দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহতভাবে চলছে। অনেক পরিবর্তন হয়েছে।উন্নয়নের শেষ নেই। পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। সেজন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে
নিয়ে যাওয়ার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।
গত ১৩ অক্টোবর প্রবাসী বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জবাসী আয়োজিত স্থানীয় দেশি সেন্টারেমতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি একথাগুলো বলেন।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান মুক্তা। মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেনবাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমদ, আব্দুল হান্নান চৌধুরী ও মহিউদ্দিন।
নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যা করা হয়।ভাগ্যক্রমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বোন রেহানা বিদেশে অবস্থানকালে বেঁচে যান। সেই৭৫-এর পর থেকে দেশের উন্নয়নের চাকা উল্টো হয়ে যায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশে আসার পরতাঁকে দলের দায়িত্ব দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ক্ষমতায়অধিষ্ঠিত হয়। এরপর চক্রান্তের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত পুনরায় ক্ষমতায় এসে উন্নয়নেরধারাবাহিকতা বন্ধ করে জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির জন্ম দেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নেয়। সে ধারাবাহিকতায় দেশে খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে এবং উদ্বৃত্ত খাদ্য বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন,২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩১ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়ন দেশ গড়ার কাজ চালিয়েযাওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে এখন রোল মডেল হিসাবে পরিচিত।পূর্বের মত এখনও বন্যা হয়, খরা হয়, কিন্তু লোকজন না খেয়ে মরে না।
উন্নয়নের মহাযাত্রার কথা উল্লেখ করে নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি বলেন, দেশে শিল্প-কারখানা,স্বাস্থ্য যোগাযোগ সবক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। কম্যুনিটি ক্লিনিক হয়েছে। সাধারণ মানুষ সহজে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ গ্রহণ করছে।এসব ক্লিনিকে প্রতিদিন একশ থেকে দেড়শ রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়ে থাকে জানিয়ে তিনিবলেন, দেশে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। মাথাপিছু আয় ৫০ ডলার থেকে ২ হাজার ডলারে উন্নীত হয়েছে।
দুর্নীতির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতির মধ্যে আমরা আকণ্ঠ নিমজ্জিত। দলীয় ছত্রছায়ায় এসব দুর্নীতি সব ক্ষেত্রে ভরে গেছে। সরকার দুর্নীতি নির্মূলে জিরো টলারেন্সে দাঁড়িয়ে এসব প্রতিরোধে ও উচ্ছেদে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইতিমধ্যে সরকার অনেক রাঘব-বোয়ালকে ধরেছে।তিনি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
শিক্ষার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি বলেন, গতানুগতিক শিক্ষা নয়, আধুনিক শিক্ষায় মানসম্মতভাবে বিশ্বমানের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। ভালো শিক্ষা, আদর্শগত শিক্ষা ও ভালো মানুষের দরকার। ভালো মানুষ না হলে ভালো কাজ করা যায় না। সে জন্য ভালো শিক্ষার প্রয়োজন।বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে নাহিদ এমপি বলেন, বাংলাদেশ শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি নিজের নির্বাচনী এলাকা বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জের উন্নয়নের প্রসঙ্গে বলেন, পূর্বে এ এলাকা আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেজন্য শিক্ষাক্ষেত্রে অনেকটা পশ্চাদপদ ছিল। তবে লেখাপড়া যে ছিল না, তা নয়। ধনী পরিবারের মধ্যে তা সীমাবদ্ধ ছিল। তিনি আরও বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে, গত দশ বছরে, এলাকায় শিক্ষার মানচিত্র পাল্টে যায়। স্কুল-কলেজ সরকারিকরণ, উন্নত ডিগ্রির জন্য শহরে যেতে হবে না।স্কুল-কলেজের ভবন নির্মাণ, নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা, পুরাতন স্কুল মেরামত, দালানকোটা নতুনভাবে হয়েছে। অবহেলিত এলাকায় স্কুল হয়েছে। বছরে প্রথম সপ্তাহে শিশুদের হাতে বই পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাস্তা-ঘাট-সেতু হয়েছে। ফেরির বদলে সেতু হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এলাকায় উন্নয়ন হচ্ছে। জায়গাজমির দাম বেড়েছে। রাস্তার দৈন্য দশা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাস্তায় ভারী যানবাহন চলাচল একমাত্র কারণ। বিদ্যুতের কথা উল্লেখ করে নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি বলেন, পূর্বে বলেছিলাম ২০১৮ সালের পূর্বে বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জের প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। এলাকার মানুষ সে সুফল ভোগ করছে।
তিনি ত্যাগ ও ধৈর্য্য সহকারে তার কথাগুলো শোনার জন্য সবাইকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। মতবিনিময় সভায় কামাল আহমদ, বিয়ানীবাজার সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আইরিন পারভীন, ফারুকুল হক, আব্দুল কুদ্দুছ টিটো, হাজী আবদুর রহমান, আব্দুল হাছিব, কমরউদ্দিন, আল আমান মসজিদের সভাপতি কবির আহমদ চৌধুরী, হেলাল উদ্দিন, ছফর উদ্দিন লোদী, খসরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।
লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করে ওয়াহিদ পারভেজ। এর আগে প্রধান অতিথিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান মতবিনিময় সভার আয়োজকবৃন্দ, জ্যামাইকা ফ্রেন্ডস সোসাইটি, গোলাব শাহ সমাজকল্যাণ সংস্থা, শ্রীধরা জনকল্যাণ সমিতি, আছিরগঞ্জ সমিতি। সভার প্রারম্ভে পবিত্র কোরান তেলাওয়াত করেন আব্দুল মোত্তালিব। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী আলিম উদ্দিন। পরে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভা শেষে সবাইকে নৈশভোজে আপ্যায়িত করা হয়।