বলা হয়ে থাকে বাঙালিরা যেখানেই গেছে,সেখানেই তার আলোকিত শিকড় – সংস্কৃতি, ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়েই গেছেন। প্রায় দুইশো বছরের ভারত উপমহাদেশ শাসন ও শোষণ করে আসা এই ব্রিটেনে, ইমিগ্র্যান্ট বাংলাদেশীদের অবস্থান খুব পজিটিভ। ওলন্দাজবাহিনী গোলাবারুদ আর শোষণে ভারতীয় উপমহাদেশের সম্পদ চুষে আনলেও ব্রিটেনে বাঙালিরা নিয়ে এসেছে ইতিবাচক অর্থনীতি ও সংস্কৃতির নানা আলোজাগানিয়া উপকরণ। বাংলাদেশী এবং ব্রিটিশ- বাংলাদেশীরা প্রকৃত অর্থেই আলো ছড়াচ্ছেন এবং স্পষ্টত ব্রিটেনের মাল্টিকালচারাল সোসাইটিতে এই আলোকশিখা নীহারিকা হয়েই জ্বলছে দিন দিন।
বর্তমান ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তিনজন নির্বাচিত বাঙালি এমপি- লন্ডনে তাদের নিজ নিজ সংসদীয় আসন থেকে প্রতিদ্বন্দিতা করেই স্বীয় যোগ্যতায় এমপি পদে আসীন হয়েছেন। ২০১০ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রথম বাংলাদেশী বংশদ্ভোদ হিসাবে পার্লামেন্ট সদস্য হয়ে পা রাখেন রুশনারা আলী। ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে টিউলিপ সিদ্দিকী ও ড. রুপা হক পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমান পার্লামেন্টে এই তিনজন-ই নিজ নিজ আসনের জনসাধারণ সহ ব্রিট- বাংলাদেশীদের উচ্চকণ্ঠ হয়ে কাজ করছেন। যার যার অবস্থান থেকে সমাজবান্ধব রাজনীতি ও তাদের কর্মযজ্ঞ ব্রিটেনের মূলধারায় প্রশংসিত হচ্ছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে বাঙালি অধ্যুষ্যিত টাওয়ার হ্যামলেটস এর পপলার ও লাইমহাউজ সংসদীয় আসন- বাঙালি এমপি হওয়ার বিরাট সুযোগ নিয়ে এসেছে। প্রায় আড়াই যুগ সময় থেকে এই আসন লেবার পার্টির ‘সেইফ’ আসন হিসাবে বিবেচিত। বর্তমান লেবার দলীয় সংসদ সদস্য জিম ফিজপ্যাট্রিক আগামী নির্বাচনে আর প্রার্থী না হওয়ার ঘোষনায়- সেখানে লেবার দলীয় নতুন প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া চলছে।
আগামী ২৭ অক্টোবর লেবার দলীয় তিনজন সর্ট লিষ্টেড প্রার্থী থেকে একজনকে পপলার ও লাইম হাউজ আসনের দলীয় মেম্বাররা তাদের পালামেন্টারিয়ান প্রার্থী নির্বাচন করবেন।
ওমেন ওনলি -পলিসির কারণে লেবার দলের প্রার্থীতা বিষয়ে দলের অভ্যন্তরে তুমুল বিতর্ক নিয়ে তিন সর্ট লিষ্টেড প্রার্থীরা হলেন- আফসানা বেগম;লোকাল লেবার পার্টির ভাইস চেয়ার এবং মোমেন্টাম ন্যাশনাল বোর্ড মেম্বার। আমিনা আলী; বো এন্ড ইষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ক্যাবিনেট মেম্বার ও স্থায়ীন লেবার পার্টির কো চেয়ার -হিথ্যার পেটো।
সর্ট লিষ্টেড ব্রিটিশ- বাংলাদেশী বংশদ্ভোদ আফসানা বেগম তিন প্রার্থীর মধ্যে বয়সে সবচেয়ে কম বয়সী হলেও কমিউনিটিতে তার রয়েছে গ্রহন যোগ্যতা। কুইন ম্যারী ইউনির্ভাসিটি থেকে পলিটিকস বিষয়ে ডিগ্রী অর্জনকারী আফসানা কাজ করছেন ব্রিটেনের একটি বিখ্যাত চ্যারিটি সংগঠনের কর্মকর্তা হিসাবে।
কমিউনিটির কাজে তাঁর বিশেষগুণ হচ্ছে- তিনি বাংলাভাষা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বান্ধব হয়েই মাল্টিকালচারাল সোসাইটিতে কাজ করছেন। সেইভ দ্যা কমিউনিটি ল্যাগুয়েজ ক্যাম্পেইন এবং ডাইভার্স কমিউনিটি একটিভিস্ট হিসাবে তাকে অগ্রভাগে স্থানীয় ও টাওয়ার হ্যামলেটস কমিউনিটি দেখে আসছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন- রাজনীতিবিদ হিসাবে আফসানা বেগম এর বড়গুণ হচ্ছে- তিনি কমিউনিটি বান্ধব তারুণ্য। এথনিক কমিউনিটির পালস তার বুঝার অন্যতম কারণ হলো- লোকাল হাউজিং,জব সিকারস ও ভলান্টরি শাখাগুলোতে তার প্রত্যক্ষ কাজের অভিজ্ঞতা। তার জানা ও শেখার উদ্যোম থেকেও তিনি প্রতিদ্বন্ধিদের চেয়ে ব্যতিক্রম বলছেন তার সমর্থকরা।
তথ্যমতে প্রায় তেরশ লেবার দলীয় ভোটার রয়েছেন পপলার ও লাইমহাউজ আসনে। যারা আগামী ২৭ অক্টোবর তিন প্রার্থী থেকে ব্যালটের মাধ্যমে তাদের নিজ দলীয় প্রার্থী নির্বাচন করবেন।
সর্ট লিস্টেডদের মধ্যে আফসানা বেগম অবাঙালি ভোটারদের কাছে ইতিমধ্যে নিজের যোগ্যতম পরিচিতি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন- ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আরেকজন বাংলাদেশী এমপি পাওয়ার দ্বারটি খুব সহজে উন্মোক্ত করার ঐতিহাসিক কাজটি করতে পারেন -পপলার ও লাইমহাউজ এর লেবার দলীয় ব্রিটিশ -বাংলাদেশী ভোটাররা। ইতিমধ্যে অবাঙালিদের সমর্থন তাকে বেশ আশান্বিত করেছে।
ব্রিটেনে বাংলাদেশী কমিউনিটির আলোকিত দিকগুলোর অন্যতম হচ্ছে- আমরা বৃহত্তর স্বার্থে অথবা কমিউনিটির ক্রান্তিকালে ঐক্যবদ্ধ হয়েই বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারি। মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা থেকে শুরু করে বর্ণবাদ, লোকাল কাউন্সিলে সংখ্যাগরিষ্ট নেতৃত্ব সহ সামাজিক ও সাংগঠনিক কাজে এরকম অনেক উজ্জ্বল উদাহরণ রয়েছে।
আগামী ২৭ অক্টোবর রবিবার পপলার ও লাইমহাউজ এর লেবার দলীয় বাঙালি ভোটাররা সকল মতভেদ ভুলে আফসানাকে ভোট দিয়ে পার্লামেন্টে ব্রিটিশ -বাংলাদেশী প্রজন্মদের নেতৃত্বের আলোকিত পথটি আরও প্রসারিত করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করবেন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
আফসানা বেগম তার ক্যাম্পেইনে স্পষ্টত প্রত্যয় দিচ্ছেন- ডাইভার্স কমিউনিটিতে সকলের সমান অধিকার , সেবার মান ও ডিগনিটি নিশ্চিত করতে আরও সোচ্চার হবেন। যেখানে কমিউনিটির মাঙ্গলিক ইস্যু থাকবে, সেখানে তিনি কমিউনিটির উচ্চকণ্ঠ হয়ে -আন্দোলন ও সংগ্রামে পাশে থেকে সমস্যা নিরসন করবেন।
টানা ২২ বছর থেকে পপলার ও লাইমহাউজ সংসদীয় আসনটি লেবার পার্টির দখলে। জিম ফিজপ্যাট্রিক এমপি অবসরে যাবার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাঙালিদের এমপি হওয়ার আশার আলোটি বাস্তবরূপ লাভে বাঙালি লেবার দলীয় ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার রাখবেন বলে আফনানা বেগম এর ক্যাম্পেইন টিমগুলোর কর্মীরাও তুমুল বিশ্বাসে রেখেই- প্রতিদিন ভোটারদের সাথে ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইন করছেন।
বাঙালি অধ্যষ্যিত টাওয়ার হ্যামলেটস বারার বিশেষত বাংলাদেশী কমিউনিটির মানুষের চোখ ও মন পপলার আসনের দিকে। এবং হার না মানা বাঙালি জাত্বি সত্ত্বার দিকটি সামনে নিয়ে ভাবলে- নিকট ভবিষ্যতের নীহারিকা আলোই চোখে ভাসছে।যার নায়ক হতে পারে পারেন- বাংলাদেশী প্রায় ৪০% দলীয় ভোটার।
একটি ভোট বদলে দিতে পারে আলো-অন্ধকারের সংস্কৃতি। একটি ভোট – সুযোগ এনে দিতে পারে মাল্টিকালচারাল কমিউনিটিতে সকলের নায্য অধিকার ও সম্মান প্রতিষ্ঠার ‘নেতৃত্ব‘ ব্রিটিশ বাংলাদেশীর হাতে। মত-বিবেদ , মান-অভিমান ভুলে একটি ভোট- বাঙালির আলোর স্ফোরণ ছড়াতে পারে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। একটি ভোট-বাঙালির আলোছড়ানো দিকগুলো আরও প্রস্ফুটিত এবং আলোর সুভাষ ছড়াতে পারে বহু ভাষা ও জাতির ব্রিটেনে।
চব্বিশ অক্টোবর, দুই হাজার ঊনিশ।
লেখক :আ নো য়া রু ল ই স লা ম অ ভি; কবি,সাংবাদিক, লন্ডন।