`বাংলাদেশের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে শুধু সরকার দলই নয়, বিকল্প দলও চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার। আর এ লক্ষ্যে ত্রিধাবিভক্ত ন্যাপসহ বাম প্রগতিশীল শক্তির এক পতাকাতলে সমবেত হওয়ার বিকল্প নেই।’
সোমবার মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য উপমহাদেশের বাম রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব, ন্যাপ সভাপতি সদ্য প্রয়াত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ স্মরণে আয়োজিত লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক স্মরণ সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক সহকর্মী পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাজনীতিকদের আদর্শিক ও চারিত্রিক দুর্বলতার কারণেই নতুন প্রজন্ম এখন রাজনীতিবিমূখ। নতুন প্রজন্মকে রাজনীতিমূখী করতে মোজাফফর আহমদের মত নেতাদের জীবন দর্শন চর্চায় তাদের উৎসাহী করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির রাজনীতি চলতে পারে না। সরকার ও বিকল্প রাজনৈতিক দল দুটোই হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার।’
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুও দল ও প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান চালাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সে সময় তিনি পাননি। বঙ্গবন্ধু কন্যা সেটিতে হাত দিয়েছেন, তার জন্য শুভ কামনা।’
নাগরিক স্মরণ সভা প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মাহমুদ এ রউফের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম।
সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, ‘বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন আদায়ে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের ভূমিকা ছিলো অবিস্মরণীয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রয়াত এই নেতার লন্ডনে আয়োজিত আজকের স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রীর দূত হিসেবেই আমি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি।’ স্মরণসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের প্রবীণ সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ।
তিনি বলেন, ভিন্ন দলের হলেও অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন একজন রাজনৈতিক বন্ধু। বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তার চূড়ান্ত সফলতা আনা পর্যন্ত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ছিলেন তার পাশে।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের প্রথমেই প্রয়াত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের জীবনী পাঠ করে শোনান উদীচী, যুক্তরাজ্যের সেক্রেটারি আমিনা আলী। যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের পক্ষে প্রয়াত মোজাফফর আহমদের প্রতি সম্মান জানান রুমি হক।
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন-বাংলাদেশ হাই কমিশনের মিনিস্টার প্রেস আশেকুন্নবী চৌধুরী,প্রেসক্নাবের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল আহমদ, যুক্তরাজ্য ন্যাপ সভাপতি আব্দুল আজিজ ময়না, জাসদ সভাপতি হারুনুর রশীদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক, সিপিবি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এনাম, বাসদ সমন্বয়ক গয়াসুর রহমান গয়াস, উদীচী ও সিপিবির পক্ষে হারুনর অর রশীদ, জাসদ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবুল মনসুর, ন্যাপ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসান, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ডেপুটি স্পিকার কাউন্সিলার আহবাব হোসেন, বার্কিং অ্যান্ড ডেগেনহাম বারার কাউন্সিলর মঈন কাদরী, বাংলাদেশ থেকে আগত ৮০র দশকের ছাত্রনেত্রী ড. বহ্নি শিখা দাস পুরকায়স্থ, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের এক সময়ের রাজনৈতিক অনুসারী ডা. আশফাক আহমেদ, হাবিব রহমান, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক আবু মুসা হাসান, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ুম কয়সর, আব্দুল মান্নান ও মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেইনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও কমিউনিটি সংগঠনের নেতারা।
বক্তারা- অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক বিশেষ করে তৃণমুল মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে কাজ করার বিভিন্ন ঘটনা, আন্দোলন সংগ্রামে তার সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণমূখী দূরদর্শি চিন্তা, রাজনৈতিক জীবনে তার সততার নানা দৃষ্টান্ত সর্বপরি একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশে নিজে না রেখে শুধু দেশকে বিলিয়ে দেবার উজ্জ্বল দিকগুলো তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেছেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্মরণসভা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ রকিব আহমেদ।স্বরণ সভাটি প্রাণবন্ত পরিচালনা করেন সৈয়দ আনাস পাশা।
অনুষ্ঠানে বিলেতের বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক ও সামাজি সংগঠনের কর্মী ও লেখক, সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রয়াত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের উপর তৈরি একটি ডকুমেন্টারি প্রচার করা হয়। নির্মাণ ও গ্রন্থনা করেন হামিদ মোহাম্মদ। এছাড়াও হামিদ মোহাম্মদ, আবু মুসা হাসান ও সৈয়দ আনাস পাশা সম্পাদিত –‘ আপোশহীন রাজনীতিক অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ স্বরণ’- নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে।