বেশ টালমাটাল অবস্থা এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটে।গেলো বিশ্বকাপের মাঝামাঝি সময় থেকে খেলোয়াড়দের বাজে ফর্ম ও সাম্প্রতিক আলোচিত নানা ইস্যু,সব মিলিয়ে বলা যায় ভালো নেই সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ ক্রিকেট।
ভারত সফরের ঠিক আগ মুহূর্তে ক্রিকেটারদের আন্দোলন, একাধিক ক্রিকেটারের সফরসঙ্গী হতে অনিশ্চয়তা, বিসিবি থেকে সাকিব আল হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ; এসব বিষয় নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তাল ক্রিকেটপাড়া। এই সফরে সাকিবের সঙ্গী হওয়া না হওয়া নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে যখন দেশের ক্রিকেট ভক্তদের জন্য এসেছে নতুন দুঃসংবাদ।
২৯ অক্টোবর প্রথম প্রহর- বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য নিঃসন্দেহে কালো অধ্যায়ের একটি। এ রাতেই যে জানা গেলো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আইসিসি কর্তৃক নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন অন্তত ১৮ মাসের জন্য।
সাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। বাজিকরদের কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও নিশ্চুপ থাকা। আইসিসির কোড অফ কন্ডাক্টে বলা আছে, বাজিকরদের কাছ থেকে ম্যাচ বা স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাতে হবে। না হয় আইসিসির দুর্নীতি দমন সংস্থা- আকসুকে অবহিত করতে হবে। সে খবর নিজে লুকিয়ে রাখলে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।
কিন্তু সাকিব তার কোনটাই করেননি। ফলে আইসিসির দুর্নীতি দমন সংস্থার রায়ে ১৮ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন সাকিব। যা রীতিমতো রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগে এক ক্রিকেট জুয়াড়ির (বুকি) কাছ থেকে অনৈতিক প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। সেটি তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখ্যান করলেও আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে না জানিয়ে গোপন করেন তিনি। বিষয়টি পরে আইসিসি জানতে পারে। আন্তর্জাতিক জুয়াড়িদের কল রেকর্ড ট্র্যাকিং করে এ ব্যাপারে তারা তথ্য উদ্ধার করে। ওই জুয়াড়ি আইসিসির কালো তালিকায় থাকাদের একজন। বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর সম্প্রতি সাকিবের সঙ্গেও কথা বলেন আইসিসির অ্যান্টিকরাপশন অ্যান্ড সিকিউরিটি ইউনিট (আকসু) প্রতিনিধি।
জানা গেছে, সাকিবও নিজের ভুল স্বীকার করেছেন আকসু তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে। আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, জুয়াড়ির প্রস্তাবকে গুরুত্ব দেননি বলেই জানাননি। বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়াটাই তার জন্য কাল হয়েছে। সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন তিনি। বিসিবির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আজ অথবা আগামীকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাকিবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানাবে আইসিসি। বিসিবি এরই মধ্যে এ বিষয়ে অবগত হয়েছে।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ইতোমধ্যে একাধিক ব্রিফিং ও সাক্ষাৎকারে ৩০ অক্টোবর আইসিসির একটি রিপোর্ট পাওয়ার কথা বলেছেন। গত ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের বিষয়েও ইঙ্গিত দেন তিনি। সাকিব যে ৩০ অক্টোবর দলের সঙ্গে ভারত যেতে পারছেন না, সেটিও এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন বিসিবি সভাপতি। ভারত সফরে নতুন অধিনায়ক পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কথাও উল্লেখ করেছেন পাপন। সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, এত কিছুই ঘটেছে সাকিবের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞাকে সামনে রেখে।
আইসিসি ইতোমধ্যে সাকিবের ব্যাপারে বিসিবিকে বিস্তারিত জানিয়েছে। তাকে জাতীয় দলের সঙ্গে অনুশীলন না করার নির্দেশনাও দিয়েছে আইসিসি। এ কারণে অসুস্থ বলে জাতীয় দলের অনুশীলনে যোগ দিচ্ছেন না সাকিব। গতকাল সোমবার বিসিবির একাধিক পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাকিব পরবর্তী সময়ে আকসুকে সহায়তা করায় একটু নমনীয় তারা। শাস্তি ১৮ মাস নির্ধারণ করা হলেও সাকিব আপিল করলে সেটা কমিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। বিসিবির সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি সাকিব আইসিসির কাছেও ক্ষমা চেয়ে শাস্তি মওকুফের আবদেন করবেন। আইসিসি দুর্নীতি দমন বিভাগের নিয়ম ও শৃঙ্খলা মেনে চললে এই শাস্তি ছয় মাসে নেমে আসতে পারে। এটাই এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন শাস্তি।
উল্লেখ্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক সময়ের আশার ফুল নামে খ্যাত মোহাম্মদ আশরাফুলের ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছে এই ভয়াবহ বাজিকর এবার সাকিবও কি তাদের শিকারে পরিণত হলো তাই দেখার অপেক্ষায় দেশের ক্রিকেট প্রেমীরা।