পেঁয়াজ চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি রোধ, জাতীয় ন্যূনতম মজুরী ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণ, জনগণের ভোটাধিকার, ভূমিহীন ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুরদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় দখলমুক্তকরণ, রেল-সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের উপর জুলুম-নির্যাতন বন্ধ, ভারতের সাথে জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসমচুক্তি বাতিলসহ ১৭ দফা দাবিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটি’র (সিপিবি) ডাকে দেশব্যাপী পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৭ ডিসেম্বর শনিবার সিপিবি সিলেট জেলাধীন বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার উদ্যোগে পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়। বিকেল ৩ টায় পঞ্চখন্ড গোলাবিয়া পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে পথসভার মাধ্যমে এ কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি কমরেড হাবিবুল ইসলাম খোকা। সিপিবির নেতা- কর্মিবৃন্দসহ বিভিন্ন গণসংগঠনের নতৃবৃন্দ লাল পতাকা এবং জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন দাবি সংবলিত প্লেকার্ড হাতে নিয়ে পদযাত্রায় অংশ নেন। পদযাত্রা চলাকালে ১৭ দফা দাবিসংবলিত লিফলেট বিতরণের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন স্থানে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসব পথসভায় বক্তারা বলেন, দেশ আজ ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি। দেশের পরিস্থিতির উপর বর্তমানে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পেঁয়াজ-চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি, অবাধ লুটপাট, চাঁদাবাজি, টেন্ডাবাজি, দুর্নীতি ও দুঃশাসনে সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সিন্ডিকেট করে ক্ষমতাসীনদের অনুগতরা কৃত্রিমভাবে মূল্য বৃদ্ধি করে জনসাধারণের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচার করছে। নারী ও শিশু নির্যাতন সকল মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের উপর জুলুম- নির্যাতন ও তাদের সহায়-সম্পত্তি দখলের ঘটনা থামছেই না। সড়ক ব্যবস্থাপনায় আর রেলে চলছে চরম অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি। যে কারণে রেলে ও সড়কে মৃত্যুর মিছিল ক্রমাগত বেড়েই চলেছে শিক্ষা ব্যবস্থায় ত্রæটির কারণে শিক্ষার মান ক্রমশ নিম্নগামী। লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক আজ হতাশায় হাবুডুবু খাচ্ছে। কিন্তু সব ব্যাপারেই সরকার নির্বিকার। তারা গদি রক্ষায় মরিয়া হয়ে উন্নয়নের নামে শুধু ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছে। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে লুটপাট-দুর্নীতি, গণতন্ত্রহীনতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং কমিউনিস্ট ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে শোষণমুক্ত সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে জোরালো আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য ছাত্র-যুব-জনতার প্রতি বক্তারা আহবান জানান। এছাড়াও কৃষকদের সকল কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, ক্ষেতমজুরদের বছরব্যাপী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ ভ‚মিহীন গ্রামীণ মজুরদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু, সিলেট-আখাউড়া বিদ্যমান রেলপথ সংস্কার করে ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ, ডাক্তার নার্সসহ প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগদানের মাধ্যমে বিয়ানীবাজার হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় উন্নীকরণ, সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়ক সংস্কার ও প্রশস্থকরণ, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে নতুন নতুন বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু ও আসন সংখ্যা বৃদ্ধি, ছাত্র- ছাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিয়ানীবাজার কলেজে বাস সার্ভিস চালু, সারাবছর খেলাধুলার সুবিধার্থে বিয়ানীবাজারে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ এবং নতুন প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে একটি কম্পিউটার ইন্সটিটিউট স্থাপনের জন্য বক্তারা জোর দাবি জানান।
পথসভাগুলোতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন, সিপিবি বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট আবুল কাসেম, সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান, সিপিবি শাহপরান থানা শাখার সম্পাদক তুহিন কান্তি ধর, সিপিবি বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি দয়াময় দত্ত, কুড়ারবাজার কলেজের প্রভাষক সিপিবি নেতা বিজিত আচার্য, সংবাদিক ও সিপিবি নেতা হাসান শাহরিয়ার, বিয়ানীবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর ও সিপিবি নেতা আকছার হোসেন, যুব নতো মুজাহদিুল ইসলাম, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা নজিাম উদ্দনি আবুল, আব্দুর রহমান, উদীচীর সনদ্বীপ দেব, মাসুম আহমদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাবিল এইচ, ছাত্র ইউনিয়ন বিয়ানীবাজার উপজেলা সংসদের সভাপতি ফারাজ আবির, সাধারণ সম্পাদক সুজন দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইশতিয়াক হিমেল, সিলেট মহানগর সংসদের সহ- সাধারণ সম্পাদক সমনীষা ওয়াহিদ, ছাত্র নেতা মুহাইমনিুল ইসলাম মাহনি প্রমুখ।