সরকারের চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্নীতি। তাই এখনই দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। শেখ হাসিনা নিজের ঘর থেকে দুর্নীতি বন্ধের অভিযান শুরু করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্নীতি যেই করুক, তিনি যে দলেরই হোক না কেন-কোন অবস্থাতেই তাকে ছাড় দেয়া হবে না।
বুধবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সরকারি ডিগ্রী কলেজ মাঠে নাগরিক কমিটি আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, সরকার সমাজ থেকে দুর্নীতি নিমূলে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি তাঁর নিজের ‘ভাটির শার্দুল’ উপাধি পাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, তাড়াইলে আমার বহুকালের অনেক স্মৃতি রয়েছে। ছাত্রজীবনে সর্বপ্রথম তাড়াইলে আমি জনসভা করেছি। সেটা তাড়াইলের পুরুড়া হাইস্কুলে। ১৯৬৯ সালে তখন ছাত্র আন্দোলন গণ আন্দোলনে রূপ নিল। পুরুড়া হাইস্কুলের আব্দুর রাশিদ আমার কাছে এসে বললো, হামিদ ভাই, পুরুড়া হাইস্কুলে আমরা একটি জনসভা করতে চাই। তো আমরা তো ছাত্রসভা করেছি, জনসভা জীবনে করিনি। তখন রাশিদ বললো, ঢাকা থেকে বড় নেতা আনতে হবে। ’৬৯ এর গণআন্দোলনের সময় ঢাকা থেকে কোন নেতা যে এখানে এসে মিটিং করবে, বক্তৃতা দেয়ার জন্য আসবে, সে পরিস্থিতিতে সেটা সম্ভব ছিল না।
তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মহিউদ্দিন সাহেব। রাশিদকে নিয়ে গেলাম। তিনি বললেন, তুমি বড় নেতা খুঁজতেছো, আমাদের হামিদ কি কম বড় নেতা নাকি? তাকে নিয়ে যাও। একথা বলার পর রাশিদ বললো, টাইটেল কি দিবো? তিনি বললেন, নাম লেখবা, টাইটেল লাগবে কেন? আর যদি টাইটেল দিতে চাও লেখবা, ‘ভবিষ্যৎ মন্ত্রী’। আমি বললাম ‘ভবিষ্যৎ মন্ত্রী’ এটা কেন লেখবা, এটা লেখা যাবে না।
তখন মহিউদ্দিন সাহেব বললেন, ব্যাটা, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের বঙ্গশার্দুল। তিনি তখন বঙ্গবন্ধু টাইটেল পাননি, তাঁকে বঙ্গশার্দুল ডাকা হতো। তোমাদের তাড়াইলও ভাটি, হামিদের বাড়িও ভাটি। সে হলো ‘ভাটির শার্দুল’।প্রেসিডেন্ট স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেই পুরুড়া হাইস্কুল মাঠে তখন লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছিল। সেখানে আমি একাই সোয়া দুই ঘন্টা বক্তৃতা দিয়েছিলাম।
কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের এমপি মুজিবুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে সমাবেশে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের এমপি আফজাল হোসেন, রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ আফজাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক, তাড়াইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আজিজুল হক মোতাহার, তাড়াইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া শাহীন, শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, এডভোকেট হামিদুল আলম চৌধুরী নিউটন সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে তাড়াইল উপজেলা সদরে স্বাধীনতা ৭১ ভাস্কর্য্য উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি।