তির পিছনে বড় ষঢ়যন্ত্র রয়েছে। ডা: মনীষা চক্রবর্তী বলেন, বিজয়ের মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের তালিকায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কলংকিত করেছে। সমাবেশ শেষে অ্যাডভোকেট তপন চক্রবর্তী ও ডা: মনীষা চক্রবর্তী একযোগে রাজাকারের তালিকায় অগ্নিসংযোগ করেন।
রাজাকারের তালিকায় পাথরঘাটার মুজিবুল
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় থেকে প্রকাশিত বরগুনার পাথরঘাটার রাজাকারের তালিকার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিক সন্মেলন এবং মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গলবার (১৭ডিসেম্বর) সকালে। বিকালে পাথরঘাটা শেখ রাসেল স্কয়ারে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বরগুনার পথরঘাটার তৎকালিন থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং একাত্তরের মুক্তি সংগ্রাম কমিটির সভাপতি মুজিবুল হক নয়া মিয়ার নাম রাজাকারের তালিকায়! গতকাল খবরটি প্রকাশ হয় এবং ১নম্বর স্থানে সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতা যিনি এখন আর বেঁচে নেই তাঁর নামটি দেখতে পান স্থানীয় মানুষ।
মুহূর্তে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে ছরিয়ে পরে গোটা দুনিয়ায়। মানুষ ক্ষোভে ফেটে পরে। যে যেভাবে পারে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে প্রেস কনফারেন্স করতে ছুটে আসেন সুস্থ-অসুস্থ সকল মুক্তিযোদ্ধা সহ সর্বস্তরের জনতা। এসময় পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সকল সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিজ নিজ আসন ছেড়ে দিয়ে দাড়িয়ে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের এই কর্মসূচিকে সমর্থ জানিয়ে প্রেসক্লাবের ওই সংবাদ সন্মেলনে বক্তব্য রাখেন পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড.জাবির হোসেন। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সমর্থণ জানান পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ।
পরে বেলা ১১টার দিকে শেখ রাসেল স্কয়ারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত ওই মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন এড. জাবির হোসেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মল্লিক মোহাম্মদ আইয়ুব, পাথরঘাটা পৌরমেয়র আনোয়ার হোসেন আকন, মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান মৃধা, মুক্তিযোদ্ধা মনি মন্ডল, পাথরঘাটার কালমেঘা ইউপি চেয়ারম্যান আকন মো. শহিদ, মুজিবুল হক নয়া মিয়ার ছেলে রেজাউল করিম শাহিন, শহীদ শাহজাহানের সন্তান পাথরঘাটার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন, মুক্তিযোদ্ধা এড.সাইদুল কবির ফারুক সহ অন্যান্য নেতা।
মুজিবুল হক নয়া মিয়ার সন্তান রেজাউল করিম শাহিন বলেন, শুধু আমার বাবার নামের কথা নয়,পাথরঘাটা সহ সারা দেশে প্রকৃত আওয়ামী লীগের যেসকল নেতৃবৃন্দর নাম ষড়যন্ত্র করে রাজাকারের তালিকায় ঢুকানো হয়েছে। তাদেরকেও তালিকা থেকে বাদ দিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান তিনি। অবিলম্বে বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান বক্তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান।