লাখো মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর চোখের জলে বিদায় নিলেন সিলেটের প্রখ্যাত বুজুর্গ ও বিশিষ্ট আলিমে দ্বীন, জালালপুর জালালিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল হযরত আল্লামা শুয়াইবুর রহমান বালাউটী। ৪ অক্টোবর,শুক্রবার বিকাল ৩টায় সিলেটের জকিগঞ্জে রতনগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বস্থ বিশাল মাঠে (হেলি ফিল্ডে) তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজার নামাযে ইমামতি করেন মরহুমের বড় ছাহেবজাদা মুফতী মাওলানা উবায়দুর রহমান। নামায শেষে মোনাজাত করেন হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী। জানাজাা শেষে তাঁকে নিজ বাড়ি সংলগ্ন স্বপ্রতিষ্ঠিত বালাউট দারুল কুরআন হাফিযিয়া মাদরাসা প্রাঙ্গনে দাফন করা হয়।
জানাযাপূর্ব আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত শায়খুল হাদীস আল্লামা হবিবুর রহমান, বাদে দেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ হযরত আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জকিগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্জ মাসুক উদ্দিন আহমদ, হযরত শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কমরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, ভারতের উজানডিহির হযরত মাওলানা সায়্যদ খালেদ আহমদ আল মাদানী, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ছরওয়ারে জাহান, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা এ.কে.এম মনোওর আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিন্সিপাল মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ, জকিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ তাপাদার, উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর মো. আবু নাসের, সৎপুর কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিছ মাওলানা ছালেহ আহমদ বেতকোণী, বুরাইয়া কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ফারুকী, তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি আক্তার হোসাইন জাহেদ, সহ সভাপতি মুহিবুর রহমান, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা ফখরুল ইসলাম, জকিগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুস সবুর, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাকিম আলী হায়দার, কাজলসার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ রশিদ বাহাদুর, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ চেরাগ আলী মেম্বার প্রমুখ।
বক্তারা মরহুমের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, আল্লামা শুয়াইবুর রহমান বালাউটী (র.) একজন মকবুল ওলীআল্লাহ ছিলেন। নিরবে-নিভৃতে তিনি দ্বীনের বহুমুখী সেবা করেছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত অমায়িক ও পরহেজগার। আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) এর একজন খলীফা হিসেবে এ সিলসিলার দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন । বক্তারা মরহুমের আত্মার প্রশান্তি কামনা করেন এবং তাঁর সেবার এই ধারা অব্যাহত থাকার প্রত্যাশা করেন।
ভাদেশ্বর আলিয়া মাদরাসার আরবী প্রভাষক মাওলানা ইউনুছ আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ সভায় উপস্থিত বিশিষ্ট আলিমে দ্বীন মাওলানা আব্দুশ শাকুর চৌধুরী ফুলতলী, মাওলানা শিহাব উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রহীম, জালালপুর জালালিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা জ.উ.ম আব্দুল মুনঈম, মাওলানা ফজলুর রহমান চৌধুরী শিঙ্গাইরকুড়ি, আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাহমুদ হাসান চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবু ছালেহ মুহাম্মদ কুতবুল আলম, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা নজমুল হুদা খান, কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সিলেট জেলা ব্যবসায়ী ঐক্যকল্যাণ পরিষদের সভাপতি শেখ মখন মিয়া, রাখালগঞ্জ সিনিয়র মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা হবিবুর রহমান, জকিগঞ্জ সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নূরুল ইসলাম, ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা এখলাসুর রহমান, ফেঞ্চুগঞ্জ মোহাম্মদিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ফরিদ আহমদ।
এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ সেলিম, ভারতের রাতাবাড়ি নিজামিয়া মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আলতাফুর রহমান, লুৎফুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল মাজেদ আহমদ চঞ্চল, শাহজালাল (র.) এর দরগাহ’র মোতাওয়াল্লীর প্রতিনিধি তাকছির আহমদ, চান্দগ্রাম ফাযিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, হবিবপুর ফাযিল সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল হাকীম, ইছামতি কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা শিহাব উদ্দিন চৌধুরী, স্কুল অব এক্সেলেন্স-এর প্রিন্সিপাল মাওলানা গুফরান আহমদ চৌধুরী, শাহচান্দ শাহকালু ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল মুক্তাদির খান, তালামীযে ইসলামিয়ার সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আলমগীর হোসেন, হাফিয নজীর আহমদ হেলাল, মাওলানা বেলাল আহমদ, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূনুর রহমান লেখন, সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোস্তফা হাসান চৌধুরী গিলমান, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোজতবা হাসান চৌধুরী নোমান, অফিস সম্পাদক মুহাম্মদ তৌরিছ আলী, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ফরহাদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ওয়ারিছ খান, বিশ্বনাথের অলংকারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লিলু মিয়া, জকিগঞ্জের ৩নং কাজলসার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জুলকারনাইন লস্কর, মানিকপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহতাব আহমদ চৌধুরী, কসকনকপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক রিয়াজ প্রমুখ। এছাড়া জানাযায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ছাত্র-শিক্ষকসহ লাখো মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন।
শুয়াইবুর রহমান বালাউটি‘র সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
হযরত আল্লামা শুয়াইবুর রহমান বালাউটি ১৯৪৩ ইংরেজি সালের ১৫ই মে সিলেট জেলাধীন জকিগঞ্জ উপজেলাস্থ ৩নং কাজলসার ইউনিয়নের বালাউট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম মো. রছমান আলী, মাতা-মোছাম্মাত জয়নব বিবি। তিনি ৩ ভাই ৩ বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তিনি স্বীয় পিতামাতার কাছে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ করে ১৯৪৭ সালে সড়কের বাজার আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন।
১৯৪৯ সালে বাড়ির নিকটস্থ হাড়িকান্দি মাদরাসায় ভর্তি হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। পরে ইছামতি দারুল উলূম কামিল (এম.এ) মাদরাসা থেকে ১৯৫৬ সালে দাখিল এবং ১৯৫৮ সালে আলিম পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। উক্ত মাদরাসা থেকে ১৯৬০ সালে ফাজিল পাশ করে ভর্তি হন সিলেট সরকারী আলিয়া মাদরাসায় এবং ১৯৬২ সালে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে কামিল উত্তীর্ণ হন।
১৯৬০ইং সালে বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল (এম.এ.) মাদরাসায় খন্ডকালীন সহকারী শিক্ষক ছিলেন এবং ১৯৬২ইং থেকে ১৯৭৫ ইং পর্যন্ত উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত আটগ্রাম আমজদিয়া মাদরাসা’র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সাল থেকে জালালপুর জালালিয়া কামিল মাদরাসায় অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করে ২০০৮ সালে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৯০ সালে সিলেট জেলা শিক্ষা সপ্তাহে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং ১৯৯৩ সালে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমী (নায়েম) এর প্রশিক্ষণে ‘শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ’ সম্মানে ভূষিত হন।
পারিবারিক জীবনে ১১ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক তিনি। পুত্র সন্তানদের ৩ জন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। অন্যান্যদের মধ্যে ১জন ডাক্তার, ১জন হাফিযে কুরআন এবং অন্যরা শিক্ষার্থী।
অধ্যক্ষ আল্লামা মো. শুয়াইবুর রহমান বালাউটি উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুজুর্গ, আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর কাছ থেকে ১৪৮৭ হিজরী সনে ইলমে কেরাত এবং ১৯৭১ইং সালে তরিকত বা আধ্যাত্মিকতার সনদ লাভ করেন। তিনি একজন ইসলামি দার্শনিক হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। তাঁর প্রতিষ্ঠিত অনেক খানকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ( সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)।